মৌমিতা চক্রবর্তী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বিকল্প আছে। স্বপ্ন আছে উড়ানের। 


সেই বিকল্প কীসের? সেই স্বপ্ন-উড়ান কীসের? 


জানা যাচ্ছে, সেই বিকল্পে গণসংগীতকে নতুন মোড়কে হাজির করা হবে। সেই স্বপ্ন-উড়ানে থাকবেন তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা।


হঠাৎ কেন এই নতুনের ডাক?


রাজ্যে যে একমুখী রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-বিরোধ চলছে, বা বলা ভাল, দু'টি বিশেষ দলের মধ্যেই নিরন্তর দড়ি টানাটানি চলছে, সেখানে অন্যদলগুলির অস্তিত্ব যেন ক্রমশ মুছে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ঠিক সেই লগ্নেই এ শহরের নতুন প্রজন্ম নতুন স্বপ্নের উড়ানে ভর করে এক বিকল্পের সন্ধানে নামল। 


'বিকল্প আছে'-- এই শব্দবন্ধই তাই যেন অমোঘ নামভূমিকায় উঠে এল। যারা 'উড়ানের স্বপ্ন' বলে ইতিমধ্য়েই একটি গানের অনুষ্ঠানের আয়োজনও করে ফেলেছে।


এই ছাতার তলায় ব্রিগেডের আসন্ন সভায় ও সামগ্রিক ভাবে ভোটপ্রচারে নামতে চলেছেন শহরের বেশ কিছু সৃষ্টিশীল মানুষ (নেমে পড়েছেনও বলা চলে)।


বহু দশক পরে বামমনস্ক সৃষ্টিশীল মানুষজন আবার এক ছাতার তলায়। এসেছেন তাঁদের  নিজস্ব সৃষ্টিক্ষেত্রের ফসল নিয়ে। সৃষ্টির অভিমুখটা এখানে অবশ্যই রাজনৈতিক এবং প্রতিবাদী। অনেকটা গণনাট্য আন্দোলনের ছায়া দেখা যাচ্ছে এই ভাবনায়। ইতিমধ্যেই বিকল্প এই 'সঙ্ঘে'র সঙ্গে নাম জড়িয়ে ফেলেছেন শহরের বেশ কিছু বিখ্যাত মানুষ।  


আসন্ন নতুন এই সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনের শরিক হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, দেবজ্যোতি মিশ্র, বাদশা মৈত্র, অনীক দত্ত। এ-ও জানা যাচ্ছে, আছেন আরও অনেকে। দলটি এবার ব্রিগেডে সিপিএমের হয়ে প্রচার করবে। নামবে ভোটের প্রচারেও। সিপিএমের হয়ে প্রচারের জন্য এঁরা বামপন্থী ভাবনায় অনুপ্রাণিত শর্ট ফিল্ম বানাবেন, গান বাঁধবেন, নাটক রচনা করবেন।


রাজ্যে এমন সাংস্কৃতিক আন্দোলন অবশ্যই নতুন নয়। এই রাজ্য এই শহর একদা IPTA-র সাক্ষী থেকেছে। আবারও সেই আবহ তৈরি হতে চলেছে বলে অনেকেই এই নতুনতর সাংস্কৃতিক বিকল্পের সাক্ষী থাকার জন্য মুখিয়ে আছেন।



চিত্রপরিচালক  কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ক'দিন আগেই তাঁর ফেসবুকে '২৮ ফেব্রুয়ারির স্লোগান' লিখেছেন। সেখানে লেখাটি শুরুই হচ্ছে, 'ধর্ম জাত না গরম ভাত- জবাব চাইছে লাল ব্রিগেড'-এর মতো একটি পঙ্ক্তি দিয়ে। লেখাটি শেষ হয়েছে এক স্বপ্ন দিয়ে-- 'সুদিন যাপন চাবিকাঠি-আনতে চাইছে লাল ব্রিগেড'। 


আরও পড়ুন: Live: রথে ফূর্তি চলছে, জগন্নাথের রথযাত্রাকে কালিমালিপ্ত করছে : রায়গঞ্জে Mamata


বামপন্থায় বিশ্বাসী সাংস্কৃতিক মুখগুলির এক ছাতার তলায় আসা নিয়ে কী বলছেন স্বয়ং কমলেশ্বর?


কমলেশ্বর (kamaleswar Mukherjee)  বলেন, 'এমন একটা সময় এসেছে যখন প্রতিবাদ করাটা দরকার। এখানে বামমনস্ক মানুষজন এক ছাতার তলায় থাকবেন। যাঁরা যে যে বিষয়ে বিষয়ে যুক্ত তাঁরা সেই সেই বিষয় নিয়ে তাঁদের মতো করে প্রতিবাদ করবেন। এটা কখনও শো'য়ের মতো হতে পারে। কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায়, কখনও আবার প্রেস মিডিয়ার মাধ্যমেও।'


ফেসবুক পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কমলেশ্বর জানান, এটা একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত ভাবনা। তাই নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গান, কবিতা বা ওই ধরনের কিছু ভেবে এটা লেখেননি। বরং অনেকটা স্লোগানের ভঙ্গিতেই ভেবেছেন। এই লেখাটির সঙ্গে আপাতভাবে ওই সাংস্কৃতিক দলটির কোনও যোগাযোগ নেই।


'বিকল্প আছে' নিয়ে অবহিত শহরের বামনেতারও। কী বলছেন তাঁরা? সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য  মহম্মদ সেলিম (Md. Salim) জানান, ডিজিট্যালি নয়, একেবারে ফিজিক্যালি বাংলার তরুণ প্রজন্ম এই প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন। একটা গোটা প্রজন্মের সঙ্গে বামপন্থার বিচ্ছেদ ঘটানোর চেষ্টা হয়েছিল।  কিন্তু সেটা সফল হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, চারিদিকে আনএমপ্লয়মেন্ট, শিল্পায়ন নেই। নতুন প্রজন্মের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। এখানে লড়াই দরকার। আর তরুণ প্রজন্ম সেটা ইম্যাজিন করতে পারছে। 


নতুন এই সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কথাপ্রসঙ্গে সেলিম সরাসরি বাংলার রাজনীতির কথা বলেন। বলেন, সবাই মিলে যখন (এই সব) ভেজাল রথী-মহারথীদের রথ থেকে নামাতে চেষ্টা করছে তখন বিজেপি সেই সব লোকজনকে নিজের রথে তুলে নিচ্ছে। রথ দিয়ে নয়, বাংলার ভবিষ্যৎ ঠিক হবে পথ দিয়েই।


২৮ ফেব্রুয়ারির আগে এই দলটি আরও নতুন সৃষ্টি নিয়ে (পথে) নেমে পড়বে। নতুন কিছু অ্যালবাম, শর্ট ফিল্ম ইত্যাদি নিয়ে তারা সিপিএমের হয়ে সমর্থন জোরদার করার বামপন্থী দায়িত্ব পালনে অচিরেই ব্রতী হবে। 
অতএব পথের সাথীর সঙ্গে আবার পথেই দেখা হবে। 


আরও পড়ুন: একুশের ভোটে তৃণমূলের হয়ে লড়বেন না বিধায়ক রবিরঞ্জন