সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: মুম্বই ও কলকাতায় সমানতালে একের পর এক ছবিতে ও ওয়েব সিরিজে নজর কাড়ছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়(Swastika Mukherjee)। সম্প্রতি মুক্তির অপেক্ষায় তাঁর আগামী বাংলা ছবি ‘শিবপুর’(shibpur)। ছবিতে মন্দিরার বিশ্বাসের চরিত্রে ট্রেলারে ইতোমধ্যেই দর্শকদের চমকে দিয়েছেন অভিনেত্রী। তবে শুধু অভিনয় নয়, প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেত্রী সংঘাতে প্রথম দিন থেকেই খবরের শিরোনামে এই ছবি। সেই সব নিয়েই আড্ডায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের নেটওয়ার্ক ধরা এখন মুশকিল। একদিন বম্বে,একদিন আহমেদাবাদ, একদিন কলকাতা, একেবারে যাকে বলে ‘হিল্লি দিল্লি’ করে বেড়াচ্ছেন। এই সময়টা কতটা এনজয় করছেন?


স্বস্তিকা: এনজয় তো করছিই। কিন্তু এই সময়টার একটা নিজস্ব স্ট্রাগল আছে, ঠিক অন্ধের যুদ্ধ করার মতো। কার সঙ্গে যুদ্ধ করছি জানি না, তবে করছি। আশপাশ থেকে কে কলকাঠি নাড়ছে, আদৌ এতো যুদ্ধ করে কাজটা আমি পাব কি পাব না! এখানে এত লজিস্টিক, এত কারণ, কার লবি, কার মার্কেট ভ্যালু বেশি, পরিচালক-প্রযোজক কি চায়, চ্যানেল কি চায়, এতো টাইপের সমীকরণ, কোন সমীকরণে যে কাজটা আমি পাব, সেটা জানা মুখ মুশকিল। ঐ অন্ধের যুদ্ধের করার মতো। কাজটা পেয়ে গেলে সেটা করার উত্তেজনা তো থাকে। কিন্তু সেটা পাওয়ার প্রক্রিয়াটাই খুব ক্লান্তিকর ও কষ্টকর। ২৩ বছর পর ও বম্বেতে কয়েকটা কাজ করার পরও অডিশন দিতে হয়, স্ক্রিন টেস্ট দিতে হয়।


এই অডিশন দেওয়া, স্ক্রিনটেস্ট দেওয়াটা এখনও চলছে?


স্বস্তিকা: এখন অনেকটা কমেছে। আগে হয়তো ৪০টা দিতে হত, এখন ৪টে দিতে হয়, তবে দিতে হয়।



দর্শক থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিরও অনেকে বলেন, এই যে আপনি মুম্বইয়ে বিভিন্ন কাজ করছেন, বাংলাতেও অনেক ধরনের ছবি করছেন, বিভিন্ন চরিত্রে আপনাকে ভাবা হচ্ছে, এটা আপনার অনেক বছর আগেই পাওয়ার কথা ছিল...


স্বস্তিকা: দেওয়ার দায়িত্বটা কাদের ছিল? পাওয়ার যে ছিল, তা তো আমি জানি। নিজের দক্ষতা নিয়ে আমার কোনও সংশয় কখনও ছিল না। আমি কোনও চরিত্র কতটা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারব সেটা নিয়ে আমার কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না। তবে কাজটা তো পরিচালকদের দেওয়ার কথা ছিল। অনেকেই অভিনেত্রীদের প্রশ্ন করে, কেন আপনি বেশি কাজ করছেন না? সেরকম ভালো কাজ না পেলে কী করে করব?  নির্মাতাদের তো আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে, লিখতে হবে, তাহলে তো আমি করব। এটা হল সেই রকম, যেখানে কাউকে রুখে দাঁড়াতে হবে কিন্তু সেই ‘কেউ’টা যে কে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।


শিবপুরে যে চরিত্রে আপনাকে দেখা যাচ্ছে, সেই চরিত্রের জন্য রাজি হলেন কেন?


স্বস্তিকা: এই চরিত্রটা খুবই সাহসী, প্রচুর পরত আছে চরিত্রটায়। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ, যাঁর সারাদিন হেঁসেলে কাটে। সারাদিনের খাবার বানানো, ঠাকুরের ধূপ দেওয়া, মেয়ের স্কুল, বরের অফিস, সবই তাঁকে করতে হয়। বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত বাড়িতে তো আর প্রচুক কাজের লোক রাখার ঢল নেই। একটা ঠিকের লোক থাকলেও বাড়ির সব কাজ তাঁকেই করতে হয়।


আরও পড়ুন- Chiranjit | Rituparna Sengupta: ২০ বছর পর শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবিতে চিরঞ্জিত, সঙ্গে ঋতুপর্ণা...


আর এটা যে সময়ের গল্প, সেই সময় হয়তো আরই ছিল না...


