Ujjaini Mukherjee : প্রতিভা না শরীর, গাইতে গেলে কোনটা জরুরি? বিস্ফোরক প্রশ্ন তুললেন উজ্জয়িনী
এরপর হঠাৎ করেই ওই সঙ্গীত পরিচালক বলে বসেছিলেন `Because I Love You`। যা শুনে ভীষণ ঘাবড়ে গেলেও শক্ত মনে পরিস্থিতি সামলান উজ্জয়িনী। বলেন `Sir, I Respect You`। আর তারপর আর কথা বাড়াননি ওই সঙ্গীত পরিচালক। উজ্জয়িনী বলেন, এরপর ধরেই নিয়েছিলাম, উনি আমাকে দিয়ে আর গান গাওয়াবেন না। তবে তার দেড়মাস পরে তিনি উজ্জ্বয়িনীকে আবারও ফোন করেন এবং ওঁর সিনেমায় গান গাওয়ান। নাহ, সেসময় অবশ্য ওই সঙ্গীত পরিচালকের ব্য়বহার অনেক বদলে গিয়েছিল বলে জানান উজ্জয়িনী।
Ujjaini Mukherjee, সৌমিতা মুখোপাধ্যায় : বয়স তখন ১৭, গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রিয়ালিটি শোয়ের হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিলেন উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়। তবে গ্ল্যামারাস মুম্বইতে গিয়ে প্রথম অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর ছিল না। বর্ষীয়ান, স্বনামধন্য সঙ্গীত পরিচালকের কাছ থেকে মিলেছিল কুপ্রস্তাব। সম্প্রতি, এক টকশোয়ে গিয়ে এবিষয়ে বিস্ফোরক গায়িকা। উজ্জয়িনী জানান, রিয়ালিটি শোয়ে তাঁর মেন্টর ছিলেন এক নামী সঙ্গীত পরিচালক। যিনি গায়িকার গান শুনে তাঁর ছবিতে গান গাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর ওঁর স্টুডিও যাতায়াত, গানের প্রস্তুতি সহ নানান কিছুর মাঝে হঠাৎ একদিন রাত সাড়ে ১২ টা নাগাদ উনি তাঁকে ফোন করে বসেন। হিজিবিজি নানান কথার মাঝে মেলে কু-প্রস্তাব। তাতে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও ওঁর পুরো কথা শোনেন উজ্জয়িনী। কী বলা উচিত না বুঝেও, পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, 'এভাবে কেন কথা বলছেন? আমি তো এমন কিছু করি না।' এরপর হঠাৎ করেই ওই সঙ্গীত পরিচালক বলে বসেছিলেন 'Because I Love You'। যা শুনে ভীষণ ঘাবড়ে গেলেও শক্ত মনে পরিস্থিতি সামলান উজ্জয়িনী। বলেন 'Sir, I Respect You'। আর তারপর আর কথা বাড়াননি ওই সঙ্গীত পরিচালক। উজ্জয়িনী বলেন, এরপর ধরেই নিয়েছিলাম, উনি আমাকে দিয়ে আর গান গাওয়াবেন না। তবে তার দেড়মাস পরে তিনি উজ্জ্বয়িনীকে আবারও ফোন করেন এবং ওঁর সিনেমায় গান গাওয়ান। সেসময় অবশ্য ওই সঙ্গীত পরিচালকের ব্যবহার অনেক বদলে গিয়েছিল বলে জানান উজ্জয়িনী।
এ ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা Zee ২৪ ঘণ্টার কাছেও স্বীকার করে নেন গায়িকা উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায়, সরব হন #MeToo নিয়ে। প্রশ্ন করা হয়, অভিনয় জগতে প্রায়ই কাস্টিং কাউচের কথা শোনা যায়, তাহলে সঙ্গীতের জগতেও একইরকম আছে? উজ্জয়িনীর সপাট জবাব ছিল, '১০০ শতাংশই আছে। আমি নিজে এর ভুক্তোভোগী, এমনও হয়েছে মায়ের সঙ্গে স্টুডিওতে গিয়েছি, সেখানেও মিউজিক ডিরেক্টর কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। তবে খুব হেঁয়ালি করে। তারপর ওঁর সঙ্গে আর কাজ করি নি। আমার মা ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন। ৫০ ঊর্ধ্ব এক ব্য়ক্তি প্রেম নিবেদন করে বসেছেন, অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছেন, এমনও হয়েছে। তখন সেগুলোতে ভীষণই ভয় পেতাম। ওই বয়সে সেগুলো সামলানো আমার পক্ষে খুব মুশকিল ছিল। আমি তখন মাত্র ১৭।' তবে উজ্জয়িনী জানান, 'আসলে হাজারও নেগেটিভের মধ্যে পজেটিভও থাকে। এমন মানুষও পেয়েছি, যাঁরা গুরুর মতো করে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। আশীর্বাদও পেয়েছি অনেক।'
