এনসিটিসি`র বিরোধিতায় মুখ্যমন্ত্রী, নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ ঘিরে জল্পনা

সংসদে লোকপাল বিল নিয়ে বিতর্কের সময় লোকায়ুক্ত নিয়োগ ইস্যুতে `রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষপ`-এর অভিযোগ তুলে বিরোধিতায় সোচ্চায় হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা।

Updated By: Feb 17, 2012, 12:47 PM IST

সংসদে লোকপাল বিল নিয়ে বিতর্কের সময় লোকায়ুক্ত নিয়োগ ইস্যুতে `রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষপ`-এর অভিযোগ তুলে বিরোধিতায় সোচ্চায় হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। এবার একই যুক্তিতে জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র বা ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার (এনসিটিসি) তৈরির কেন্দ্রীয় উদ্যোগের বিরোধিতায় সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের মুখে এনডিএ শরিক জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর নীতীশ কুমার, তৃতীয় ফ্রন্টের নেতা, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক আর অধুনা বিজেপি-ঘনিষ্ঠ জয়ললিতার সুরে সুর মিলিয়ে তৃণমূল নেত্রীর এই কংগ্রেস-বিরোধী জেহাদকে ঘিরে শুরু হয়েছে সম্ভাব্য নয়া রাজনৈতিক সমীকরণ সংক্রান্ত জল্পনা।
২০০৮ সালের ২৬/১১ নাশকতার পর সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে এনসিটিসি-র মতো একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা তৈরির প্রস্তাব দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। নর্থ ব্লকের তৈরি রূপরেখা অনুযায়ী সন্ত্রাসবাদী তত্‍পরতা সম্পর্কিত আগাম গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ, সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা প্রতিরোধী অপারেশন চালানো এবং নাশকতা-পরবর্তী তদন্ত- এই ৩টি দায়িত্বই দেওয়া হবে নবগঠিত এনসিটিসি-কে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে এনসিটিসি-র ছাতার তলায় নিয়ে আসা হবে। আগামী ১ মার্চ থেকে এনসিটিসি-র কাজ শুরু করার কথা। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে এ ব্যাপারে একটি নির্দেশিকাও জারি হয়েছে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে নীতি নিয়েছে, তাতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সরাসরি কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের সুযোগ রয়েছে। তাই রাজ্যের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত মানা সম্ভব নয়। বস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের এই `আপত্তি` ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এনসিটিসি-র গঠন এবং কার্যকলাপ ও অধিকারের পরিধি সংক্রান্ত বর্তমান খসড়া বাতিলের দাবি তুলেছেন। অবশ্য চিদম্বরমের মন্ত্রকের আধিকারিকরা রাজ্যগুলির এই আশঙ্কাকে `অমূলক` বলেই মনে করছেন। তাঁদের যুক্তি, সম্ভাব্য কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত এড়াতে এনসিটিসি-র মধ্যে একটি `স্থায়ী পরিষদ` গঠন করা হবে। প্রতিটি রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির প্রধানরা এই পরিষদে থাকবেন। ফলে রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ চালাতে অসুবিধে হবে না এনসিটিসি`র।

ইতিমধ্যেই ওড়িশা ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এনসিটিসি-র প্রস্তাবিত `অবয়ব` নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে অসম্মতির কথা জানিয়েছেন। বিরোধিতা এসেছে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ারাম জয়ললিতার তরফেও। নর্থ ব্লকের তৈরি সূত্র অনুযায়ী, সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীকে পাকড়াও করতে এনসিটিসি যে কোনও রাজ্যে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই অভিযান চালাতে এবং সন্দেহভাজন যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। এর ফলে রাজ্যের অধিকার ক্ষুন্ন হবে বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। এবার ইউপিএ জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দলের নেত্রীও একই অভিযোগ তোলায় নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিকভাবে কিছুটা বিপাকে পড়ল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে আবারও আলোচনায় চলে এল কেন্দ্রে নয়া রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির সম্ভাবনা।

.