পুরমন্ত্রীর বদান্যতায় গার্ডেনরিচে রমরমা গুণ্ডারাজ
গার্ডেনরিচে পুলিস খুনের ঘটনায় উঠে আসছে একের পর এক তৃণমূল নেতার নাম। তাঁরা প্রত্যেকেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ ও স্নেহধন্য বলেই অভিযোগ। মুন্না, সানু,অনিল, টাব্বু সহ এলাকার ত্রাস সবার মাথাতেই যে ববি হাকিমের স্নেহের হাত হয়েছে এখন প্রকাশিত সেই খবরও। ফলে দলের তরফ থেকে বিষয়টিকে আর কোনও ভাবেই চেপে রাখা যাচ্ছে না।
গার্ডেনরিচে পুলিস খুনের ঘটনায় উঠে আসছে একের পর এক তৃণমূল নেতার নাম। তাঁরা প্রত্যেকেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ ও স্নেহধন্য বলেই অভিযোগ। মুন্না, সানু,অনিল, টাব্বু সহ এলাকার ত্রাস সবার মাথাতেই যে ববি হাকিমের স্নেহের হাত হয়েছে এখন প্রকাশিত সেই খবরও। ফলে দলের তরফ থেকে বিষয়টিকে আর কোনও ভাবেই চেপে রাখা যাচ্ছে না।
পুলিস কমিশনারকে বদলি করে এবং সিআইডিকে তদন্তভার দিয়ে অভিযুক্তদের আড়াল করা হয়েছে। কিন্তু পুরমন্ত্রীর মদতেই যে এই বাহিনীর এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠা তা আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না। হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে পুলিসকর্মী খুনের দিন তাঁর তত্পরতা ছিল চোখে পড়ার মত। মুন্না ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর এবং ১৫ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যান।
দুহাজার দশে হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদ দখলে কংগ্রেসের মোক্তারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূলের সেনাপতি ছিলেন মুন্না। সে যুদ্ধে সাফল্য দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে মুন্নার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। তারপর পুরভোটে জয় এবং একলাফে বোরো চেয়ারম্যান। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের আশীর্বাদেই এক সময় বন্দর এলাকার ত্রাস মোগলের ভাই মুন্না এখন চেয়ারম্যান সাব।
হাসান নাগভি ওরফে সানু। এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। হজ কমিটিরও সদস্য। গার্ডেনরিচের সাহি ইমামবারার প্রধান প্রিন্স নাইয়ার কাদেরের সচিব হিসাবে কাজ করতেন এই সানু। কিন্তু কাজ খোয়ান আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজও খোয়ান দুর্নীতির অভিযোগে। তারপরেই মুন্নার ডানহাত হিসাবে ফিরহাদ হাকিমের স্নেহধন্যদের তালিকায় নাম ওঠে সানুর। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পরে মেয়াদ পেরনোর আগেই ভেঙে দেওয়া হয় হজ কমিটি। নয়া হজ কমিটিতে ঢুকে পড়েন সানু। অবশ্যই পুরমন্ত্রীর সুপারিশে। বিশেষ কোটায় হজ কমিটিতে ঢুকে পড়া সানু কমিটির অফিস থেকে চারটে এসি মেশিন বাড়িতে নিয়ে চলে যান। পরে অবশ্য হজ কমিটি সেগুলি উদ্ধার করে। হজ কমিটির সদস্য হওয়ায় এলাকায় সানুর দাপটও বাড়তে থাকে। তোলাবাজি ও অবৈধ প্রমোটিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম। পুলিস খুনের ঘটনার দিন এই সানুকেই দেখা গিয়েছে মুন্নার পাশে। এমনকি পুরমন্ত্রীর পাশেও।
অনিল ইকবাল। মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার ছেলে। একদম বাপকা বেটা। ঘটনার দিন বাবার পাশেই সবসময় দেখা গিয়েছে তাঁকে। বারবার হামলার নেতৃত্বে ছিল অনিল। তাপস চৌধুরীকে গুলি করার সময়ও কাছেই ছিল সে। এলাকায় বেআইনী নির্মাণ ও তোলাবাজির একাধিক অভিযোগ আছে অনিলের বিরুদ্ধে। মাসখানেক আগে কলকাতা পুলিসের ডিসি বন্দরের অফিস থেকে এক কর্মী যান আয়রন গেট এলাকায় অনিলের একটি বেআইনী নির্মাণের ছবি তুলতে। সেই পুলিসকর্মীকে বোরো অফিসে ঢুকিয়ে মারধর করেন অনিলের বাবা মুন্না। ওই পুলিসকর্মীকে উদ্ধার করতে গিয়ে মার খান গার্ডেনরিচ থানার ওসি-ও। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ঘটনাস্থলে আসেন। মুন্না বা তাঁর ছেলেক নয় ওসি-কেই গালিগালাজ করে শাস্তির হুমকি দিয়ে চলে যান ফিরহাদ।
শেষমেষ ডিসি বন্দরের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মেটে। কয়েকদিনের মধ্যেই বন্দর এলাকার অন্য থানায় বদলি করে দেওয়া হয় ওই ওসি-কে। সেসময় বোরো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেনারেল ডায়েরিও করেছিলেন ওই ওসি। কিন্তু মুন্না বা তাঁর ছেলের টিকিও ছুঁতে পারেনি পুলিস।
এলাকার আর এক তৃণমূল কাউন্সিলর সামসুজাম্মান আনসারির ছেলে টাব্বুও গার্ডেনরিচ কাণ্ডের দিন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। পুরমন্ত্রী ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরে তাঁর পাশেপাশেই দেখা যায় টাব্বুকে। এমনকী পুরমন্ত্রী যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন, তখনও।
মুন্না, সানু, অনিল, টাব্বু-কেউই এখনও গ্রেফতার হননি। সব দেখেশুনে প্রচলিত প্রবাদটাকে একটু পাল্টে নিয়ে অনেকেই বলছেন,আছে ববি ধরে কে?