ঘরের লোকেরাই পিছন থেকে ছুরি মারছে, বিস্ফোরক দেব
নিজের না পারাকেও লুকিয়ে রাখেননি দেব। সাংসদ হিসেবে তিনি ব্যর্থ বলে স্বীকার করেছেন। ঘাটালের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারেননি, কোনও রাখঢাক না করেই সে কথা বলেছেন তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: এক যুগ আগের কথা। জীবনকে দু'পায়ে দাঁড় করাতে কত কিছুই না করতে হয়েছে তাঁকে। তখন আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতো তিনিও ছিলেন একজন স্ট্রাগলার। একটা সময় শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে অনামি হোটেলের এক কামরায় ছেঁড়া বেডশিটেই কত বিনিদ্র রাত কেটেছে তাঁর। তবে চারপাশের চোখ ধাঁধানো আলোয় কখনও চোখ বুঁজে ফেলেননি দেব। বরং আরও বড় বড় করে চোখ মেলে রেখেছিলেন তারা ধরবেন বলে। তিনি তা পারলেনও। ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রম, এক যুগ সময়েই দীপক অধিকারী থেকে হয়ে উঠেলেন দেব।
একটা দীর্ঘ লড়াই। এখন সাফল্যের একেবারে চরম শিখরে তিনি। একটা সময় শহর কলকাতায় পাকাপাকি থাকার কোনও বন্দোবস্ত ছিল না। আর আজ, তিনি তার আকাশছোঁয়া ফ্ল্যাটের ঝোলানো বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেঘ ধরেন। এক জীবনেই তিনি সুপারস্টার, প্রডিউসর, সাংসদ। ক্ষমতাবলে অনেকেই তার ধারের কাছে নেই। শোনা যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের তালিকায় সামনের সারিতেই রয়েছেন তিনি। এহেন দেবের ছবি কি না হলে চলতে চলতেই নামিয়ে নেওয়া হয়। হল-ই পায় না তাঁর ছবি। এ নিয়ে ভিতর ভিতর ফুঁসলেও এতদিন প্রকাশ্যে কিছুই বলেননি তিনি। তবে এবার মুখ খুললেন টলি তারকা। ফেস অফ অনুষ্ঠানে জি ২৪ ঘণ্টার এডিটর অনির্বাণ চৌধুরীর প্রশ্নের সামনে ‘মুখোশ’ খুলে ফেললেন দেব। সাফ জানালেন, ইন্ডাস্ট্রির লোকেরাই তাঁকে ‘পিছন থেকে ছুরি মারছেন’।
প্রযোজক হয়ে কাকে টার্গেট করলেন তিনি? শ্রীকান্ত মোহতা, প্রতিদ্বন্দ্বী এসভিএফ? হাসি মুখেই দেবের উত্তর, “আমি কারও নাম বলছি না, শ্রীকান্ত দা (মোহতা) আমার ভাল বন্ধু”। তবে এটা জানাতেও ভুললেন না, টলি ইন্ডাস্ট্রিতে একটা অসম প্রতিযোগিতা চলছে। এক একটা প্রোডাকশন হাউস একই সময়ে তিন তিনটে ছবি রিলিজ করলে অন্য প্রযোজকদের হল পেতে সমস্যা হবেই। সরাসরি নাম না-করলেও তিনি যে এ কথা এসভিএফ-এর উদ্দেশেই বলেছেন তা আর আলাদা করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এখানেই শেষ নয়, ‘তাঁর ছবি থেকে নায়িকা পালিয়ে যাওয়া’ নিয়েও নাম না-করে টলি ইন্ডাস্ট্রির ধনকুবেরদেরই টার্গেট করেছেন তিনি।
(টলি অভিনেত্রী মিমির সঙ্গে দেব)
টলি ইন্ডাস্ট্রির এই মুহূর্তের ‘সবথেকে দামি’ নায়িকা মিমি। আগাম কথা হয়ে থাকলেও শেষ মূহুর্তে তিনি দেব এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে কাজ করেননি তিনি। দেবের ছবিতে কাজ করেননি অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কাও। আর এর পিছনে এসভিএফ কলকাঠি নেড়েছে বলেও দাবি তাঁর। তবে এতে কোনও আফশোস নেই সুপারস্টারের। 'ফেস অফ' অনুষ্ঠানে তিনি সাফ বললেন, “যা হয়ছে মঙ্গলের জন্যই হয়েছে”। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন টলিউড ইন্ডাস্ট্রির কোনও অন্তর্দ্বন্দ্বেও তিনি থাকবেন না।
(কলকাতা অান্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে অমিতাভ বচ্চনের হাতে স্মারক তুলে দিচ্ছেন দেব)
মাস কয়েক আগে যখন প্রডিউসরদের সঙ্গে ধারাবাহিকের অভিনেতাদের পাওনা নিয়ে গণ্ডগোল বাঁধে তখন প্রসেনজিত্, জিত্, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারা সামনে এলেও অন্তরালেই ছিলেন দেব। 'ফেস অফ'-এ দেব বলেন, তিনি এই ঝামেলা থেকে ইচ্ছে করেই নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর বিস্ফোরক দাবি, অতীতে যখন এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়েছেন, তাঁকে বিজেপির লোক বলে আক্রমণ করা হয়েছে! অশোক ধানুকার শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনিই সমাধান করেছিলেন। তারপরই না কি দেবকে উদ্দেশ্য করে ইন্ডাস্ট্রির কেউ কেউ বলেন, তিনি না কি বিজেপি তে যোগ দিতে চলেছেন। এরপর গোটা বিষয়টি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন দেব। ইন্ডাস্ট্রির বিষয়ে তিনি যে আর কখনই আগ বাড়িয়ে কিছু করবেন না, সে কথাও মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন তিনি।
এই অনুষ্ঠানে তাঁর সমালোচকদেরও একহাত নিয়েছেন দেব। তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর বাংলা বলতে অসুবিধা হয়। অভিনয় করার কোনও পরিকল্পনাও ছিল না তাঁর। তবে তিনি যে প্রতিনিয়ত উন্নতি করছেন, সে কথাও অকপটে জানিয়েছেন সুপারস্টার দেব। সমালোচকদের একহাত নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “অভিনয় না-জানলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে এত বছর টিকে থাকা যায় না”।
সব শেষে নিজের না পারাকেও লুকিয়ে রাখেননি দেব। সাংসদ হিসেবে তিনি ব্যর্থ বলে স্বীকার করেছেন। ঘাটালের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারেননি, কোনও রাখঢাক না করেই সে কথা বলেছেন তিনি। সবসময় সংসদে সময় দিতে পারেননি, তার কারণ তাঁর ফিল্মি কেরিয়ার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই কথা তিনি জানিয়েছেনও। তাহলে কি এবার আর ভোটে লড়ছেন না তিনি? দেবের উত্তর, দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কথা মতো তিনি চলবেন। দিদি ভোটে দাঁড়াতে বললে দাঁড়াবেন, লড়বেন এবং আবারও সাংসদ হবেন বলে দৃপ্ত কণ্ঠে জানিয়েছেন টলি পাড়ার এই হিরো।