নিজস্ব প্রতিবেদন: সুখের দিন গিয়েছে আগেই। কিন্তু অসুখ যে এত গভীর অনুমান করা যায়নি এতদিন। দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন থাকায় যে রোগ বামেদের গ্রাস করেছিল, তা যে এখনো সারেনি প্রমাণ করলেন সিপিআইএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী। বিরোধী নন, এবার তাঁর নিশানায় বামপন্থীরাই। গত শুক্রবার ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রকাশ্যে সমালোচনা করলে রক্ষা পাবেন না কেউ। এমনকী দলীয় কর্মী হলেও তাঁকে ব্লক করবেন তিনি। ডিলিট করবেন তাঁদের কমেন্ট। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 



শ্যামলবাবু লিখেছেন, এই ওয়ালটা আমার। আমি ফেসবুকে এসেছি সিপিআইএমের প্রচার করতে। এর পরই একরাশ ক্ষোভ ঝরে পড়েছে শ্যামলবাবুর কথায়। লিখেছেন, কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, আমাদের কিছু সমর্থক হয় হতাশাগ্রস্ত, অথবা ছদ্মবেশী। তারা একক বা সংগঠিত আত্মসমালোচনার আড়ালে পার্টির সমালোচনা করে যাচ্ছেন। এরকম বন্ধু থাকলে শত্রুর কী দরকার? এই ধরনের বাম সমর্থকরা তৃণমূল, আরএসএস ও বিজেপির কাজ আরও সহজ করে দিচ্ছেন।



সমালোচকদের তেড়ে আক্রমণ করে শ্যামলবাবু এরপর লিখেছেন, আমাদের কমরেডরা নিরলসভাবে নিজের কাজের অবসরে কাজ করে যাচ্চেন। সেই প্রচেষ্টাতে অন্তর্ঘাত করছে কিছু লোক। এই ধরণের সমালোচকদের শ্যামলবাবুর পরামর্শ, আলোচনা করার ইচ্ছা থাকে পার্টির রাজ্য অফিস বা সিআইটিইউর অফিসে আপনাকে চিঠি লিখুন। সরাসরি মুখোমুখি বসে কথা বলব। 


এর পর ক্ষোভে নিজের দলের সমর্থকদেরই হুঁশিয়ারি দিয়ে বসেন শ্যামলবাবু। বলেন, তা না করে কোনও সমর্থক আমার ওয়ালে উলটো পালটা মন্তব্য করলে ডিলিট করতে পারি, ব্লকও করতে পারি। 


শ্যামলবাবুর এহেন পোস্টে হতবাক বাম সমর্থকরাই। বাম সমর্থকদের একাংশ বলছেন, অবাধ বাকস্বাধীনতার পক্ষে গোটা বিশ্বে সোচ্চার হন যে বামপন্থীরা তাদেরই বঙ্গবাহিনীর এক নেতার মুখে এ কী বাণী? রাজনৈতিক সমালোচনাকে যাঁরা অন্য মাত্রা দিয়েছেন সেই দলের নেতা কেন হঠাত্ অসহিষ্ণু কেন? 


দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে বাম সমর্থকদের সরাসরি সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন নেতারা। ক্ষমতা যাওয়ার পর বাম নেতৃত্বের অদক্ষতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি এক ঘটনায় নতুন করে সমালোচনায় মুখর হন সিপিআইএম সমর্থকরা। শর্ত মানলে মমতার সঙ্গে বন্ধুত্ব হতেই পারে, জি ২৪ ঘণ্টাকে একথা জানান সিপিআইএম নেতা গৌতম দেব। তার পরই ফেসবুকে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় শ্যামল চক্রবর্তী-সহ একাধিক সিপিআইএম নেতাকে।  


কারাখানা তৈরি হয়নি, গাড়ি উত্পাদন সংস্থা উরালের ১০০ একর জমি ফেরত নিল রাজ্য সরকার


রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বামেদের এই রোগ নতুন নয়। ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার জেরে বাম নেতৃত্বের মাথায় জাঁকিয়ে বসেছে দম্ভ। বিশেষ করে ৯-এর দশকের শুরু থেকে এই সংক্রমণ তীব্র হয়। জেলা থেকে বার বার ভুয়ো রিপোর্ট এলেও তা খতিয়ে দেখার দরকার মনে করেনি আলিমুদ্দিন। যার জেরে ২০০৬ সালে কৃষকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাদের। যে কৃষকদের জন্য জান কবুল করে বামেরা তারাই বেঁকে বসে জমি দিতে। 


ক্ষমতা যাওয়ার পর বাম নেতৃত্বের মুখে বারবার আত্মসমালোচনা কথা শোনা গেলেও সমালোচনা যে কতটা গৃহীত হয়েছে তা শ্যামল চক্রবর্তীর মতো নেতার পোস্টেই স্পষ্ট। পার্টির নিয়মানুবর্তিতার শৃঙ্খল ভেঙে ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে তাই নিজেদের সমর্থকরাই চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে তাঁর।