চলে গেলেন অভিনেতা ঋতুপর্ণ, রেখে গেলেন কিছু মাইলফলক

মাঝেমধ্যেই বোঝার সুবিধার জন্য  বিভিন্ন চরিত্র অভিনয় করে দেখিয়ে দিতেন কলাকুশলীদের। তারপর একসময় নিজের গায়েই চাপিয়ে নিলেন অভিনেতার পোশাক। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন অভিনেতা ঋতুপর্ণ ঘোষ। ঘনিষ্ঠরা বলেন নিছক চরিত্র-অভিনয় নয়, সত্ত্বার গভীর থেকে উত্‍সারিত বহুমাত্রিক ভাবনাই অভিনয়ে মেলে ধরতে চেয়েছেন অভিনেতা ঋতুপর্ণ ঘোষ। এমন অনেক কথাই আছে যা বলা হয়ে ওঠে না। ক্রমশ তীব্র হয় আত্মপ্রকাশের যন্ত্রনা। সেই তাগিদ থেকেই হয়তো পরিচালনার সঙ্গে অভিনয়কেও বেছে নিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ।

Updated By: May 31, 2013, 10:17 AM IST

মাঝেমধ্যেই বোঝার সুবিধার জন্য  বিভিন্ন চরিত্র অভিনয় করে দেখিয়ে দিতেন কলাকুশলীদের। তারপর একসময় নিজের গায়েই চাপিয়ে নিলেন অভিনেতার পোশাক। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন অভিনেতা ঋতুপর্ণ ঘোষ। ঘনিষ্ঠরা বলেন নিছক চরিত্র-অভিনয় নয়, সত্ত্বার গভীর থেকে উত্‍সারিত বহুমাত্রিক ভাবনাই অভিনয়ে মেলে ধরতে চেয়েছেন অভিনেতা ঋতুপর্ণ ঘোষ। এমন অনেক কথাই আছে যা বলা হয়ে ওঠে না। ক্রমশ তীব্র হয় আত্মপ্রকাশের যন্ত্রনা। সেই তাগিদ থেকেই হয়তো পরিচালনার সঙ্গে অভিনয়কেও বেছে নিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ।
তাও বছর দশেক আগের কথা। দুহাজার তিন সাল। অভিনেতা হিসাবে প্রথম আত্মপ্রকাশ উড়িয়া ছবি উড়িয়া কোথা দেখিলি মা কু-তে। তারপর বিরতি। তবে থেমে থাকেনি পরিচালনার কাজ।  আর সেখানেই বারবার উঠে এসেছে পরিচালক ঋতুপর্ণের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অভিনয় সত্বা। উঠে এসেছে পুরুষের আবরণে বদ্ধ এক নারীর কথা। উঠে এসেছে পুরুষ খোলসে এক নারী মনের পছন্দ,অপছন্দ, প্রেম, বিরহ,যন্ত্রনা। রক্ষণশীল সমাজের সংস্কার কে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সিনেমার পর্দায় অভিনেতা হিসাবে দেখা গেল ঋতুপর্ণ ঘোষকে।
দুহাজার দশ সালে আর একটি প্রেমের গল্পে চপল ভাদুড়ির ভূমিকায় সেলুলয়েডে আত্মপ্রকাশ হল এক স্পর্ধিত অভিনেতার। পুরুষের শরীরে যে মন নারীর। তাকেই সম্মানের সঙ্গে স্বীকৃতি দিলেন অভিনেতা ঋতুপর্ণ ঘোষ। সমাজে সমকামী, উভকামী, রূপন্তরকামী মানুষদের অনুভূতি ভাষা খুঁজে পেল তাঁর অভিনয়ে।
পরের আত্মপ্রকাশ দুহাজার এগারোয় মেমরিস ইন মার্চ ছবিতে। সেখানেও নারীত্বের স্পর্ধিত উচ্চারণ। স্পর্ধিত উচ্চারণ সম্পর্কের রসায়নেও। ধরা বাঁধা ছকের বাইরে বেরিয়ে দুই মানুষের সম্পর্ককেই শেষ সত্যি বলে প্রতিষ্ঠা করলেন আসাধারণ অভিনয়ে।
২০১২তে আরও একবার পর্দায় এলেন ঋতুপর্ণ। তাঁর নিজের ছবি চিত্রাঙ্গদার হাত ধরে। ক্যামেরার পিছনেও তিনি। আরেকটি প্রেমের গল্প, মেমরিজ ইন মার্চের হাত ধরে এলজিবিটি আন্দোলনের একটা অন্য ধারা তৈরি হয়েছিল চিত্রাঙ্গদায় তা সম্পূর্ণতা পেল।
না, কোনও দিন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হননি তিনি। কিন্তু ঋতুপর্ণের সমগ্র অস্তিত্বটাই ছিল সমাজের বুকে তীব্র এক থাপ্পর। নিজের যৌন অবস্থান, ভাবনা সম্পর্কে তিনি ছিলেন অকপট। সেই ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছিল তাঁর অভিনীত এই তিনটি সিনেমায়। একই বিষয় ভিত্তিক ট্রিলজিতে।
অবরুদ্ধ সমাজের সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছে তাঁর অভিনয় প্রতিভার সাক্ষর বুনে রাখা এই তিনটি ছবি। হয়ত এখনও সমাজ এই তিনটি ছবিকে সম্পূর্ণ বুঝে ওঠার মত প্রাপ্তমনস্কহয়ে উঠতে পারেনি।
ঋতুপর্ণ চলে গেলেন। রেখে গেলেন তাঁর সৃষ্টি। কিন্তু এই তিনটি ছবির মাধ্যমে তিনি হয়ত বেশ কয়েক কদম এগিয়ে দিয়ে গেলেন সমাজে জোর করে প্রান্তিক করে রাখা কিছু মানুষের অধিকারের লড়াইকে।

.