আরও পড়ুন-নস্টালজিয়া উস্কে ফের পর্দায় ফিরছে 'অরণ্যের দিনরাত্রি', অভিনয়ে জিতু
আরও পড়ুন-'শাড়ি পরিয়ে, গায়ে গরম মোম ঢেলে লাগাতার ধর্ষণ করত কাকা'
স্কুলে পড়া মেয়েটির মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়ে মনে হয়েছিল দুনিয়াটাই আলাদা। কেন? ১৭ বছর বয়সে মুম্বইয়ে পাড়ি দি। তখন আমি স্কুলে পড়া, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। যে হঠাৎই মুম্বইয়ের ও গ্ল্যামস্যাম লাইফে গিয়ে পড়ে। জীবন যেন একদম নতুন করে শুরু হয়। ওখানে গিয়ে শিখলাম প্রচুর লোকের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। জুনিয়র, সিনিয়ারদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। এত সেলিব্রিটিদের সান্নিধ্যে আসা। সারা জীবন যাঁদের টিভিতে দেখেছি, তাঁদের সামনে থেকে দেখলে কী হয়, কীভাবে কথা বলতে হয়। কীভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে হয়। স্কুলে পড়া মেয়ে থেকে হঠাৎ করে ক্যামেরা ফ্রেন্ডলি হয়ে ওঠা। সবটাই নতুন।
শোনা যায়, মুম্বইয়ে থেকে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, আর বাইরে থেকে গিয়ে জমি তৈরি করা ভীষণই নাকি আলাদা? সম্প্রতি স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও এনিয়ে মুখ খুলেছেন। উজ্জয়িনী বলেন, 'আমি যখন ওখানে গিয়েছিলাম, তখন পরিস্থিতি এতটাও জটিল ছিল না। এখন পরিস্থিতি অনেক বদলে গিয়েছে। আমি যখন শুরু করি, ২০০৪-২০০৫ সালে, তখন রিয়ালিটি শোয়েও এত হিজিবিজি ছিল না। হতে পারে একটা মারাঠি মেয়েতে বেশি প্রেফারেন্স পেল, কিন্তু ওই পর্যন্তই।' রিয়ালিটি শোয়েও সবকিছু আদৌ রিয়েল হয় না, স্ক্রিপ্টেট হয়, এটা সত্যি? উজ্জয়িনীর কথায়, 'আমি যখন শুরু করেছিলাম, তখন এই স্ক্রিপ্টিং বিষয়টাও ছিল না। আমি মেন্টরদের মধ্যে এমন ঝগড়াও দেখেছি যে শ্যুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে এখন তো সবকিছুই বাণিজ্যিক। আর কিছু করাওর নেই। বাণিজ্যটাই আসল। যেটা চলছে, সেভাবেই চলতে হবে। তবে রিয়ালিটি শোয়ের হাত ধরে জলপাইগুড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারি একটি মেয়েও স্টার হয়ে যাচ্ছে, পরিচিতি পাচ্ছে, সেটা তো খারাপ নয়। এখনকার মতো করে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।
কু-প্রস্তাব ছাড়া আর এমন কি কোনও ঘটনা ঘটেছে, যেটাতে খুব ভয় পেয়ে গেছো? গায়িতা জানান, ঘটনা তো রোজই ঘটে । তবে সবটাতে যৌন ইঙ্গিত থাকে না। তবে অনেক কারণেই এখন অনেকেরই হয়ত মনে হয় এই ইন্ডাস্ট্রিতে থাকব না। আজকাল ফেসবুকে যে যা পারে লিখে দেয়। যাকে যা খুশি বলে দেয়। তবে আমার চোখের সামনে যেটা থাকে সেটা হল মানুষকে গান শোনাব, কোনও কিছুতে পিছিয়ে যাব না।