নিজস্ব প্রতিবেদন: শিল্প-সংস্কৃতির উজ্জীবনে এক নয়া পন্থা। শিল্পের গণতন্ত্রীকরণ, মানে সকলের জন্য শিল্প। শিল্পের সেই সর্বজনীনতা ঘোষিত হবে কল্লোলিনী তিলোত্তমার দেওয়ালে-দেওয়ালে। দেওয়াল হয়ে উঠবে বাঙ্ময়। আর কলকাতার দেওয়ালকে বাঙ্ময় করে তোলার সেই কাজটি করবে Asian paints। তাদের সঙ্গে রয়েছে St+art India ফাউন্ডেশন। #DonateAWall এর উদ্যোগ এই অভিনব শিল্পচর্চার কাজটি সম্পাদিত হবে। আহমেদাবাদ, গুয়াহাটি, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, চেন্নাইয়ের মতো শহরে দেয়ালচিত্রনের এই কাজটি আগেই হয়েছে। এবার হবে 'সিটি অফ জয়' কলকাতায়।
শহরের দেওয়ালের পিছনের গল্পকে মূর্ত করে তোলার এই DAW ক্যাম্পেনটি সম্পন্ন হবে Asian paints ও St+art India ফাউন্ডেশন দ্বারা যৌথ ভাবে। 'সিটি অফ জয়' কলকাতার ঝুলিতে অবশ্যই রয়েছে বলার মতো ইতিহাস, গল্প, কথা-কাহিনী। #DonateAWall উদ্যোগের মাধ্যমে, এশিয়ান পেইন্টস শহরবাসীর কাছে তাই আবেদন জানাচ্ছে, তাঁরা যাতে তাঁদের বাড়ির দেওয়ালটি এই শিল্পচর্চার উদ্দেশ্যে দান করেন। তাঁদের দেওয়ালে চিত্রিত হবে এই শহরেরই মনের কথা, ভিতরের কথা, ইতিহাসের কথা, গল্পকথা।
স্থানীয়রা সাড়া দিয়েছেন। কাজও হচ্ছে। তবে পাটুলি প্রাচীরের বৈশিষ্ট্য একটু আলাদা। দৃশ্যতও এটা খুব আকর্ষণীয় প্রতিপন্ন হয়েছে।কুমারটুলির শিল্পীদের নিয়েই এই দেওয়ালে ছবি আঁকার কাজ। এবং সেই কাজটা করতে গিয়ে কুমারটুলির শিল্পীদের জীবনের ও শিল্পের গল্পের প্রেমে পড়ে যান দেওয়াল-আঁকিয়েরা। কলকাতার সিইএসসি পাটুলি সাব-স্টেশন লোকেশনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সেটা মাথায় রেখেই এই স্থানটিকে প্রাণবন্ত এবং হৃদয়গ্রাহী এক ম্যুরাল-এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। যা দেখতে গেলে কুমারটুলির কারিগরদের প্রতি উৎসর্গীকৃত।
কুমারটুলির মৃৎশিল্পীরা যে মানের কাজ করেন, তার তুলনায় স্বীকৃতি পান খুবই কম। এটাই মূলত মাথায় ছিল উদ্যোক্তাদের। তাই Asian paints ও St+art India ফাউন্ডেশন তাঁদের গৌরবান্বিত করার লক্ষ্যে দেওয়ালচিত্রের মাধ্যমে তাঁদের জীবন, কর্ম ও শিল্পকে তুলে ধরছে। এই শহরের দুর্গাপুজোর যে সাফল্য তার অনেকটাই নির্ভর করে এই মৃৎশিল্পীদের শিল্পিত দক্ষতার উপরে। অথচ সেটা সে ভাবে মনে রাখা হয় না। এই উদ্যোগ ভুলে যাওয়া বা উৎসবে পিছনের সারিতে চলে যাওয়া সেই সব মুখকে মনে করাবে।
উৎসবের ঋতুতে লোকজন নতুন পোশাক পরে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ান, দেবী দুর্গা এবং তাঁর সন্তানদের দর্শন করেন। কিন্তু এই উপভোগের মুহূর্তে তাঁদের খুব কমজনেরই মনে পড়ে এই প্রতিমা গড়ে দিয়েছে যে দক্ষ হাত তাকে। এই ম্যুরালটি তাই নাগরিকদের মধ্যে উৎসবের চেতনা জাগিয়ে তুলবে, পাশাপাশি তাঁদের মধ্যে ঐতিহ্যচেতনাকেও সমৃদ্ধ করবে; আর এভাবেই উদযাপনের নিবিড় মাধুর্য আস্বাদনের একটা আবহ তৈরি করে দেবে।
মুরালিস্ট এবং গ্রাফিত্তি শিল্পী আফজান পিরজাদে, যিনি এই নকশাটির পরিকল্পনা করেছিলেন, তিনিই ব্যাখ্যা করেছেন #DonateAWall উদ্যোগের থিম হিসাবে কেন কুমারটুলির শিল্পীদেরই বেছে নেওয়া হয়েছিল। তাঁর বক্তব্য-- 'কুমোরটুলির মূর্তিশিল্পীদের মৃত্তিকালিপ্ত শিল্পিত হাত যে ভাবে ধীরে ধীরে মাতৃপ্রতিমাকে নিঁখুত ও প্রাণবন্ত করে নির্মাণ করে তা আমাদের বিস্মিত করেছে। এই মৃৎশিল্পীরা নিশ্চিত ভাবে আশীর্বাদধন্য অথচ, তাঁরা তত আলোচিত নন। এটাই আমাকে বিচলিত করেছিল। আমি তাঁদের এই কারুকৃতিত্বে প্রভাবিত হয়েই ম্যুরালের মাধ্যমে তাঁদের সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।'
দেওয়াল-ছবি গল্প বলুক তিলোত্তমার; DonateAWall নিয়ে হাজির Asian Paints