গন্ধটা খুব সন্দেহজনক

গত বছর প্রায় দেড়হাজার কোটি টাকার বাজি জিতেছে বলিউড ইন্ডাস্ট্রি। সংখ্যাটা খেয়াল করবেন। প্রিন্টিং মিসটেক নয়। আকাশছোঁয়া লাভের পর `বাজি ধরতে রাজি নই` বলতে নারাজ বলিউড। সেদিক থেকে রেস টু ছবিটা শুরুতেই বেশ বুক বাজিয়ে জানান দিল, হারতে আসিনি।

Updated By: Jan 27, 2013, 11:04 AM IST

শর্মিলা মাইতি
রেস টু
রেটিং- ***

গত বছর প্রায় দেড়হাজার কোটি টাকার বাজি জিতেছে বলিউড ইন্ডাস্ট্রি। সংখ্যাটা খেয়াল করবেন। প্রিন্টিং মিসটেক নয়। আকাশছোঁয়া লাভের পর `বাজি ধরতে রাজি নই` বলতে নারাজ বলিউড। সেদিক থেকে রেস টু ছবিটা শুরুতেই বেশ বুক বাজিয়ে জানান দিল, হারতে আসিনি। আগের সিকোয়েলটা যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। এ ছবি জমিয়ে দেবেই। টিকিটের সঙ্গে যদি বিশেষ ছাড়ে পপকর্ন মিলে যায়, তাহলে পোয়াবারো। রক্তারক্তি স্ট্রিটফাইটিং, ক্যাসিনোয় হাই-এন্ড জুয়াখেলা, বিশ্বব্যাপী স্মাগলিং-এর প্লট, রুদ্ধশ্বাস চেজিং সিন, তাকলাগানো ইন্টিরিয়রসমৃদ্ধ বিমান, ফোয়ারার মতো উড়তে থাকা ইউরো, কামিনী উইথ কাঞ্চন, ঝাঁচকচকে বাইক-কার-লিমুজিন সবই মজুত।

বছরের প্রথম তারকাখচিত সিনেমা। জন অ্যাব্রাহম বনাম সেফ আলি খানের কেমিস্ট্রিটাও প্রধান ইউএসপি। দুই তারকাই সম্মুখ-সমরে যুদ্ধ করেছেন। অধুনা বলিউডে জন অ্যাব্রাহমই একমাত্র চরিত্র যাঁকে বলা যায় মোটরবাইক ফিল্মের জন্য একেবারে টেলর-মেড। সেফের মুখে বয়সের ছাপ। শরীরে পেশির মন্দির। অনিল কপূরের চরিত্র একই রকম। তাঁর সর্বক্ষণের অ্যাসিস্ট্যান্ট সমীরা রেড্ডির জায়গায় এন্ট্রি নিয়েছেন অমিশা পটেল। দাঁড়িপাল্লায় দেখলে, অমিশার সেক্স কোশেন্ট একটু বেশিই ঝুঁকবে। মাথামোটা সুন্দরী, মানে ইংরেজিতে যাকে বলে ব্লন্ড, তাতে বেশ খাপে খাপ মিলে গিয়েছেন।
এ ধরনের ছবি বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে পুরুষপ্রধান। তবুও জাকলিনের চরিত্রটা আই-ক্যান্ডির থেকে একটু বেশি। অসিচালনার সিকোয়েন্সটা মাস্ক অফ জরো-র থেকে মাত্রাছাড়া অনুপ্রাণিত। ক্যাথরিন জেটা জোন্স-এর অসামান্য ফেন্সিং সিকোয়েন্সটা এখনও যাঁরা ভোলেননি, তাঁরা এই বিচারটা ভাল ভাবে করতে পারবেন আশা রাখি। জাকলিন চেষ্টা করেছেন। ধারেকাছে না পৌঁছতে পারলেও চেষ্টাটা স্পষ্ট।

গল্পের রাশ বেশ টানটান। দীপিকা আর জাকলিনের পারফেক্টলি ওয়েল-টোনড বডির মতোই! এক কথায় ফুলপ্রুফ। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে যুদ্ধ ও প্রেম। বাস্তবের কয়েক ফুট ওপর দিয়ে উড়লেও কোথাও গোঁত্তা খায় না। ঠিক তেমনি, ফুরফুরে গল্প হওয়ায় বিশেষ মাথাও ঘামাতে হয় না। এমনিতে যাঁরা এ ধরনের ছবি দেখতে পছন্দ করেন, তাঁরা ছকটা ভালই জানেন। পয়সা-পাওয়ার-প্যায়ার ত্রিভুজের সঙ্গে বেশ সম্পৃক্ত হয়ে মিশে যায় বিশ্বাসঘাতকতার বিষ। যুগপত্‍ বিশ্বাস-অবিশ্বাসের টানাটানি। একে অপরকে সন্দেহের গন্ধ দিয়ে দেখা। ব্লেডের ওপর চলতে থাকা টাকার খেলা, একটু বেসামাল হলেই মৃত্যু সুনিশ্চিত। হারজিতের খেলায় গুলোতে থাকা প্রেম-সম্পর্ক, সব সময় একটা ব্যাপারই প্রমাণ করতে থাকে, প্রোটাগনিস্টরা সব সময়েই দর্শকের থেকে বেশি জানে। রেসের ট্র্যাকটা ভগবান বানাচ্ছেন না বানাচ্ছে তাঁরা নিজেরাই। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু বাধ সাধল বেশ কিছু চোখে পড়ার মতো কন্টিনিউয়িটি জার্ক। ক্লাইম্যাক্সে স্ট্রিটফাইটিং সিকোয়েন্সে মারাত্মক জখম জন অ্যাব্রাহমের ঠোঁট আর শিরাউপশিরা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোয়। কোনও শটে সারা শরীরে রক্ত, কোনও শটে দিব্যি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তার কয়েক মিনিট বাদেই গাড়িতে বসা জন অ্যাব্রাহমকে দেখে কে বলবে তাঁর এমন মরোমরো অবস্থা হয়েছিল? সত্তরের দশকের ছবির স্টাইলে শুধু বাঁ-কপালের এক কোণে একখানি ব্যান্ড-এড। হলিউড ছবির নকল করতে গিয়েও শেষরক্ষে হল না। বদহজম হয়ে গেল। নাচ-গানের দৃশ্যও একটু চোখে পড়ার মতো বেশি।

তবে হলফ করে বলা যায়, ওটুকু বাদ দিলে এ ছবি বাজারে এন্টারটেনার ছাপ্পা দিয়ে তুমূল চলার দম রাখে। সন্দেহ-সন্দেহ গন্ধটা বেশ ছড়িয়ে থাকে সারা ছবি জুড়েই। শেষ হাসিটা হাসবেন কে, লড়াইটা আবার কোথা থেকে শুরু হবে, সেটা দেখার জন্যই দর্শক সিট ছেড়ে উঠতে পারবেন না। সবার উপরে অত্যাধুনিক সিনেমাটোগ্রাফি এই রেসের উইনার। আপাদমস্তক স্লিক অ্যান্ড স্মার্ট ছবি বলতে যা বোঝায়, রেস টু সেটাই। আগের ছবিকেও ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।

.