সলমন এবং আমির খানকে সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

Updated By: Jul 8, 2016, 03:12 PM IST
সলমন এবং আমির খানকে সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

স্বরূপ দত্ত

সদ্য মুক্তি পেয়েছে সলমন খানের সুলতান৷ খুব শিগগিরি মুক্তি পাবে আর এক খান আমির খানের দঙ্গল৷ দুই খান, দুই ছবি, এবং দুটোই কিনা কুস্তিকে কেন্দ্র করে! ভাবতেই অবাক লাগে আমাদের দেশে আবার এই খোলাটার এত কদর আছে নাকি! আজ সুলতান মুক্তির পরে এবং দঙ্গল মুক্তির আগে আমির খান এবং সলমন খানকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটা কথা বলার৷

গত ১০ বছরে বলিউডে বেশ কিছু ছবিতে উঠে এসেছে কুস্তি৷ ডব্লু ডব্লু ই তারকা খালিকেও দেখা গিয়েছে পর্দায় রাজপাল যাদবের সঙ্গে কুস্তি করতে৷ পরিচালকরা যে যখনই পেরেছেন, তখনই তাঁর ছবির নায়ককে ল্যাঙ্গোট পরিয়ে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন! কুস্তি যে বড় পবিত্র খেলা৷ তাকে যে যার মতো করে পবিত্রতার নাম-গন্ধ না মেনে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে৷

আজ কুস্তির নাম করে সলমন খানের সুলতান কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করবে৷ দেশে জয়জয়কার পড়ে যাবে 'ভাইজানের'৷ দঙ্গল মুক্তি পাওয়ার পর ফের আরেকবার আলোচনার বিষয়বস্তু হবেন আমির! সবাই বলবেন, সলমন, আমিররা আছেন বলেই হয়তো দেশের খেলাটা বেঁচে আছে! আরও কত কত কথা হবে কুস্তি নিয়ে! কিন্তু রাতারাতি তো বটেই, পরের ১০ বছরেও কোনও বাবা-মা তাঁর ছেলে-মেয়েকে কুস্তি শিখতে পাঠাবেন না৷ তাঁরা শুধু সুপার সানডে তে মহা মুভি হিসেবে সুলতান কিংবা দঙ্গল দেখবেন, ড্রইংরুমে দল বেঁধে বসে৷ কুস্তি যে কাদায় পড়ে রয়েছে, সেই কাদাতেই পড়ে থাকবে৷ তবু আজ আলোচনাটা করতে চাই ওই কাদার সেরা পদ্মকে নিয়ে৷

সুশীল কুমার৷ এ দেশেরে কুস্তির প্রথম নাম৷ গর্বের নাম৷ শ্রদ্ধায় মাথা নোয়ানোর নাম৷ শুধু কুস্তি কেন? এ দেশের খেলাধুলোর ইতিহাসের সবথেকে সফল খেলোয়াড় যে তিনিই৷ কারণ, খুবই পরিষ্কার৷ লোকটার বাড়িতে দু-দুটো অলিম্পিকের পদক রয়েছে! এই কুস্তিতেই! পরপর দুটো অলিম্পিকে গিয়েছেন, আর পদক জিতে বাড়ি ফিরে এসেছেন! এ দেশে ব্যক্তিগত ইভেন্টে দুটো অলিম্পিক পদক তিনি ছাড়া আর কারও বাড়িতে নেই৷ দেশের সবথেকে সফল ক্রীড়াবিদকে কেউ মনে রাখলো না, এটা তো অনেক সোজা কথা হল৷ দেশের সবথেকে সফল খেলোয়াড়কে এবার অলিম্পিকেই দেখা যাবে না!

আসলে সুশীল কুমার এর আগের দুটো অলিম্পিকে পদক জিতেছিলেন ৬৬ কেজি বিভাগে৷ এবার আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ৭৪ কেজিতে খেলার কথা বলে৷ সেই বিভাগে দেশ থেকে সুযোগ পেতে পারেন মাত্র একজন৷ আর এর যোগ্যতা অর্জনের প্রতিযোগিতা ছিল ২০১৫-তে লাসভেগাসে৷ ওই প্রতিযোগিতায় চোটের জন্য নামতে পারেননি সুশীল কুমার৷ সেই সুযোগে লাসভেগাস থেকে পজক জিতে রিও অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করে নেন নরসিং যাদব৷ তারপর থেকে সুশীলকে কী করতে হয়েছে! একবার কুস্তি ফেডারেশনের কাছে দরবার৷ একবার অলিম্পিক কমিটির কাছে দরবার৷ যার কাছে পেরেছেন, তার কাছে গিয়ে নতজানু হয়ে সুশীল বলেছেন, 'আমাকে একটা সুযোগ দিন৷ নরসিং আর আমার মধ্যে থেকে সেরাকে বাছুন৷ আমাকে রিওতে এমনি এমনি পাঠাতে হবে না৷ আমি ফর্মে আছি৷ আত্মবিশ্বাসী৷ দেশের হয়ে আরেকটা অলিম্পিক পদক জিততে চাই৷'

