সরকারের মদতের সর্বনাশা সারদার চিটফান্ড চিৎপাত
সারদা গোষ্ঠীর মতো ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার কোনও সরকারি অনুমোদন ছিল না বলে জানা গেছে। ব্যাঙ্কিং সংস্থা না হওয়ায় আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন দরকার। বাজার থেকে শেয়ার, ডিবেঞ্চারের মাধ্যমে টাকা তুলতে গেলেও সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবির অনুমোদন প্রয়োজন। বাজারে বীমা সংক্রান্ত পলিসি বিক্রি করতে গেলে ইন্সিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি বা আইআরডিএর অনুমোদন প্রয়োজন। রাজ্যে আর্থিক লেনদেনের জন্য পশ্চিমবঙ্গে সরকারের অধীন রেজিস্ট্রার অব কোম্পানির নথিভুক্তিরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু উপরোক্ত কোনটিতেই নথিভুক্ত নয় সারদা গোষ্ঠী।
সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারেন সেজন্য নোটিস জারি করা হল। আজ একথা জানিয়েছেন বিধাননগর পুলিসের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ। সুদীপ্ত সেনের সংস্থার এবং তাঁর ব্যক্তিগত একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তার সম্পত্তিও। সারদা গোষ্ঠীর এক অধিকর্তা মনোজ কুমার নাগেলকেও আজ গ্রেফতার করেছে পুলিস।
সারদা গোষ্ঠীর মতো ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার কোনও সরকারি অনুমোদন ছিল না বলে জানা গেছে। ব্যাঙ্কিং সংস্থা না হওয়ায় আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন দরকার। বাজার থেকে শেয়ার, ডিবেঞ্চারের মাধ্যমে টাকা তুলতে গেলেও সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবির অনুমোদন প্রয়োজন। বাজারে বীমা সংক্রান্ত পলিসি বিক্রি করতে গেলে ইন্সিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি বা আইআরডিএর অনুমোদন প্রয়োজন। রাজ্যে আর্থিক লেনদেনের জন্য পশ্চিমবঙ্গে সরকারের অধীন রেজিস্ট্রার অব কোম্পানির নথিভুক্তিরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু উপরোক্ত কোনটিতেই নথিভুক্ত নয় সারদা গোষ্ঠী।
যদিও সারদা গোষ্ঠীর তরফে দাবি করা হয়েছে, যেহেতু কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকে নথিভুক্তি আছে, ফলে অন্যকিছুতে নথিভুক্তির প্রয়োজন নেই তাদের। কিন্তু সম্প্রতি সাহারা গোষ্ঠীর একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, শুধুমাত্র কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকে নথিভুক্তি নয় সেবিতেও নথিভুক্তি প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন উঠছে রাজ্য সরকার এই ধরনের চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিতে পারে? রাজ্যের ক্ষমতা কতটা রয়েছে? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজ্যের হাতে আর্থিক অপরাধ দমনের কোনও আইন নেই। যেহেতু শেয়ার, ডিবেঞ্চারের এর মাধ্যমে টাকা তুলছে সারদার মত ভুঁইফোঁড় সংস্থা। তাই এই সমস্ত সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক জালিয়াতি, ফৌজদারি মামলা দায়ের হতে পারে।
গতকালের পর আজও রাজ্যের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন চিট ফান্ড সংস্থা সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট এবং গ্রাহকরা। কেন্দ্র এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায় দেশজুড়ে বিপদের মুখে পড়েছে চিটফান্ড সংস্থাগুলি। এঁদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সঞ্চয় প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা তোলা হচ্ছে, কিন্তু ফেরতের নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। বন্ধের মুখে সুদীপ্ত সেনের মালিকানাধীন এ রাজ্যের চিটফান্ড সংস্থা সারদাও।
আজ দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে সারদা অফিসে এজেন্ট এবং গ্রাহকদের মধ্যে বচসা এবং হাতাহাতি হয়। গতকাল সল্টলেকে সারদার তিনটি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান এজেন্টরা। এই এজেন্টদের অনেকে রাজ্যের বাইরের। চিটফান্ট প্রকল্পে এঁরা টাকা সংগ্রহ করতেন গ্রাহকদের থেকে। তাঁদের অভিযোগ, সংস্থার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি ফিরতে পারছেন না। কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখান এজেন্টরা। হাওড়ার ডোমজুরে দিলীপ পাল নামে সারদা গোষ্ঠীর এক এজেন্টের বাড়ি ঘেরাও করে রাখেন কয়েকশো গ্রাহক। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরে রাস্তা অবরোধ করেন সারদা গোষ্ঠীর এজেন্টরা। ডায়মন্ডহার, নিশ্চিন্দপুরে সারদার অফিস বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এজেন্ট এবং গ্রাহকরা বিক্ষোভ দেখায়। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরাতেও বিক্ষোভ হয়।
চিটফান্ড সংস্থা সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং সরকারের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই গোষ্ঠীর হাতে টেলিভিশন এবং সংবাদপত্র মোট দশটি সংবাদমাধ্যমের মালিক এই সংস্থা। পর্যবেক্ষকদের মতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের প্রচারকের ভূমিকা নিয়েছে এই সংবাদমাধ্যমগুলি। চিটফান্ড সংস্থাটির সিইও তৃণমূল কংগ্রেস দলের একজন রাজ্যসভার সাংসদ।
নির্বাচনের আগে বামদলগুলি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বারবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়। তাদের অভিযোগ ছিল, বেআইনিভাবে সারদা গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে শাসকদলের হয়ে প্রচার করছে। সেই সময় তাদের অভিযোগ ছিল সাধারণ মানুষের থেকে টাকা তুলে বিভিন্ন প্রকল্পে যে পরিমাণ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে তা অসম্ভব। এমনকী শাসকদলের এক সাংসদ সোমেন মিত্র সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে নিজের দলের লোকজনদের যোগাযোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন। যে চিঠিতে তিনি জানান, রাজ্যের হাজার হাজার মানুষের টাকা আত্মসাত করছে সারদার মতো বেশকিছু সংস্থা।
কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠার পরও কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির রমারমা ঠেকাতে ২০১০ সালে বিধানসভায় একটি বিল আনে ততকালীন বাম সরকার। বিলটি এখনও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর সেই বিলটির ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলেই অভিযোগ।