পিয়ালী মিত্র


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

জামতারা। ঝাড়খণ্ডের ছোট্ট এই শহরের নাম দেশের প্রায় কোণে কোণে পৌঁছে গিয়েছে গত কয়েক বছরে। সৌজন্যে এখানকার সাইবার জালিয়াতদের কীর্তি। কুখ্যাত সেই ঠকবাজদের কার্যকলাপ এমনই মাত্রা ছাডায় যে তা নিয়ে আস্ত একটা ওয়েব সিরিজও তৈরি হয়ে গিয়েছে।  


সেই জামতারা(Jamtara Gang) গ্যাংয়ের মতোই গত এক দেড় বছরে পাল্লা দিয়েছে বেড়েছে আরও এক গ্যাংয়ের দৌরাত্ব্য। ভরতপুর গ্যাং। রাজস্থানের এই জেলার সাইবার প্রতারকরা এখন ঘুম কেড়েছে দেশের একাধিক রাজ্যের পুলিসের।



ভরতপুর গ্যাংয়ের কার্যকলাপ প্রথম সামনে আসে করোনার প্রথম ওয়েভে লকডাউনের(Lockdown) সময়। বিদেশি মদ হোম ডেলিভারির নামে টাকা হাতানোর মাধ্যমে কাজ শুরু করে গ্যাং ভরতপুর। তারপর বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে সেনা অফিসারদের নাম ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করে জিনিস বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আম আদমির পকেট কাটতে শুরু করে।



আরও পড়ুন-Schizophrenia'য় আক্রান্ত কেন্দ্র, তাই এ দেশে করোনার বাড়বাড়ন্ত: Amartya Sen



কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পুলিসের কপালে চিন্তার চওড়া ছাপ পড়ে যখন ভরতপুর গ্যাং খোদ পুলিসের ঘরে সিঁদ কাটতে শুরু করে। স্পষ্ট করে বললে পুলিসের নামে ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করে প্রতারণার নয়া জাল যখন বিস্তার করে।



চেন্নাইয়ের পুলিস কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার থেকে এডিজি পদের অফিসার মিলিয়ে তামিলনাড়ু, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ মিলিয়ে শুধু দক্ষিণ ভারতেরই ৪০০টিরও বেশি পুলিস কর্মীর ভুয়ো ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে প্রতারকরা। জাল ছড়ায় নয়া দিল্লিতেও 


বাদ নেই এরাজ্যও। এখানে আইপিএস অফিসার Sanjay Singh, মুকেশ কুমার, সুমিত কুমার , নাগেন্দ্র ত্রিপাঠ, কুণাল আগরওয়াল, প্রবীণ ত্রিপাঠী, সুকেশ জৈন, অনুপ জওয়াসওয়লের মতো তাবড় আইপিএস থেকে ইনস্পেকটর, সাব ইনস্পেক্টরদের নামে ভুয়ো প্রোফাইল খোলা হয়েছে।



সম্প্রতি একই  ঘটনা ঘটেছে ডিজি ইবি গঙ্গেশ্বর সিং, এসডিপিও কাকদ্বীপ অনিল রায়, আইসি জয়নগর অতনু সাঁতরা, ওসি বেনিয়াপুকুর অলোক সরকারের মতো আরও কয়েকজন অফিসারের সঙ্গে। 


সব মিলিয়ে এরাজ্যে দুশোরও বেশি অফিসারের নামে ফেক প্রফোইল খুলে টাকা হাতানোর চেষ্টা হয়েছে। 
 
কী কায়দায় অপারেশন চালায় এই ভরতপুর গ্যাং?


পুলিস অফিসারদের ছবি ডাউনলোড করে তাঁদের নামে ভুয়ো প্রফোইল তৈরি। তারপর সেই অফিসারের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা লোকজনকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। ধীরে ধীরে আলাপ জমিয়ে অসুস্থতা, করোনা, লকডাউনের মতো নানা অজুহাত বা সমস্যার কথা বলে টাকা ট্রান্সফার করতে বলা। সেই ফাঁদে কেউ পা দিলেই কেল্লা ফতে।


আরও পড়ুন-‘শুভবুদ্ধির উদয় হোক, ঘরে ফিরুক Soumitra’, বিষ্ণুপুরের সাংসদের কাছে আর্জি Sujata-র


এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি ভরতপুর গ্যাংয়ের আরও এক মোডাস অপারেন্ডি সামনে এসেছে। এখানেও হাতিয়ার সেই ভুয়ো প্রফোইল। সুন্দরী মহিলাদের ছবি দিয়ে ভুয়ো প্রোফাইল থেকে ফেসবুকে বন্ধুত্বের হাতছানি। তারপর ভিডিয়ো কলের সময় অশ্লীল ভিডিয়ো দেখানো হচ্ছে। সেই মূহুর্তটিকে রেকর্ড করে রেখে দিয়ে পরে ব্ল্যাকমেল। অভিনেতা অঙ্কুশের আপ্ত সহায়কের সঙ্গে ঘটে সেই ঘটনা। যার জেরে মাস দুয়েক আগে আত্মঘাতী হন নারকেলডাঙার বাসিন্দা ওই যুবক। দিন কয়েক আগে পাটুলির থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এক যুবক। তাঁকেও একই কায়দায় ব্ল্যাকমেল করে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে বলে পুলিসে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। যার পিছনেও উঠে এসেছে সেই ভরতপুর গ্যাংয়ের হাত।


দিল্লি, চেন্নাই পুলিসের হাতে মাস কয়েক আগে ধরা পড়ে এই গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য। সেখানকার পুলিসের সঙ্গে কথা বলে কলকাতা পুলিস জানতে পেরেছে, এই চক্রে রয়েছে ট্রাক ড্রাইভার থেকে নাবালকরাও। লকডাউনের কাজ হারিয়ে অনেকে সাইবার জালিয়াতিতে হাত পাকানো শুরু করে। জামতারা গ্যাংয়ের মতোই ভরতপুর গ্যাংও ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ভুয়ো সিম কার্ড দিয়ে চালায় এই প্রতারণার কারবার। ফলে অনেক সময় অধরা থেকে যাচ্ছে আসল অভিযুক্ত। আলওয়ার, ভরতপুরের এক ডজনেরও বেশি গ্রাম থেকে অপারেট করে এই চক্র। যেগুলি হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ বর্ডার এলাকা। ফলে পুলিশ অভিযানে গেলে প্রতারকরা বাইক নিয়ে ওইসব রাজ্যে ঢুকে পড়ে। ফলে বহু ক্ষেত্রে খালি হাতে ফিরতে হয় বিভিন্ন রাজ্যের পুলিসকে।



(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)