স্বস্তিকা: হ্যাঁ, সেটা তো অবশ্যই। আর শিবপুর ও কলকাতায় একটা তফাৎ তখনও ছিল, এখনও আছে। সেরকম একটা বাড়ির মহিলা সে কীভাবে তাঁর স্বামীর সঙ্গে হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রথমে সাহায্য চাইতে শুরু করে। পাড়ার দাদা থেকে শুরু করে এমএলএ, এমপি সবার কাছে সাহায্য চেয়ে যখন পায় না তখন ঠিক করে নেয় যে যা করার তা আমাকেই করতে হবে। এটা মূলত একটা বদলার গল্প কিন্তু আমরা বদলা নিতে গিয়ে যার বিরুদ্ধে লড়ছি তার মতোই হয়ে যাই। হিন্দিতে প্রচুর হলেও বাংলায় তো সেরকম গ্যাংস্টারকে নিয়ে ফিল্ম হয় না। আমার কেরিয়ারে এমনকী গত ৪০ বছরেও এমন কোনও মহিলা গ্যাংস্টার নিয়ে ছবির কথা মনে করতে পারি না। আমি সবসময়েই বলে থাকি যে, আমি কোয়ান্টিটির থেকে কোয়ালিটিতেই বেশি বিশ্বাসী। দ্বিতীয়ত, মানুষ যদি আমাকে হলে দেখতে আসে তাহলে আমার দায়িত্ব আমি নিজেকে সেইভাবে বা সেই চরিত্রে দেখাব যেভাবে তারা আগে আমাকে দেখেনি। সেই চেষ্টাতেই থাকি।


আপনার শেষ বাংলা ছবি শ্রীমতী থেকে তো মন্দিরা বিশ্বাস একেবারেই আলাদা...


স্বস্তিকা: মন্দিরা বিশ্বাসের মতো চরিত্রে আমাকে কেউ আগে দেখেনি, হয়তো দর্শকেরা ভাবতেও পারবে না, এরকম কোনও চরিত্রে আমায় দেখবে। কাজটা খুবই লোভনীয়। অভিনয়ের পাশাপাশি ঐ চমকে দেওয়াটাও আমার কাজ। অরিন্দমদা (পরিচালক) আমার সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করে। আমি স্ক্রিপ্টটা পড়েই এই কাজটায় ঝাঁপিয়ে পড়ি।


আরও পড়ুন- Mithun Chakraborty Birthday: সেটেই জন্মদিন উদযাপন, মিঠুনের জন্য পায়েস নিয়ে হাজির মমতা শঙ্কর...


ডাবিংয়ে ছবিটা দেখে কেমন লাগল?


স্বস্তিকা: আমি একদম সুপার কনফিডেন্ট যে, এটা দারুণ একটা ছবি হয়েছে। দর্শককে সিটে আটকে রাখবে। পুরোকাজটা ডাবিংয়ে যতটুকু দেখতে পেরেছি, আমার খুবই ভালো লেগেছে। একেবারে অন্যরকম একটা ছবি, খাঁটি এবং বাস্তবিক। সবাইকেই বেশ অন্যরকম লাগছে। পরম আগে পুলিস অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছে কিন্তু এতোটা গ্যাংস্টার কন্ট্রোলে যেভাবে কন্ট্রোল রাখা সেটা হয়তো করেনি। এছাড়াও খরাজদা, রণিদা, মমতা শঙ্করও স্পেশাল চরিত্রে আছে, সবারই একটা সারপ্রাইজ এলিমেন্ট আছে তবে কোনওটাই আরোপিত নয়, যথাযথ। আর এই ছবির ক্ষেত্রে আমার একমাত্র হাতিয়ার আমার পারফরমেন্স কারণ এই চরিত্রে কোনও আড়ম্বর নেই। এখানে পুরোটাতেই আমি সাদা শাড়ি পরে আছি, চুলের কোনও স্টাইল নেই, সেরকম মেকআপ নেই। হিরোইন বলেই যে একটু লিপস্টিক পরে নেব, সেসব কিছুই নেই। আমার সবসময়ে মাথায় থাকে চরিত্রটা যাতে দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে থাকে। যেন মনে না হয় যে এ বিধবা নয়।



ডাবিংয়ের পর অরিন্দমদাকে না জানিয়েই ছবির সঙ্গে গান জুড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পরিচালকের অভিযোগ। পরিচালককে এভাবে কোনও ছবি থেকে সরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে কী বলবেন?