দেশের সফলতম ক্রীড়াবিদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি! উল্টে দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দো সোনোয়াল বলে দিয়েছিলেন, 'তিনি এই বিতর্কের মধ্যে নেই!' বুঝুন কাণ্ড৷ তাহলে ক্রীড়ামন্ত্রীর কাজটা কী! দেশের সর্বকালের সফলতম ক্রীড়াবিদকে সবার দোড়গোড়ায় ঘুরতে হল অথচ, কেউ বিতর্কে ঢুকলো না৷ সবাই পিঠ বাঁচালো! এটা কতটা লজ্জার? আমির খান, সলমন খানরা কুস্তিগীরের ভূমিকায় অভিনয় করলে, তাঁদের দেখে সবাই হাততালি দেবে৷ তাঁদের ফিল্ম বক্স অফিসে ধুম মাচিয়ে দেবে৷ অথচ, খেলাটার কোনও উন্নতি হবে না৷ সুশীল কুমারদের কেউ মনে রাখবে না৷ এটা ভাবতেও লজ্জা লাগছে, সুলতান দেখে কেউ সুশীল কুমারকে চিনবে বলে৷ দঙ্গল দেখে কেউ মহাবীর সিং ফোগটের কথা জানবে, গীতা ফোগটের কথা জানবে৷ কিন্তু সুশীল কুমারের হয়ে কেউ গলা ফাটাবে না! যেমনটা, আজও কেউ ফাটালো না৷

সৌরভ থেকে সেহবাগ, ক্রিকেটাররা দল থেকে বাদ পড়লে, গোটা দেশ গর্জে ওঠে৷ অথচ, সুশীল কুমারদের হয়ে রাস্তা-ঘাটে নামার জন্য সুশীল সমাজের কেউ নেই৷ দেশের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদকেও হতে হবে বঞ্চনার স্বীকার! এ কোন দেশে বাস করছি আমরা! অপদার্থ মানসিকতাকে আরও মূর্খের পৃথিবীর দিকে নিয়ে যাবে ফিল্মস্টারদের এই খেলাগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া৷ এঁরা এসে এই খেলাগুলোর কোনও উন্নতি হয় না৷ উল্টে হকি বলতে আমরা চক দে ইন্ডিয়া বোঝা শিখে গিয়েছি! মানে, হকি মানে কবীর খান অথবা শাহরুখ খান! কাল কুস্তি বলতে লোকে বুঝবে, সলমন অথবা আমির খান! আর সুশীল কুমার বাড়িতে বসে দেখবেন!

আমির এবং সলমন খান, দুজনকেই বলা৷ আপনারা তো দেশের সবথেকে বড় স্টার৷ তাহলে আপনাদের কেন নিজেদের আরও উজ্জ্বল দেখাতে খেলার মাঠে নামতে হচ্ছে? আর যদি হয়ও, তাহলে সেই খেলায় যে এতবড় অবিচারটা হয়ে গেল, সেটা নিয়ে একটা কথাও তো বলতে শুনলাম না! মনে রাখবেন কুস্তি, বীরদের এবং পবিত্র খেলা৷ আপনারা ওই প্রেমেই ঠিক আছেন৷ খেলার জার্সি গায়ে চাপাবেন না প্লিজ৷ তাতে, কুস্তি বলতে আপনাদেরকেই বোঝাবে আমাদের 'সুশীল সমাজ'৷ দোষ শুধু আপনাদের নয়৷ আমাদের সুশীল সমাজের৷ আপনারা শুধু এই মিথ্যেতে নিজেদের গা, না ভাসালেও পারতেন৷ আর যদি 'ল্যাঙ্গোট' পরে পবিত্র লড়াইতে নেমেই পড়েছেন, তাহলে বীরের মতো সুশীলের পাশে দাঁড়ান৷ মাথায় রাখবেন, আপনাদের আগে আমরা অনেক তারকাকে পর্দায় দেখেছি৷ সবাইকে ছাপিয়ে আপনারাই সেরা এই তকমা পাননি৷ মনে হয় না কোনওদিনও পাবেন বলে৷ সুশীল কুমার কিন্তু সর্বকালের সেরা৷ শুধু কুস্তিতে নয়, এ দেশের সব খেলার মধ্যে ১০০ বছরে এমন পারফরম্যান্স আর কারও নেই৷ না হয় ক্যামেরার সামনে 'মিছিমিছি' কুস্তিই লড়লেন৷ তা বলে পবিত্র খেলাটার সেরা সন্তানের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল৷

.