জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বাদল সরকারের বহু চর্চিত জনপ্রিয় নাটকের  অবলম্বনে তৈরি 'শহরের উপকথা'-র মতো প্রশংসিত ছবি বানানোর পর, এবার পরিচালক বাপ্পা শুটিং শেষ করলেন তাঁর পরবর্তী ছবির। আগের ছবিটি সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রেক্ষিতে বানিয়ে ছিলেন। এবার আর্থিক দৈনতা ও মর্মান্তিক জীবন সংঘর্ষে যুযুধান তাঁর মূল কাহিনী। ছবিতে প্রধান চরিত্রে দেখতে পওয়া যাবে রাহুল অরুণোদয় ব্যানার্জি, দেবলীনা দত্ত এবং অন্যন্যদের।
বিশ্বকর্মা অর্থাত্ রাহুলের চরিত্রটি একজন ফটোগ্রাফার ও আর্টিস্টের। কিন্তু তাঁর নান্দনিক বোধ তার চারপাশের কেউই বুঝতে পারে না। সকলেরই মনে হয় সে খুব খারাপ একজন ফটোগ্রাফার, তাই তিনি উপেক্ষিত। তাঁর কাজ জোটে না, জোটে কেবল মৃত মানুষের ছবি তোলার বায়না। অর্থকষ্ট সামলেও কারখানায় কাজ করে সংসার টানে বিশ্বকর্মার স্ত্রী মালা অর্থাত্ দেবলীনা দত্ত। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Prabhat Roy: ২ সপ্তাহ পর বাড়ি ফিরলেন প্রভাত রায়, এখন কেমন আছেন পরিচালক?
প্রবল টানাটানির মধ্যেও কোথাও একটা তার স্বামীর প্রতি একধরণের সম্মান মেশানো মমত্ববোধ কাজ করে। কিন্তু বিশ্বকর্মা নিজের মনোজগতে ক্রমশ একা হতে শুরু করে। গল্পের পটপরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে একটা সময়ে, মালা আর বিশ্বকর্মা এসে পৌঁছয় এমন একটা জায়গায় যেখানে দুজনকেই দুটি চূড়ান্ত অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কি সেই সিদ্ধান্ত? কি হয় তাদের পরিণতি? একজন শিল্পী কি এই সময় দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের শিল্প বোধ নিয়ে টিকে থাকতে পারেন? শান্তনু নাথের মর্মস্পর্শী লেখায়, নির্দেশক বাপ্পা বুনেছেন একজন অসহায় শিল্পীর জীবনের এই ঘাত প্রতিঘাতেরই গল্প।
আমি বাপ্পা, রবীন্দ্র ভারতী থেকে নাটক বিভাগে মাস্টার্স করেছি , থিয়েটার করে চলেছি প্রায় ১০বছর ধরে। সেখান থেকেই শিল্পী মনের বাস। প্রথম সিনেমাও শহরের উপকথা, বাদল সরকারের নাটক নিয়েই; আদ্যপ্রান্ত নাটক নিয়েই থাকি। সিনেমা বানানোর ইচ্ছে হয় তখনই, যখন এমন কোনো ভাবনার সঞ্চার হয় মনে, যে এই কাজটা করা উচিত নিজের জন্য না, সমাজের জন্য। সেখান থেকেই এই নেগেটিভ সিনেমাটি বানানোর সীদ্ধান্ত। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে থেকেই বড় হয়েছি, তাই শিল্পীর একটা অন্যরকম লড়াই দেখেছি; আর্থিক সংকটের সংঘর্ষ দেখেছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে, পরবর্তী সময় যেটা আমাকে নাড়া দিয়েছে সেটা হলো...যে কোনো সৃষ্টির একটা পরিচিতি লাগে...না হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই শিল্প সৃষ্টি হারিয়ে যায় বা বৃথা বলে প্রমাণিত হয়।। সেখান থেকেই এই গল্পের চরিত্র বিশ্বকর্মা (রাহুল ব্যানার্জী), তাঁর শিল্পকলার স্বীকৃতি চায়। যাকে সাহায্য করে চলে তার স্ত্রী মালা (দেবলীনা দত্ত)।
