দোল খেলতে অন্য কোথাও...
রং মেখে ভুত সেজে দোল তো প্রতিবছরই খেলেন। একটু অন্যরকম দোল কাটাতে, উত্তর ভারতের হোলির আবেগে মিশে যেতে এবারে দোলে না হয় একটু ঘুরেই আসুন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আপনার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে গোলের হরেক রং...
রং মেখে ভুত সেজে দোল তো প্রতিবছরই খেলেন। একটু অন্যরকম দোল কাটাতে, উত্তর ভারতের হোলির আবেগে মিশে যেতে এবারে দোলে না হয় একটু ঘুরেই আসুন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আপনার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে গোলের হরেক রং...
শান্তিনিকেতন
পলাশ আর আবীরে রাঙা দোল উপভোগ করতে এবারে দোলে যেতে পারেন শান্তিনিকেতনের বসন্ত উত্সবে। সারা ভারতের থেকে আলাদা, এমনকী সারা পশ্চিবঙ্গের থেকেও একেবারে আলাদা এখানকার বসন্ত উত্সবের আমেজ। বিশ্বভারতীর দোল দেখতে প্রতিবছর বিদেশ থেকেও বহু পর্যটক উড়ে আসে শান্তিকেতনে। দোলের আগের রাত থেকেই শুরু হয় বসন্ত উত্সব। শুকনো ডালপালা, পাতার ঝোপ পুড়িয়ে জীর্ণ শীতকে বিদায় জানিয়ে বসন্তকে স্বাগত জানানো হয়। আশ্রম পরিক্রমার সঙ্গে গাওয়া হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত। পরের দিন ভোর থেকেই শুরু হয় বসন্ত উদযাপন। এর পর রবি ঠাকুরের গানের সঙ্গে পলাশের ছায়ায় নাচে, গানে বসন্ত উত্সব। আর তারপর আবীর খেলা। ভারতের একমাত্র জায়গা যেখানে দোল উদযাপন মানে বসন্ত উদযাপন। তাই রং খেলায় কোথাও ঠাঁই পায় না পিচকারি বা গোলা রং। আবীরেই রেঙে ওঠে রবি ঠাকুরের শান্তিকেতন। বসে দোল উপলক্ষে বিশেষ মেলাও।
কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে গণদেবতা, ইন্টারসিটি, শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস, শহীদ এক্সপ্রেস সহ বেশ কিছু ট্রেনে চেপে ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় বোলপুর স্টেশনে। সেখান থেকে রিক্সা চেপে মিনিট কুড়ির মধ্যেই হাতের মুঠোয় শান্তিনিকেতন।
মায়াপুর
মায়াপুর যাবার অন্যতম সেরা সময় দোলের দিন অর্থাত্ গুরু পূর্ণিমার সময়। গঙ্গা ও জলঙ্গির সঙ্গমস্থলে ইসকনের মন্দির দোলের সময় এক অন্য মাত্রা পায়। কৃষ্ণভক্তিতে মাতোয়ারা এখানকার দোল। দোলের আগের দিন হোলিকা দহনের মাধ্যমে শুরু হয় উত্সব। রাক্ষসী পূতনাকে সুন্দরী রমনীর বেশে কৃষ্ণকে বধ করতে পাঠিয়েছিলেন রাজা কংস। পূতনা শিশু কৃষ্ণকে তার বিষাক্ত দুধ পান করিয়ে হত্যা করতে যায়। কিন্তু দুধের বদলে পূতনার দুধ পান করে শিশু কৃষ্ণ। মৃত্যু হয় পূতনার। হোলিকা দহনের সময় কাঠ, শুকনো খড় প্রভৃতি পোড়ানোর মাধ্যমে পূতনার দুরাত্মাকে দহন করার রীতি পালন করা হয় মায়াপুরে।
হোলিকা দহনের পর রয়েছে ইস্কনে গুরু পূর্ণিমার পুজো ও রং খেলার উত্সব। খেলার সময় হরে রাম হরে কৃষ্ণর মাধ্যমে ভক্তদের উল্লাস অন্য আবহ তৈরি করে এখানে। এছাড়াও রয়েছে কীর্তনের সঙ্গে ভক্তদের মাতোয়ারা নাচ ও ভোগ। দোলের দিন কীর্তন মায়াপুরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যা ভারতের অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না।
কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে রয়েছে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। বিকেল ৩টেয় কলকাতা থেকে ছেড়ে নবদ্বীপ ধাম পৌঁছয় ৫টা ৪৫ নাগাদ। শিয়ালদহ থেকেও কৃষ্ণনগর যাওয়ার ট্রেন পাবেন। নবদ্বীপ ধাম থেকে রিকশায় মায়াপুর ঘাট গিয়ে নৌকায় হুলার ঘাট যাওয়া যায়। সেখান থেকে রিকশায় ইস্কনের মন্দির। কৃষ্ণনগর থেকে মায়াপুর ইস্কনের মন্দিরে যাওয়ার বাস পাবেন। এছা়ডাও কলকাতা থেকে শুক্র, শনি ও রবিবার মায়াপুর ইস্কনের বাস পাওয়া যায়।
মথুরা-বৃন্দাবন
মায়াপুর যদি হয় কৃষ্ণভক্তির পীঠস্থান, মথুরা-বৃন্দাবন তবে কৃষ্ণপ্রেমের প্রাণকেন্দ্রে। এক সপ্তাহ ধরে চলে হোলি খেলা। শ্রীকৃষ্ণের সবকটি বড় মন্দিরই রঙিন হয়ে ওঠে হোলির রঙে। দোলের সময় যদি বৃন্দাবনে কাটাতে চান তাহলে অবশ্যই যাবেন বাঁকে-বিহারী মন্দিরে। হোলির রঙের সঙ্গে কৃষ্ণপ্রেম একাকার হয়ে যায় এখানে। এছাড়াও ব্রজের গুলাল-কুন্দের হোলি দেখার মত। গোবর্ধন লেকের পাশে হোলির দিন অনুষ্ঠিত হয় অপূর্ব কৃষ্ণ-লীলা। বৃন্দাবন গেলে এই কৃষ্ণ-লীলা না দেখে ফিরবেন না যেন।
মথুরা-বৃন্দাবনের হোলি খেলার শুরু রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা থেকেই। গায়ের রঙ কাল বলে যশোদা মায়ের কাছে দুঃখ করত শিশু কৃষ্ণ। রাধার দুধে আলতা রঙে হিংসাও জাগত মনে। যশোদা মাই কৃষ্ণকে বুদ্ধি দেন হোলির দিন পছন্দ মত রঙে রাধাকে রাঙিয়ে দিতে। সেই প্রথা মেনেই এখনও হোলি পালিত হয় বৃন্দাবনে।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেনে সরাসরি চলে যাওয়া যায় মথুরা-বৃন্দাবন। সপ্তাহে প্রতিদিনই হাওড়া স্টেশন থেকে পাবেন তুফান এক্সপ্রেস। এছাড়াও সোমবার বিশেষ চম্বল এক্সপ্রেস চলে কলকাতা থেকে বৃন্দাবন। বিকেল ৪টেয় কলকাতা থেকে ট্রেনে উঠলে পরদিন সকাল ৬টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন বৃন্দাবন।