সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, দাবি করে একযোগে আস্থা ভোট চাইল Left-Congress

শোভন চট্টোপাধ্যায় থেকে শুভেন্দু পর্ব- সাম্প্রতিককালে একের পর এক তৃণমূল বিধায়ক যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে (BJP)। সেটাই তুলে ধরে তৃণমূলকে কোণঠাসা করার কৌশল নিল বাম-কংগ্রেস।

Updated By: Dec 31, 2020, 06:15 PM IST
সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, দাবি করে একযোগে আস্থা ভোট চাইল Left-Congress

নিজস্ব প্রতিবেদন: বিধানসভার অধিবেশন ডেকে আস্থা ভোটের দাবি করল বাম-কংগ্রেস। বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের মন্তব্য,'তৃণমূল ও বিজেপির এই গড়াপেটা নাটকের ফলে মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে, সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।' একইসুরে সুজন চক্রবর্তী বলেন,'এই সরকারের উপরে মানুষের আস্থা নেই।'

শোভন চট্টোপাধ্যায় থেকে শুভেন্দু পর্ব- সাম্প্রতিককালে একের পর এক তৃণমূল বিধায়ক যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে (BJP)। সেটাই তুলে ধরে তৃণমূলকে কোণঠাসা করার কৌশল নিল বাম-কংগ্রেস। আরও একবার আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের দাবি করল তারা। বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের কথায়,'তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে গড়াপেটা নাটক চলছে। ফলে মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে এই সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। আজ এই বিধায়ক কাল ওই মন্ত্রী দলত্যাগ করছেন। এটা কতজন? সংখ্যাটা একশোর বেশি হলে তো সরকারের পতন হয়ে গিয়েছে। ৮০ জন হলেও তো তাই। প্রশাসনও সক্রিয় নেই।  একটা দোলাচল রয়েছে।' বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য,'মনে হচ্ছে রাজ্য সরকার বিধানসভার মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে। বিরোধীদের কথা শোনার হিম্মত নেই। মানুষকে ভয় পাচ্ছে। সরকারের উপরে মানুষের আস্থা নেই। এটাই প্রমাণ করছে।' তবে আস্থা ভোটে 'আস্থা' নেই বিজেপির। দলীয় নেতৃত্ব মনে করে, সরকারের আয়ু আর স্বল্প দিন। আস্থা ভোটের দরকার নেই। বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন,'অনাস্থায় কিছু যায় আসে না। আগামী লড়াইয়ে বাম-কংগ্রেস অপ্রাসঙ্গিক। আমরা মনে করি মূল্যহীন কথাবার্তা বলছেন ওদের নেতারা। বাম-কংগ্রেস ভেসে থাকার জন্য এসব করছে।'  তৃণমূল নেতা তাপস রায় বলেন, 'আগামী নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটে মানুষের কতটা আস্থা রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ওদের দোষেই মানুষ পাশে নেই। আগামী দিনে মমতার বিরোধিতায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিজেপিকে সহযোগিতা করতেই পারে বামেরা।'

রাজনৈতিক মহলের মতে,বাম-কংগ্রেসের আস্থা ভোটের দাবির নেপথ্যে রয়েছে দু'টি কৌশল। প্রথমত, তৃণমূলের মতো ঘর ভেঙেছে বাম-কংগ্রেসেরও। বিধানসভা ভোটের আগে আস্থা ভোটের দাবিতে শাসক শিবিরে অস্বস্তি তৈরিই লক্ষ্য তাদের। এর পাশাপাশি শীতকালীন অধিবেশনের জন্য শাসক দলের উপরে চাপ সৃষ্টিও করতে চাইছে দুই শিবির।

বিধানসভার অবস্থা ঠিক কী রকম?                

ঘটনা হল, ২০১৬ সালের নির্বাচনের ফলাফলের ছবি ধরলে বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল ও বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা আমূল বদলে গিয়েছে। কার দলে কত বিধায়ক রয়েছেন, তা সুস্পষ্ট করে বলতে পারছে না কোনও শিবিরই। কেউ কেউ দলবদল করেছেন, তবে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, ৪৪জন বিধায়কের মধ্যে বদল করে ফেলেছেন ১৮ জন। বামেদের ৩৩ জনের মধ্যে ৮ জন এখন অন্য দলে।

তবে দলবদলে শিরোনামে এখন গেরুয়া শিবির। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন ৩ জন। মাদারিহাটে মনোজ টিগ্গা, বৈষ্ণবনগরে স্বাধীন সরকার ও খড়্গপুর সদরে দিলীপ ঘোষ। দিলীপ সাংসদ হওয়ার পর খড়্গপুরে উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। উপনির্বাচনে বিজেপি জিতেছে ৪টি কেন্দ্রে- ভাটপাড়ায় পবন সিং, দার্জিলিঙে নীরজ তামাং জিম্বা, হবিবপুরে জোয়েল মুর্মু ও কিষাণগঞ্জে আশিস বিশ্বাস জিতেছেন। দলে এসেছেন বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, নোয়াপাড়ার বিধায়ক সুনীল সিং, লাভপুরের মনিরুল ইসলাম, বীজপুরের শুভ্রাংশু রায়, বাগদার দুলালচন্দ্র বর, বিষ্ণুপুরের কংগ্রেস বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য, হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্র রায়। ২০১৯ সালের অগাস্টে বিজেপিতে নাম লেখান শোভন চট্টোপাধ্যায়। চলতি মাসে মেদিনীপুরে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন শুভেন্দু। তাঁর হাত ধরে এক ঝাঁক বিধায়ক দলবদল করেন। বিজেপিতে যোগ দেন উত্তর কাঁথির বনশ্রী মাইতি, কালনার বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, মন্তেশ্বরের সৈকত পাঁজা, গাজলের দিপালী বিশ্বাস, নাগরাকাটার সুকরা মুণ্ডা, বারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত, হলদিয়া পূর্বের সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল, তমলুকের সিপিআই বিধায়ক অশোক দিন্দা ও পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়। 

আরও পড়ুন- শাহের সফরের আগে বেসুরো শান্তনুর 'মনের কথা' রাখল বিজেপি 

.