দোল দোল দুলুনি...

বাঙালিদের ঝুলিতে উৎসবের সংখ্যা চিরকালই ক্রমবর্ধমান। রসে বসে থাকুক বা না থাকুক ফেস্টিভ্যাল পালনে বাঙালিদের কোনও কার্পণ্য নেই। উৎসবের মামলায় বঙ্গ জনতা, মহাই বিলকুল সাম্যবাদী। তবে মধ্যবিত্ত ভীরু ট্যাগ নিয়ে জন্মানো বাঙালি জাতির জীবনে অ্যাডালটারেশনের অভাব না থাকলেও অ্যাডাল্ট উৎসব বলতে সেই সবে ধন নীলমণি দোল।

Updated By: Mar 5, 2015, 04:18 PM IST
দোল দোল দুলুনি...

ওয়েব ডেস্ক: বাঙালিদের ঝুলিতে উৎসবের সংখ্যা চিরকালই ক্রমবর্ধমান। রসে বসে থাকুক বা না থাকুক ফেস্টিভ্যাল পালনে বাঙালিদের কোনও কার্পণ্য নেই। উৎসবের মামলায় বঙ্গ জনতা, মহাই বিলকুল সাম্যবাদী। তবে মধ্যবিত্ত ভীরু ট্যাগ নিয়ে জন্মানো বাঙালি জাতির জীবনে অ্যাডালটারেশনের অভাব না থাকলেও অ্যাডাল্ট উৎসব বলতে সেই সবে ধন নীলমণি দোল।

বাঙালির জীবনে পুং ঠাকুর দুজনই। এক কেষ্ট ঠাকুর (অবশ্যই এখানে চণ্ডীদাস আর জয়দেবের কৃষ্ণের বঙ্গীয়করণ আলোচ্য বিষয়। ব্যাসদেবের ভোজপুরি রাজা কৃষ্ণ ব্রাত্যজন) আর এক জন রবি ঠাকুর। তা এই দুই প্রেমিক প্রবর ঠাকুর মশাই রঙের উৎসবকে বঙ্গ জীবনের অঙ্গ যখন বানিয়েই গেছেন তখন তার থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকে কোন বেরসিক! কৃষ্ণ-রবির নাম যে উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক খুনসুটি থাকবে না? ধুর, তাও কি কখনও হয় নাকি!
দোল বা হোলি হলো অনেকটা রাবণের মত। যার জীবনে শিশু দশা প্রায় নেই বললেই চলে। বরং শিশুরা দোলের ছোঁয়ায় টুকুস করে বড় হয়ে ওঠে। তবে রঙ নিয়ে রঙবাজি করার আগে টুকটাক বিধিসম্মত সতর্কীকরণ সঙ্গে টুকটাক জ্ঞান বিতরণ-

দাদাদের জন্য
১. পাশের বাড়ির যে কন্যে বা বৌদিকে দেখে সারা বছর বুকের ভিতরটা হুহু করে ওঠে, তাকে একপলকে একটু ছুঁয়ে দেখার এমন দিন আর পাবেন না। রঙ খেলি না বলে দরজায় কুলুপ এঁটে বসলে সারা জীবন আঙুল কামড়াতে হবে।

২.আগে থেকে নিজে যেচে পড়ে রঙ দিতে যাবেন না। নিজেকে উদাসী সাজিয়ে রঙিন সুন্দরীদের আশেপাশে ঘুরঘুর করুন। তারা রাঙিয়ে দিলে ফুর্তিতে ডিগবাজি খাওয়া হৃদয়ের ভাবাবেগ প্রকাশ করে ফেলবেন না। মুচকি হাসি দিয়ে এক ফর্মুলা অন্য কোথাও ট্রাই করুন। পরের বছর নরম হাতের রঙিন ছোঁয়ার মাত্রা বাড়বেই। দাবি রইল।

৩. বাদুরে রঙের আদরে ভুলেও মাতবেন না। আবিরের সাহায্য নিন (অভিনেতা নয়, গুঁড়ো)। তাও যৎসামান্য। ভবিষ্যতের রাস্তা রঙিন করার জন্য দোলের দিন অল্প রঙই কাফি।

