পল্লবী চট্টোপাধ্যায়: দাদার জন্মদিন ৩০ সেপ্টেম্বর আর আমার জন্মদিন ৩০ অক্টোবর। প্রতিবছরই আমার জন্মদিনে নয় লক্ষ্মী পুজো, নয় কালী পুজো থাকত। তাই ছোটবেলায় কখনও আমার জন্মদিন সেভাবে সেলিব্রেট করা হয়নি কারণ উৎসবের মাঝেই আমার জন্মদিন পড়ত কিন্তু দাদার জন্মদিন সেলিব্রেট করা হত প্রতিবছর। ছোটবেলায় আমাদের বড় পরিবার ছিল। ওর জন্মদিনে স্কুলের বন্ধুরা, পরিবারের বাচ্চারা সকলে আসত। আমার দায়িত্ব থাকত ওর উপহারগুলো সামলানো। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আমার নজর থাকত জন্মদিনে উপহার পাওয়া চকলেট বক্সের দিকে। বাকি উপহার নিয়ে আমার কোনও ইন্টারেস্ট ছিল না। কিন্তু নজর থাকত চকলেটের উপর। আমি উপহারের মধ্যে থেকে চকলেট বাক্সগুলো নিয়ে নিতাম। আমি ভাবতাম ওগুলো আমারই। চকলেটের উপর শুধু আমারই অধিকার। আমার মা সারাজীবন বলত, বাড়িতে যা কিছু আসবে তা দুভাগে ভাগ করা হবে। দাদার একটা জামা হলে আমারও একটা জামা হবে, আমার একটা পেনসিল হলে ওরও হবে। তাই উপহারগুলোকেও দুভাগে ভাগ করা হতো। আমার ঠাকুরদারও একই দিনে জন্মদিন। আমরা দুপুরবেলা ঠাকুরদার সঙ্গে কেক কেটে সেলিব্রেট করতাম আর বিকালবেলা বন্ধুরা আসত, আমরা বিভিন্ন গেম খেলতাম। 


এরপর দাদা যখন অভিনয়ের জগতে এলো, তখন জন্মদিনের সেলিব্রেশনটা একটু বদলে গেল। জন্মদিনে চিঠি আসতে শুরু করল ফ্যানেদের। রক্ত দিয়ে লেখা চিঠি আসত। তখন প্রচলন ছিল সবাই পোস্টকার্ডে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠাত। এখনকার মতো সেলফি বা ডিজিটাল উইশ ছিল না। একদিন বসে সেইসব চিঠির উত্তর দিত দাদা। নিজের ছবিতে অটোগ্রাফ করে ফ্যানেদের পাঠাত। এছাড়াও জন্মদিনের দিন বহু ফ্যান বাড়ির সামনে আসত। তারা অবশ্য এখনও আসে, ফ্যান ক্লাবের লোকজন বাড়িতে আসে। তখন জন্মদিনে পার্টি হত কিন্তু তখন পার্টির কনসেপ্ট আলাদা ছিল। সেইসব পার্টি অনেক ঘরোয়া ছিল। 


আরও পড়ুন: বিদেশের মঞ্চে সম্মানিত Debojyoti Mishra, পেলেন সেরা সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার


সময়টা বদলে গেছে। ওগুলো এখন খুব মিস করি, মাঝে মাঝেই আমরা পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করি। আস্তে আস্তে আমাদের পরিবারও বড় হয়েছে। এখন আমাদের পরিবার ইন্ডাস্ট্রির লোকজন, মিডিয়ার বন্ধুরা, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে রয়েছে। তাঁদের নিয়েই আমরা সেলিব্রট করি। জন্মদিন বললেই উপহারের কথা আসে। বরাবরই দাদাকে গিফট দেওয়া খুব মুশকিল, তাই আমরা সবসময়ই ওকে জিগেস করে নিই যে জন্মদিনে কী নিবি। আমি জানি দাদার পছন্দের কিছু জিনিস আছে,একটু অন্যরকম জুতো, অন্যরকম টিশার্ট পছন্দ করে,এগুলোই ওকে গিফট করব। 


তবে গত বছরের মতো এবছরও আমাদের সেলিব্রেশন করার মতো মানসিক অবস্থা নেই। কাছের মানুষ অনেককেই হারিয়েছি এই দুবছরে। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সেলিব্রেশনের কথা ভাবতে পারছি না। একদিন সবাই একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করব ওটাই আমাদের সেলিব্রেশন। এছাড়া দাদা বেশ কিছু এনজিওর সঙ্গে যুক্ত, এই দিনটায় ও তাঁদের কাছে যায় দেখা করতে। ফ্যানেরা যাঁরা আসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে। এছাড়া সন্ধেবেলা নিজের টিমের সঙ্গে কেক কাটে, সময় কাটায়।
 
এখন অনেকেই বলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) ইন্ডাস্ট্রির দাদা। এই যে সবার দাদা, এই কথাতেই আমার আপত্তি। ও এমন একজন নায়ক যাঁকে নিয়ে একই বাড়ির বিভিন্ন প্রজন্ম স্বপ্ন দেখে, ওর ইমেজ সবসময়ই রোমান্টিক। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে  বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ ওকে নানা ইমেজে দেখেছে কিন্তু দাদা শুধু আমার,এতগুলো বোনকে সামলানো আমার পক্ষেও সম্ভব নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির এমনকি ইন্ডাস্ট্রির বাইরেরও অন্যদের অভিভাবক হয়ে উঠেছে ও, কিন্তু দাদা শুধু আমার। ও এমনই একজন মানুষ যাঁর যখন প্রয়োজন হয়েছে ও তার পাশে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু সবার দাদা নয়।  


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)