`৭ মিনিটে খেল খতম!` নিজে দাঁড়িয়ে থেকে স্বামীকে খুন করান স্ত্রী
`আমি আর পারছি না। আমাকে বাঁচাও। আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হলে এক্ষুণি ব্যবস্থা কর।` ফোনে প্রেমিকা গৌরী হাজরার কাতর আর্তি শুনেই রাতেই `ব্যবস্থা করার` আশ্বাস দেয় প্রেমিক সুরজিত।
নিজস্ব প্রতিবেদন : প্রেমিকা গৌরী হাজরাকে ফোন উপহার দিয়েছিল হাঁটুর বয়সী প্রেমিক সুরজিত। সেই ফোনেই শুক্রবার সারাদিন ধরে প্রেমিকের সঙ্গে 'শলাপরামর্শ' করে স্বামীকে খুনের ছক কষেন স্ত্রী গৌরী হাজরা। তারপর পরিকল্পনা মতোই শুক্রবার রাতে গৌরীদেবীর স্বামী সুবোধ হাজরাকে খুন করে প্রেমিক সুরজিত। ৭ মিনিটে 'খেল খতম'! নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের চোখের সামনে স্বামীকে খুন হতে দেখেন গৌরীদেবী।
হিন্দমোটরের এই খুনের ঘটনায় মনুয়াকাণ্ডের ছায়া স্পষ্ট। বারাসতের হৃদয়পুরের অনুপম রায়কে খুনে 'নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনে'র ভূমিকা পালন করেছিল স্ত্রী মনুয়া। প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে খুনের ছক কষা থেকে শুরু করে প্রমাণ লোপাট করা সবটাই হয়েছিল মনুয়ার মস্তিষ্কপ্রসূত পরিকল্পনা অনুযায়ী। হিন্দমোটরে সুবোধ হাজরা খুনেও সেই একই ছায়া। প্রেমিক সুরজিতকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী সুবোধ হাজরাকে খুনের ছক কষা, খুন করা, তারপর খুনের প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা, সবটাই হয়েছে স্ত্রী গৌরী হাজরার প্ল্যানিং অনুযায়ী। পুলিসি জেরায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আরও পড়ুন, 'খেতে দেব', ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে
স্বামী সুবোধ হাজরার সঙ্গে ২৫ বছরের দাম্পত্যজীবন গৌরী হাজরার। কিন্তু গত ৭-৮ মাস ধরে হাঁটুর বয়সী প্রতিবেশী যুবক, বছর ২৪-এর সুরজিতের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন গৌরী। আর তাই নিয়েই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিত্য অশান্তি লেগেছিল। অনেকদিন ধরেই ত্রিমুখী সম্পর্কে জটিলতা বাড়ছিল। এরপরই শুক্রবার সুরজিতের সঙ্গে ফোনে স্বামী সুবোধকে খুনের চক্রান্ত করেন গৌরী হাজরা। ফোনের সূত্র ধরে পুলিস জানতে পেরেছে, শুক্রবার সারাদিন দুজনে ফোনে কথা বলেন। ফোনে প্রেমিক সুরজিতকে গৌরীদেবী বলেন, "আমি আর পারছি না। আমাকে বাঁচাও। আমার স্বামী আমার উপর শারীরিক, মানসিক অত্যাচার করছে। আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হলে এক্ষুণি ব্যবস্থা কর।"
ফোনে গৌরীদেবীর মুখে এসব কথা শুনেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে সুরজিত। ফোনেই সে গৌরীদেবীকে আশ্বাস দেয়, "আজ রাতেই ব্যবস্থা করছি।" পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর ফ্ল্যাটের পিছনের দিকের দরজা খুলে রেখে দেন গৌরীদেবী। সেই দরজা দিয়েই ফ্ল্যাটের ভিতর ঢোকে সুরজিত। সেইসময় ঘরের সোফায় বারমুডা পরে খালি গায়ে বসেছিলেন সুবোধবাবু। পিছন থেকে এসে সুবোধবাবুর গলা পেঁচিয়ে ধরে সুরজিত। রেস্তরাঁয় গার্ডের কাজ করার সুবাদে নিজের আত্মরক্ষার জন্য একটি চপার ছিল সুরজিতের কাছে। সেই চপার দিয়েই সুবোধবাবুর গলায় একের পর এক কোপ মারে সুরজিত।
আরও পড়ুন, ৮ বছর প্রেম-রেজিস্ট্রির পর বিয়ের কথা বলতেই প্রেমিকাকে খুনের চেষ্টা প্রেমিকের
রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মধ্যে লুটিয়ে পড়েন সুবোধ হাজরা। সামনে দাঁড়িয়ে থেকে গোটা ঘটনাক্রম দেখেন গৌরীদেবী। সুবোধবাবুর চিত্কার যাতে বাইরে যেতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখেন তিনি। স্বামীর মৃত্যু নিশ্চিত হতেই এবার শুরু হয় প্রমাণ লোপাটের পালা। ফোনের মধ্যেই রেকর্ড রয়েছে তাঁদের কথোপকথন। তাই ফোনটি যাতে কারোর হাতে না পরে, সেজন্য সুরজিতের উপহার দেওয়া ফোনটি তাকেই নিয়ে যেতে বলেন গৌরীদেবী। প্রেমিকা গৌরীদেবীর কথামতো ফোন ও রক্তমাখা জামা নিয়ে ফের রেস্তরাঁয় ফেরত আসেন সুরজিত।
রেস্তরাঁয় ফিরে স্নান করে সেখানেই ঘুমিয়ে পরে সুরজিত। শনিবার সকালে রেস্তরাঁ থেকেই সুরজিতকে গ্রেফতার করে উত্তরপাড়া থানার পুলিস। জেরায় খুনের কথা কবুল করে নেয় সুরজিত ওরফে বিজয় সিং। সুরজিতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন গৌরী হাজরাও। অভিযুক্ত দুজনকেই ৭ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে শ্রীরামপুর আদালত।