৪. ঝোপ বুঝে কোপ বসানোর মতই পছন্দের মহিলাকে খানিক আড়ালে পেলে হালকা করে বলে দিন `হলুদ রঙে তোমাকে সকালটার মতোই সোনালী লাগছে` বা `তোমার ছোঁয়ায় সবুজ আরও তাজা হল`-র মত চুড়ান্ত ন্যাকা ন্যাকা কিছু বাক্যি। তবে সুন্দরী যদি খুব হেপ হন, তাহলে `উফফ! আবিরে তুই এমন পালটে যাবি ভাবিনি`-র মত হটকে ডায়লগ ঝাড়ুন। মুখে যাই বলুক না কেন, সব প্রকার ভবিই এতে ভুলবে।

৫. ঠাণ্ডাই খাবেন। কিন্তু ভুলেও মাতাল হবেন না। ভুলে যাবেন না আপনি অমিতাভ বচ্চন নন। আর আপনার আশে পাশে রেখাও নেই। ঠাণ্ডাইয়ের নেশায় অন্যের বউয়ের হাত ধরে রঙ ররষে গান ধরলে একটা মারও বাইরে পড়বে না।

দিদিদের জন্য

১. এই দিনটার জন্য ন্যাকামো বর্জন করুন। `ওসব আমার ভাল লাগে না`-কে নির্বাসনে পাঠান। একসঙ্গে এতজন পছন্দের লোকজনের সঙ্গে নরম ঘনিষ্ঠতার সুযোগ কিন্তু আর জুটবে না।

২. বাকি ৩৬৪ দিন সমান অধিকারের দাবি জানালেও দোলের দিন নিজেদের বেশি অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। মহিলা হওয়ার ভরপুর সুবিধা নিন। যার চওড়া কাঁধের দিকে তাকিয়ে রোজ ভাবসমুদ্রে ভাসেন সটান গিয়ে আজ তাকে রঙ দিয়ে আসুন। দূর থেকে বেলুন ছোঁড়ার থেকে এই পদ্ধতি যে কোনও দিন হাজার গুণে ভাল।

৩. রঙের আহ্লাদে চুল পড়া, ব্রণ, অকালপক্কতার হাত থেকে বাঁচতে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে বসে থাকলে লসটা কিন্তু আপনারই। উদাসী রাজকুমারকে শুকনো বা ভেজা রঙে পাশের বাড়ির সাধারণ কন্যে যখন ভাগিয়ে নিয়ে যাবে তখন হাপুস হুপুস কান্নাতেও লাভ হবে না।

৪. দয়া করে সাদা পোষাকে সাজুগুজু হয়ে দোলের দিনটা সিরিয়াল নন্দিনী হবেন না। ছোট বেলার মতই দোলটা খেলুন খেস্টো পোশাক পড়েই। পাট ভাঙা সাদা জামাকাপড় থেকে রঙ তুলতে গাদা গাদা ডিটার্জেন্ট নষ্ট করার কোনও মানেই হয় না। বিশ্বাস করুন আপনার পাড়ার কোনও হিরোই ওই সফেদ আবরণকে একটুও আলাদা গুরুত্ব দেবে না।

৫. কেউ রঙ দিয়ে দিলে অকারণ হুলুস্থুল করবেন না। ভাবুনতো আপনি দোল খেলতে এলেন আর একজন পুরুষও আপনাকে রঙ দিল না! এর থেকে চরম হতাশার আর কি কিছু হতে পারে?

কিশোরদের প্রতি

বড় হওয়ার ভাল সিঁড়ি। কিন্তু মনে রাখতে হবে বেশি দুদ্দাড় ছুটে লাফিয়ে সিঁড়ি টপকাবার চেষ্টা করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুম করে পড়ে যাওয়ার চান্স থাকে।

শিশুদের প্রতি

সক্কাল সক্কাল দোল খেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ঢুকে পড়ো। কিছু উৎসব বড়দের জন্য ছেড়ে রাখ।

প্রেমিক ও প্রেমিকাদের প্রতি

যা ইচ্ছে তাই করুন। (তবের নিজেরটির সঙ্গেই। অন্যদের সঙ্গে কিছু করার চেষ্টা করলে সব দায়িত্ব ব্যক্তিগত কিন্তু)

.