"শ্রীজাতর কিছু হবে না", 'প্রতিবাদী কবি'র পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
এ যেন তদন্তের আগেই রায় ঘোষণা! জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা, এফআইআরও দায়ের হয়েছে, এহেন তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়ে আগাম বেকসুর খালাসের 'রায়' শোনালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। "শ্রীজাতর কিছু হবে না", টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সঞ্চালকের প্রশ্নে সাফ জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
!["শ্রীজাতর কিছু হবে না", 'প্রতিবাদী কবি'র পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় "শ্রীজাতর কিছু হবে না", 'প্রতিবাদী কবি'র পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2017/03/24/81548-mamata-ambikesh-srijato.jpg)
কলকাতা: এ যেন তদন্তের আগেই রায় ঘোষণা! জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা, এফআইআরও দায়ের হয়েছে, এহেন তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়ে আগাম বেকসুর খালাসের 'রায়' শোনালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। "শ্রীজাতর কিছু হবে না", টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সঞ্চালকের প্রশ্নে সাফ জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
"আমি পুলিসকে বলেছি, গোটা বিষয়ের তদন্ত করে আমাকে একটা রিপোর্ট দিতে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, এমন কিছু হবে না যেটা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অসুবিধা হয়। ও (শ্রীজাত) লিখুক ভালো করে, এটা নিয়ে চিন্তা করার কারণ নেই", 'প্রতিবাদী কবি'র পাশে দাঁড়িয়ে এই কথাই বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন,"ও (শ্রীজাত) একটা কবিতা লিখেছে। রাজনৈতিক কবিতা। এটা একটা গণতান্ত্রিক অধিকার, ও লিখতেই পারে"।
এর সঙ্গেই বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, "উল্টে শ্রীজাতকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভীষণ বাজে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। একটা রাজনৈতিক দল এটা করছে। তাঁরা সবাইকেই হুমকি দিচ্ছে। যারা গৈরিকীকরণ করছে তাঁরাই করছে। পুলিস এফআইআর করেনি। গৈরিকীসংঘ করেছে। পুলিস তদন্ত করবে। তবে আমি বলছি শ্রীজাতর কিছু হবে না"।
সাম্প্রতিক কালে 'উগ্র হিন্দুত্ববাদী' মুখ আদিত্যনাথ যোগীকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করায় 'প্রতিবাদ' স্বরূপ 'অভিশাপ' নামের একটি কবিতা লেখেন শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুকে ওই কবিতা পোস্ট করার পর থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। 'ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করেছেন', এই অভিযোগের ভিত্তিতে কবির বিরুদ্ধে দায়ের হয় এফআইআর। রাজনৈতিক হুমকির শিকারও হন তিনি। এমন অবস্থায় কবির পাশে দাঁড়িয়ে কার্যত শিল্প চেতনার প্রতি মুখ্যমন্ত্রী একটি প্রগতিশীল ভাবনা চিন্তার নজির স্থাপন করেছেন। একথা সর্বৈব সত্য হলেও, মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থানকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে দেখছে নাগরিক সমাজের একাংশ। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন অম্বিকেশ মহাপাত্র'র বেলায় কোথায় ছিল মুখ্যমন্ত্রীর এই গণতান্ত্রিক এবং শিল্প বান্ধব ভাবনা?
পশিমবঙ্গের ইতিহাসে তথা গোটা ভারতেই অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র'র 'কার্টুনকাণ্ড' এক উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৎকালীন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন সম্পাদক মুকুল রায়কে নিয়ে কার্টুন এঁকে রাজ্যের রোষানলে পড়তে হয় অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে। 'দুষ্টু লোক ভ্যানিশ', এই কথা লেখার জন্য জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাও হয়, 'খুনের প্ল্যান করছেন' এমনও অভিযোগ করা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এরপর পুলিস, জেল, কোর্ট করে বেকুসর খালাস হন অভিযুক্ত অধ্যাপক। পরে মানবধিকার কমিশনের ভর্ৎসনাও শুনতে হয় রাজ্য প্রশাসনকে। জরিমানাও চোকাতে হয় রাজ্যকে। বিরোধীরা রাজ্যের সেই 'কলঙ্কিত ইতিহাস' টেনে এনেই শাসক দলকে খোঁচা দিচ্ছেন। 'তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী শিল্প, শিল্প নয়, খুনের চক্রান্ত', আর এখন 'বিজেপি বিরোধী' প্রতিবাদী কবিতার রচয়িতার পাশে খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণকে 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা' বলেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তবে বিজেপির এই অভিযোগে একেবারেই কর্ণপাত করছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।