অ্যাডিনয়েড নাকি অ্যালার্জি? জানুন শিশুদের নাক ডাকার জন্য দায়ি আসলে কোন সমস্যা
শিশুদের মধ্যেও বাড়ছে নাক ডাকার সমস্যা, বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি! ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওদের বাড়-বৃদ্ধি। অ্যাডিনয়েড নাকি অ্যালার্জি, জেনে নিন কী বলছেন ইএনটি বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিত্সক ডঃ তুষারকান্তি ঘোষ।
সুদীপ দে: ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর সমস্যা। যিনি নাক ডাকছেন, তিনি সেই মুহূর্তে বুঝতে পারছেন না ঠিকই, তবে এই নাক ডাকা তাঁর স্বাস্থ্যের পক্ষেও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মাঝবয়সীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ পুরুষ ও ২০ শতাংশ মহিলা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি সমীক্ষা বলছে, গড়ে প্রতি দু’জন ব্যক্তির মধ্যে একজন নাক ডাকেন। অনেক ক্ষেত্রে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, শরীরের মাত্রাতিরিক্ত ওজন ও অন্য বেশ কিছু কারণে মানুষের নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে।
এ তো গেল বড়দের কথা। কিন্তু ইদানীং শিশুদের মধ্যেও ক্রমশ বাড়ছে নাক ডাকার সমস্যা। বেশিরভাগ বাবা-মা-ই মনে করেন, সর্দি অথবা অ্যালার্জির কারণেই হয়তো তাঁদের সন্তান নাক ডাকে। সর্দি অথবা অ্যালার্জির কারণেই হয়তো শিশুর নাক বন্ধ, আর তাই এই ঘুমোলেই নাক ডাকছে তাঁদের সন্তান। এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই চলেই চিকিত্সা। নাজাল ড্রপ, ইনহেলার বা অ্যান্টি অ্যালার্জি ওষুধপত্রের উপর ভরসা করেই শিশুর নাক ডাকার সমস্যা নিরাময়ের চেষ্টা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে রেহাই মিললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমস্যা সারা বছরই ঘুরে ফিরে আসে। এ ক্ষেত্রেও বেশিরভাগ বাবা-মা-ই মনে করেন, তাঁদের সন্তানের হয়তো ঠাণ্ডা লাগার ধাত। আর এখানেই আপত্তি ইএনটি বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিত্সক (ENT surgeon) ডঃ তুষারকান্তি ঘোষ-এর। এ বিষয়ে Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালকে তিনি জানান, সমস্যার গভীরে গিয়ে না জেনে সঠিক চিকিত্সা করা কখনওই সম্ভব নয়।
শিশুদের মধ্যে নাক ডাকার সমস্যা হওয়ার কারণ কী?
ডঃ তুষারকান্তি ঘোষ জানান, বড়দের ক্ষেত্রে যেমন নাকা ডাকার পেছনে রয়েছে বড় টনসিল, ওজন বেশি বা বড় অ্যাডিনয়েডে (Adenoids) ইত্যিদি কারণ। তবে ছোটদের মধ্যে নাক ডাকার সমস্যা হওয়ার কারণ মূলত বড় অ্যাডিনয়েড (Adenoids) ও টনসিল। এর মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বড় অ্যাডিনয়েডই দায়ি শিশুদের নাক ডাকার সমস্যার জন্য।
কী এই অ্যাডিনয়েড (Adenoids)?
অ্যাডিনয়েড হল নাশারন্ধ্রের পেছনে আল জিভের উপরের দিকে থাকা একটি মাংসপিণ্ড বা কোষের সমষ্টি। এটি আমাদের লিম্ফয়েড সিস্টেম (lymphoid system)-এর অঙ্গ যা আমাদের সংবহনতন্ত্র এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকারী অঙ্গ বিশেষ। অ্যাডিনয়েড এবং টনসিল মুখ এবং নাক দিয়ে আসা জীবাণুকে শরীরের ভিতর প্রবেশে বাধা দিয়ে থাকে। ডঃ ঘোষ জানান, এই অ্যাডিনয়েডই আবার আকৃতিতে বেশি বড় হয়ে গেলে তা শ্বাস-প্রশ্বাসের পথে বাধা সৃষ্টি করে। যার ফলে এই নাক ডাকার সমস্যা তৈরি হয়।
কী ভাবে বুঝবেন নাক ডাকার আসল কারণ?
ডঃ ঘোষের মতে, শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ ঠিক কী কারণে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তা জানতে হলে নাকের এন্ডোসকপি (Endoscopy) করাই হল সবচেয়ে সহজ ও নিশ্চিত ভাবে জানার উপায়। কারণ, এক্স-রে করেও অনেক সময় নাশা-পথ ঠিক কী কারণে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তা বোঝা যায় না।
নাকের এন্ডোসকপি (Endoscopy) করা কি খুব কষ্টকর?
ডঃ ঘোষ জানান, নাকের এন্ডোসকপি (Endoscopy) করা একেবারেই কষ্টকর কিছু নয়। দু’বছরের শিশুরও এন্ডোসকপি (Endoscopy) করা যায়। এতে ব্যথা লাগা বা তেমন ঝুঁকির কিছু নেই। নাকের এন্ডোসকপি করলে খুব অল্প সময়ে নাক ডাকার আসল কারণ জানা সম্ভব।
এর চিকিত্সা কী ভাবে সম্ভব?
ডঃ ঘোষ জানান, অ্যাডিনয়েডের আকার যদি বড় হয়, তাহলে কুবলেশন (Coblation method) পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রায় বিনা রক্তপাতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এর অস্ত্রোপচার সম্ভব। মাত্র ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যেই অস্ত্রোপচার সেরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে রোগী। অর্থাৎ, একদিনের মধ্যেই অস্ত্রোপচার সেরে দীর্ঘদিনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারে। ডঃ ঘোষ জানান, অন্যান্য অস্ত্রোপচারে প্রচুর রক্তপাত হয়। ফলে অ্যাডিনয়েডের বাড়তি অংশ সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব হয় না। কিন্তু কুবলেশন (Coblation) পদ্ধতিতে অ্যাডিনয়েডের বাড়তি অংশ প্রায় প্রায় ১০০ শতাংশই নির্মূল করা সম্ভব।