আদরের 'বিটুয়া' সুস্থ হয়ে উঠুক, প্রাণে বাঁচুক; এটাই শুধু প্রার্থনা ঠাকুরদার
"আজ থেকে ২০ বছর আগে শিক্ষাব্যবস্থায় একটা শৃঙ্খলা ছিল। এখন তা নেই। পাশাপাশি কম্পিউটার, মোবাইল এসবের যেমন ভালো দিক রয়েছে। তেমন একটা খারাপ দিকও রয়েছে। নির্ভর করছে, কে কোনটা নেবে।"
একটা দিন.... আচমকা এক ঝড়.... ওলটপালট হয়ে গেছে তাঁদের সারা পৃথিবী। হাসিখুশি সুস্থ মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মেয়ে যখন বাড়ি ফিরল, তখন সে ক্ষতবিক্ষত। আহত। রক্তাক্ত। ভয়ার্ত। চুরি গিয়েছে শৈশব। আগের মত খেলছে না 'বিটুয়া'। কথাও বলছে না। এখন বাড়ির লোকের শুধু একটাই প্রার্থনা, প্রাণে বাঁচুক মেয়েটা। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক। একইসঙ্গে শুরু হয়ে গেছে লড়াই। ন্যায্য বিচারের দাবিতে। সব নিয়েই ২৪ ঘণ্টা ডট কমের সঙ্গে কথা বললেন জিডি বিড়লা স্কুলের নির্যাতিতা শিশুর ঠাকুরদা।
ঠাকুরদা জানান, তাঁর ছোট্ট বিটুয়া জল দেখলেই ভয় পাচ্ছে। আতঙ্কে চিত্কার করছে। স্নান করতে চাইছে না। খালি বলছে, 'ব্যথা করছে, জ্বালা করছে।' অসহায় দাদু বলেন, 'বুঝতেই পারছি না, ভেতরে ভেতরে কতটা ক্ষত হয়েছে ওর।' কার্যত ডাক্তারের কথার উপর ভরসা করেই প্রত্যেকটা দিন কাটাচ্ছে ওই পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ওষুধ চলছে। ডাক্তার বলেছেন, সমস্যা হলে আবার নিয়ে যেতে। কিন্তু কতদিনে মিটবে এই ক্ষত, উত্তর জানা নেই।
ক্ষত যে শুধু শরীরের তা তো নয়। ক্ষত মনেরও। এধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে শারীরিক চিকিত্সার পাশাপাশি জরুরি হয়ে পড়ে মানসিক চিকিত্সাও। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে কাউন্সেলিং। তবে এখনই বাড়ির তরফে কোনও কাউন্সেলিংয়ের কথা ভাবা হচ্ছে না বলেই জানালেন ঠাকুরদা। তিনি বলেন, " ডাক্তারের কথামত চলছি। নিজে থেকে কিছু করতে গেলে যদি আরও বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আগে তো প্রাণে বাঁচুক। সুস্থ হয়ে উঠুক।"
আরও পড়ুন, মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিযোগ বিশ্বাস করতাম, মন্তব্য বিড়লা কাণ্ডে অভিযুক্ত অভিষেকের বাবার
সবে নার্সারি। সবে অক্ষরের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে। ভাল স্কুলে পড়ে উচ্চশিক্ষিত হবে, সেই স্বপ্ন বুনেই শহরের অন্যতম নামী স্কুলে লোন করে ভর্তি করিয়েছিলেন বাড়ির ছোট্ট মেয়েটিকে। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন শুধুই 'দুঃস্বপ্ন' হয়ে তাড়া করছে দিনে-দুপুরে, প্রতি মুহূর্তে। ঠাকুরদা বললেন, "ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে সব বাবা-মায়েরাই চিন্তা করে। কিন্তু সেটা সুস্থ অবস্থায়। আমার নাতনির পড়াশোনা নিয়ে ভাবার মত অবস্থাতেই আমরা এখন আর নেই। আমার নাতনি প্রাণে বেঁচে ফিরে এসেছে, এটাই আমাদের কাছে পরম সৌভাগ্যের। এখন কোনও স্কুলে পাঠানোর কোনও প্রশ্নই নেই।"
ঠাকুরদা জানান, মেয়ের জন্য অনেক আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁর বউমা। চাকরি ছেড়েছেন। নিজে একা হাতেই মেয়েকে বড় করেছেন। এই চারটে বছর ধরে অনেক যত্নে বড় করছিলেন তাঁদের প্রিয় 'বিটুয়া'কে। কিন্তু এই একটা ঘটনা তাদের জীবনটাকে যেন লন্ডভন্ড করে দিল। বলেন, পরিবারের সবার কাছে সারা জীবন একটা আতঙ্ক তাড়া করবে। নাতনিকে বাড়িতে বসিয়ে রাখতে পারবেন না। একটা সময় তাকে আবার স্কুলে পাঠাতে হবে। কিন্তু সেদিনও উদ্বেগ তাড়া করবে। "অবিশ্বাস নিয়েই বিশ্বাস করতে হবে স্কুলকে।" শহরের নামী স্কুল বলে নয়, গ্রাম-শহর প্রতিটি স্কুলে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা বিষয়টি সুনিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
সরকারি রিপোর্টে কাঠগড়ায় উঠেছে জিডি বিড়লা। ঠাকুরদা জানান, সরকারের এই পদক্ষেপে খুশি তিনি। এখন শুধু একটাই দাবি, সুবিচার হোক। দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাক। কিন্তু কোন 'অপরাধ'-এর 'শাস্তি' পেতে হল তার নাতনিকে? উত্তরে ঠাকুরদা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার দিকে। তিনি বলেন, "আজ থেকে ২০ বছর আগে শিক্ষাব্যবস্থায় একটা শৃঙ্খলা ছিল। এখন তা নেই।" শুধু শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলার অভাব নয়, ঠাকুরদার অভিযোগের নিশানায় আজকের আধুনিক প্রযুক্তিও। ঠাকুরদা বলেন, "কম্পিউটার, মোবাইল এসবের যেমন ভালো দিক রয়েছে। তেমন একটা খারাপ দিকও রয়েছে। নির্ভর করছে, কে কোনটা নেবে।"
আরও পড়ুন, বাবা ওদের ঢিসুম ঢিসুম করে দেবে তো? বারবার প্রশ্ন করছে মেয়ে, ২৪ ঘণ্টাকে বললেন মা
'বিটুয়া' সলমন খানের সিনেমা দেখতে খুব পছন্দ করত। কার্টুন না দেখে খেতেই চাইত না। কিন্তু এখন সেসব সব বন্ধ। জোর করে হয়তো একটা বিস্কুট খাওয়ানো যাচ্ছে, অথবা ১-২ চামচ খাবার। কিন্তু জল খেতে চাইছে না একদমই। কারণ জল খেলেই যে....যন্ত্রণা। তাঁর নাতনি খুবই হাসিখুশি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুবই মিশুকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে বদলে গেছে সবকিছু। বাড়িতে এখন অনেক লোক আসছে। প্রতিবেশীরা আসছে। কিন্তু কারোর সঙ্গেই কোনও কথা বলছে না নাতনি। কিছুতেই মায়ের কাছ-ছাড়া হতে চাইছে না 'আতঙ্কিত' শৈশব। তাঁর আদরের 'বিটুয়া' আবার কবে খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে, তার অপেক্ষাতেই এখন দিন গুনছেন ঠাকুরদা।