পরিাচালক বাপ্পা জানিয়েছেন, 'আমরা সবাই লড়াই করছি প্রতিনিয়ত। কেউ সন্মান, কেউ বা যথার্থ সান্মানিকের জন্যে। কিন্তু এই লড়াই থেমে থাকে না এই গল্পে। এক অন্য ভাবধারার জন্ম নেয় শান্তনু নাথের এই গল্প, যা আমাকে ভীষণ ভাবে ছুঁয়ে গেছিলো শিল্পী হিসেবে। সেই পরিচালকের শিল্পী সত্ত্বাবোধ দর্শকদের দেখাতে চায় যে, 'শিল্পী মরে যেতে পারে কিন্তু তার সৃষ্টি চিরকাল জীবিত থাকবে।' এইটাই একমাত্র সত্য। রাহুল দা, দেবলীনা দি, শ্রীলেখা দির মতো ইন্ডাস্ট্রির প্রখ্যাত শিল্পীদের ও পুরোনো বন্ধুদের পাশে পেয়ে সত্যিই কৃতজ্ঞ আমরা এই কঠিন আউটডোর শুটিং সেরে। 
মূল চরিত্রায়নে - রাহুল দা 'বিশ্বকর্মা,' তার স্ত্রী 'মালা' দেবলীনা দি, শ্রীলেখা দি একজন বারবণিতা, রানা দা রাহুল'দার মিডিয়া বস 'সীতারাম,' আমাদের স্ক্রিপ্ট রাইটার শান্তনু নাথ রাহুল দার বাল্য বন্ধু 'পল্টু' আর  রিমি দেব পল্টুর বান্ধবী 'রাধা', পেশায় যৌনকর্মীর রোলে, দারুণ অভিনয় করেছেন।'
প্রধান চরিত্রে থাকা রাহুল এই ছবি নিয়ে জানিয়েছেন, 'নেগেটিভ ছবিটা আমার তো নিজের করে খুব ভালো লেগেছে,তার একটা কারণ হচ্ছে এর অনেক গুলো স্পেস আছে,আর গল্পটা লিনিয়ার স্ট্রাক্চার ফলো করলেও কখনো নন'লিনিয়ার হয়ে উঠেছে, আবার কখনো থট স্পেসে চলে গেছে। আর সেই স্পেস গুলোতে অভিনয় করা অভিনেতা হিসেবে খুব চ্যালেঞ্জিং ছিলো, এবং এই ছবিতে আরও একটি ইন্টারেস্টিং জিনিস হচ্ছে পিতা-পুত্র দুটি চরিত্রেই আমি অভিনয় করেছি সেটা মজা লেগেছে করতে। বাপ্পার সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় কাজ। বাপ্পার যেটা ভালো লাগে ও নিজের টিম নিয়ে খুব গর্বিত ও নিজের টিম কে খুব প্রাধান্য দেয় খুব ইয়ং একটা টিম এবং বাপ্পা নিজেও খুব ইয়ং । আমরা প্রচুর প্রেসারে কাজ করেছি, প্রচুর মজার মধ্যেও কাজ করেছি । গোটা উনিটের পুরো পরিবেশটার মধ্যেই একটা মজা ছিলো। আমাদের স্বল্প বিনিয়োগের সিনেমা, ফলে মূলত আউটডোর লোকেশনে ওয়ার্কিং আওয়ার থেকে শুরু করে সব কিছুই একটু বেশি মাত্রায় প্রেশার বেশি ছিলো, লাগ্জারী যে খুব ছিলো, তা নয়। কিন্তু সত প্রয়াসের কোনো খামতি ছিলো না। যদি পরিবেশ ভালো থাকে, তবে সমস্যাগুলো ছোট হয়ে যায়। আর আমার চরিত্রটি - "বিশ্বকর্মা" এতো লেয়ার্ড একটা চরিত্র এবং তার এতো বিচিত্র একটা সাইকোলজিকাল জার্নি আছে পুরো ছবি জুড়ে, সেটা আমার দারুণ লেগেছে।'


আরও পড়ুন: Pariah: বাংলার বক্স অফিসে বাজিমাত, এবার ভিনরাজ্যে পাড়ি 'পারিয়া'র
অভিনেত্র দেবলীনা তাঁর এই ছবিতে কাজ নায়ে বলেছেন, 'এই নেগেটিভ এর স্ক্রিপ্ট সবার প্রথম আমাকে আকর্ষীত করেছিলো, যখন পরিচালক বাপ্পা গুল্পটা শোনায়,তখনই আমি প্রযেক্ট'টা করতে রাজী হই। এর আগেও ত্রিভুজ নামে একটি ছবি করেছি বাপ্পার সঙ্গে, সেখানেও স্ক্রিপ্ট খুবই ভালো ছিলো। আর এই গল্পে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বকর্মার সাথে মালা'র চরিত্রের কেমিস্ট্রি, এরপর শ্যুটিং ফ্লোরে খুবই ভালো পরিবেশ ও  সহ অভিনেতা পেয়েছি, যাতে আমার কাজ করতে আরও সুবিধা হয়েছে। এরপরেও যেটা বলার সেইটা হলো, পরিচালকের প্রোডাকশন ডিজাইন নিয়েও একটা পরিষ্কার চিন্তা ভাবনা পেয়েছি, সেইটা সেট, লোকেশন, পোশাক বা রূপসজ্জা সবেতেই। এই গল্প সত্যিই বিরল, আশা করব, দর্শকের মন ছুয়ে যাবে। এছাড়াও খুবই সুন্দর গান রয়েছে। আসলে গোটা ছবিটাই একটা পাওয়ার প্যাকেজ। সব কিছু উপাদান রয়েছে যা একটা সিনেমাকে দর্শকের হৃদয়ে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে।



(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)