ভোল পাল্টে কোবিন্দের সমর্থনে নীতিশও, বিজেপির দলিত তিরে বিদ্ধ জাতীয় রাজনীতি
নির্ণয় ভট্টাচার্য্য
১৮০ ডিগ্রি অবস্থান পাল্টে রাষ্ট্রপতি পদে এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকে সমর্থন করতে এগিয়ে এলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। আজ সন্ধ্যায় শরদ যাদব সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা সেরে প্রথা মাফিক সমর্থন ঘোষণা করা হবে, এমনটাই খবর। আরও জানা যাচ্ছে যে, গতকালই নিজের সিদ্ধান্তের কথা কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে টেলিফোনে জানিয়ে দিয়েছেন নীতিশ কুমার। কিন্তু, যে নীতিশ নিজ উদ্যোগে কিছুদিন আগে দশ জনপথে গিয়ে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী ঐক্য তুলে ধরার বিষয়ে অনুঘটকের কাজ সেরে এসেছিলেন, সেই তিনিই কেন হঠাত্ এমন পিঠ টান দিলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই সামনে এসে পড়ছে 'সঠিক সময়ে' মোদী সরকারের 'মোক্ষম চাল' তথা 'দলিত তাস' খেলার প্রসঙ্গ। সংসদীয় কমিটির বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করার সময়ই বিহারের সদ্য প্রাক্তন রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দের দলিত পরিচয়কে বিশেষভাবে জোর দিতে দেখা যায় বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহকে। সাংবাদ মাধ্যমের সামনে অমিতকে এমনও বলতে শানা যায় যে, তিনি আশা করেন এমন একজন 'পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা' মানুষকে সকলেই সমর্থন করবে। মনে করা হচ্ছে, এই দলিত অস্ত্রেই নীতিশের বিরোধিতা আপাতত ভোঁতা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে আসলে আগামী লোকসভা ভোটে মোদীর বিজেপিকে রুখতে যে ১৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় বিরোধী মোর্চা তৈরি হয়েছিল তার অন্যতম সদস্য ছিলেন নীতিশ কুমার। কিন্তু, বিজেপি তথা এনডিএ রামনাথ কোবিন্দকে দলিত মুখ হিসাবে তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যাওয়ায় দলিত ভোটের কথা চিন্তা করে তাঁকেই সমর্থনের বিষয়ে সম্মত হতে হয়েছে নীতিশকে, মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। পাশাপাশি, অনেকেই মনে করছেন, বিহারের রাজ্যপাল হিসাবে কোবিন্দের সঙ্গে নীতিশের সুসম্পর্কও এক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজ করেছে। ইতিপূর্বে বহুবার কোবিন্দকে একজন 'নিরপেক্ষ রাজ্যপাল' হিসাবে সার্টিফিকেট দিয়েছেন নীতিশ। এছাড়া আরেকটি মতও উঠে আসছে তা হল, লালুপ্রসাদও ও তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক ভবিষ্যত সঙ্কটে চলে যাওয়াটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে নীতিশকে। প্রসঙ্গত, গত কালই লালুপত্নী রাবড়ি, কন্যা মিসা ভারতী এবং বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা লালুতনয় তেজস্বীর নাম জড়িয়েছে বেনামি সম্পত্তি মামলায়। এদিকে, বিহারে লালুর রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও কংগ্রেসের সঙ্গে যুগ্মভাবে ক্ষমতায় রয়েছে নীতিশের জনতা দল ইউনাইটেড। ফলে ভবিষ্যতে লালু পরিবার বড় বিপদে পড়লে রাজ্যে সরকার টিকিয়ে রাখার চিন্তাও রয়েছে নীতিশের মাথায়। সেকারণেই, তিনি আপাতত কেন্দ্রের বিজেপির সঙ্গে সংঘাতে যেতে চাইছেন না। আর এর সঙ্গে দলিত রাজনীতির অঙ্ক তো রয়েছেই।
ইতিমধ্যেই মায়াবতী জানিয়ে দিয়েছেন যে, যদি এর চেয়ে 'ভাল দলিত প্রার্থী' না পাওয়া যায়, তাহলে তিনি রামনাথ কোবিন্দকেই সমর্থন জানাবেন। বিজেপির 'দলিত তাস'-এর পাল্টা হিসাবে আবার সিপিএমের পক্ষ থেকে 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা'র তত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে। লাল পার্টির প্রস্তাব, বিরোধী জোটের প্রর্থীও এক জন দলিতই হোক। সেক্ষেত্রে লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা কংগ্রেস নেত্রী মীরা কুমার ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দের নামও ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে দলিত রাজনীতির যে তির বিজেপির গাণ্ডীবের ছিলা থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তাতে আপাতত বিদ্ধ তথাকথিত 'ধর্মকে আফিং মনে করা' এবং জাতপাতের রাজনীতির ঘোষিত বিরোধী বাম শক্তি সহ জাতীয় রাজনীতির প্রায় সবকটি দলই। (আরও পড়ুন- রামনাথ কোবিন্দের অন্য পরিচয়)