স্বস্তিকা: আমার তো নয় নয় করেও ২৩ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে, আমি কখনও এরকম শুনিনি যে, একজন পরিচালক পুরো ছবিটা বানানোর পর তাঁকে না জানিয়ে রি-এডিট হয়েছে। আমার ভালো লেগেছিল যে ঐ পাবলিক কী খাবে, বেচতে সুবিধে হবে এই আর্জিগুলোয় ফেঁসে গ্যাংস্টার ছবিতে অহেতুক ইমোশন, অহেতুক গান, অহেতুক প্রেম ঢোকাননি। অরিন্দমদা সেই ট্র্যাপে পা না ফেলে, একটা ভালো গ্যাংস্টার ছবি বানিয়েছেন। তারপর তাঁকে বাদ দিয়ে গান ঢোকানো, আমি আগে কখনও শুনিনি। আমি গানগুলো ভালো না মন্দ সেটা বিচার করছি না। কিন্তু ছবিটারই গানের প্রয়োজন ছিল না। কাদের বুদ্ধিতে এটা হয়েছে, সেটা আদৌ ছবির জন্য দরকার কিনা, সেটা আসলে আমি কখনও দেখিনি।


ট্রেলারে আমন্ত্রণ অবধি পাননি পরিচালক...


স্বস্তিকা: আমন্ত্রণ পান কি না পান, ছবির পরিচালকের জায়গায় অরিন্দমদার নামই থাকবে। সেটা এখনও থাকবে, ছবি হল থেকে নেমে যাওয়ার পরও থাকবে। যাঁরা হলে দেখতে যাবে তাঁরা জানবে এটা অরিন্দমদারই ছবি। আমরা যাঁরা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত তাঁদের কাছে এটাই পাওনা, আমরা না থাকলেও এই কাজগুলো থেকে যাবে। তাই আমার কাছে কী কাজ করছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। নিমন্ত্রন করুক কি না করুক, ছবিটা আমাদেরই থাকবে।


এই ছবির প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌনহেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন, তা প্রমাণিত হয়,  আপনার প্রতিবাদের পরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, কিন্তু তিনি তো প্রযোজক হয়ে রয়ে গেলেন টলিউডে?


স্বস্তিকা: না, এই ঘটনার পর ছবি থেকে সন্দীপ সরকারের নাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইম্পার চেয়ারপার্সন পিয়া সেনগুপ্ত আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, ছবিতে ঐ ব্যক্তির নাম থাকবে না।


আরও পড়ুন- Debchandrima Singha Roy: ‘কাউকে মন থেকে মুছে ফেলা সহজ নয়...’ অপেক্ষায় দেবচন্দ্রিমা?


তবে আগামীতেও তো তিনি এরকম আবার করতে পারেন?


স্বস্তিকা: আমি ইম্পাতে এটা বলেছি যে, পরবর্তীকালে ইনি আবার একটা আলাদা প্রযোজনা সংস্থা খুলে ছবি করতে আসবে, আবার এই ঘটনার পুরনাবৃত্তি হতে পারে, সেটা যাতে না হয়, সেই আলোচনা হয়েছে। আসলে, আমি আমার যুদ্ধটুকুই লড়তে পারি। এরকম ধরনের লোককে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রযোজক হওয়ার জায়গা দেবে কি দেবে না সেটা ইন্ডাস্ট্রিরও দায়িত্ব, আমি তো আর সব যুদ্ধ লড়তে পারব না। এটা ইম্পারও দায়িত্ব, ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব যে আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা যেন আর কারোর সঙ্গে না হয়। ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় বড় মাথা আছে, তাঁদেরও দায়িত্ব।


আপনি কি প্রিমিয়ারে যাবেন?


স্বস্তিকা: আমি ৩০ জুন কলকাতায় থাকছি না। তবে আমি আমার বন্ধু বান্ধব পরিবারের সঙ্গে সিনেমাহলে গিয়ে এই সিনেমা দেখব। অরিন্দমদা সহ আমাদের পুরো টিম মিলেই আমরা ছবিটা দেখতে যাব। হলে সিনেমাটা দেখতেই হবে। শুধু আমি করেছি বলে না, ট্রেলার দেখেই আমি এই ছবি দেখতে সিনেমাহলে যেতাম।



আজ ফাদার্স ডে, বাবার কোন স্মৃতিগুলো ভিড় করে?


স্বস্তিকা: ফাদার্স ডে বলে নয়, প্রতিদিনই বাবার কথা মনে পড়ে। কাজ নিয়ে বাবার সঙ্গে রাতে আলোচনা হত। এখন কোনও কাজ, কোনও শট হলেই ভাবি, কাজের পরামর্শ দেওয়ার আর কেউ নেই। সারাদিনে বারংবার বাবা ফোন করত, কাজের লোক এল কিনা, কোনও কাজে গেলে পৌঁছলাম কিনা, মিটিংয়ে কী কথা হল, এখন আর সেই ফোন আসে না। যখনই ফ্লাইটে উঠি তখনই ভাবি, কেউ আর ফোন করে জানার নেই যে আমি সেফলি ল্যান্ড করলাম কিনা। এখন সব দায়িত্ব নিজেকেই সামলাতে হয়। বম্বে ও কলকাতায় দুটো সংসার, শটের মাঝে ধোপার ফোন আসছে, মিস্ত্রির ফোন আসছে। মন্দিরা বিশ্বাসের সঙ্গে আমার একটাই মিল, ও আর আমি দুজনেই ওয়ান ওম্যান আর্মি।



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)