ভূতের আমি, ভূতের তুমি, ভূত দিয়ে যায় চেনা!
ভূতের অতীত বা ভবিষ্যৎ ভুলে আসুন, এই ঘোরতর ভূত চতুর্দশীর দিন আমরা ভূতের বর্তমানেই আকণ্ঠ মজি
নিজস্ব প্রতিবেদন: কালীপুজোর আগের দিনটি, মানে আজকের দিনটি হল ভূত চতুর্দশী। তবে এ বারে তিথি-টিথিগুলি একটু অন্যরকম পড়েছে। তাই আজ সারাদিন ত্রয়োদশী। যাকে আমরা ধনতেরাস বলে থাকি। আজ সন্ধের পরে পড়ছে চতুর্দশী। অর্থাৎ কিনা ভূত চতুর্দশী।
এক হিসেবে ভালই, কারণ, দিনেরবেলা ভূতেরা কী করবে? অন্ধকার না হলে তাদের কাজই-বা কী? তখনই তো আদাড়-বাদাড়, বেলগাছ, শেওড়াগাছ, বনঝোপ থেকে দলে দলে বেরিয়ে পড়বে রাশি রাশি বেঁটে ভূত, মোটা ভূত, হোঁৎকা ভূত, মামদো, গেছো, মেছো, পেত্নি, শাঁকচুন্নি, ব্রহ্মদত্যিরা।
এক শ্রেণির মানুষ আছেন, যাঁরা কোনও দিনই ভূতের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিত নন। ভূত তাঁদের কাছে ঘোর বর্তমান। তাঁরা বিশ্বাস করেন, এই বোধ হয় ঘাড়ে চেপে বসল কোনও ব্রহ্মদৈত্য! এই বোধ হয় শেওড়া গাছ থেকে নেমে এল কোনও পেত্নী! এঁরাই ভয় পেয়ে ভূত চতুর্দশীর দিনে ভূত তাড়াতে বাড়ির অন্ধকার কোনায় কোনায় জ্বেলে দেন চোদ্দ প্রদীপ।
ব্যাপারটি প্রতীকী। ওইদিনই শুধু ভূতেরা আসবে আর প্রদীপ জ্বলছে দেখে ফিরে চলে যাবে, বিষয়টি এমন সাদাসিধে নয়। ভূত আছে, এটা বিশ্বাস করেই বরং অনেকের আনন্দ হয়, রোমাঞ্চ হয়। তাঁদের সেই রোমহর্ষণ কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।
তা হলে আসুন, ভূতের রাজার জবর জবর তিন বর না পেলেও আমরা বরং এই ফাঁকে একটু ভূত-চর্চা করে নিই। চিনে নিই আমাদের মিষ্টি মিষ্টি ভূতেদের।
যেমন ধরুন পেত্নি। এ হল মানুষজন্মে অবিবাহিত। মরে গিয়ে অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এরা। জলা জায়গা বা শ্যাওড়া গাছে বাসা বাঁধে৷ তবে শাঁকচুন্নিরা বিবাহিত। তাই হাতে শাঁখা-পলা, সিঁথিতে সিঁদুর পরে এরা ঘুরে বেড়ায়। অবশ্যই অন্ধকারে।
ব্রাহ্মণেরা অপঘাতে মারা গেলে ব্রহ্মদৈত্য হয়৷ ধুতি, খালি গা, গায়ে পৈতে। থাকে বেল গাছে৷ মুসলমানদের অপঘাতে মৃত্যু হলে তারা হয় মামদো ভূত৷ মামদো নাকি 'মহম্মদ' থেকে এসেছে। মামদোরা ঘাড়ে চাপলে বলা হয় জিনে ধরেছে৷ মাছপ্রিয় বাঙালি মৃত্যুর পরও মাছের লোভ ছাড়তে না পারলে মেছোভূত হয়ে পুকুরের চারধারে ঘোরে৷ রাতে বা ভর দুপুরে নির্জন রাস্তা দিয়ে কেউ মাছ কিনে ফিরলে এরা তাদের ঘাড়ে চেপে বসে৷ এমনিতে তো কথাই আছে, ঠিক 'দুক্কুর বেলা, ভূতে মারে ঢেলা'! ট্রেন বা বাসে কাটা পড়লে যদি মুণ্ডচ্ছেদ হয়ে মৃত্যু হয়, তা হলে সে হল স্কন্ধকাটা ভূত৷ মনে করা হয়, নিজের কাটা মাথাটা খোঁজার জন্যেই পৃথিবীতে ঘোরে এরা৷
আর রয়েছে নিশি। 'নিশি রাত বাঁকা চাঁদ'-এর রোম্যান্স নয়। এ হল ঘোরতর রোমাঞ্চ। রাতের অন্ধকারে আমাদের নাম ধরে ডাকে এই নিশি৷ সেই ডাকে সাড়া দিলে টেনে নিয়ে যায় ঘরের বাইরে, বাড়ির বাইরে, এলাকার বাইরে, আমাদের চেনা জগতের বাইরে৷ সেখানে কেউ নেই, কিছু নেই। শুধু ঘন গাঢ় অন্ধকার। সেই আঁধারে চিরকালের মতো হারিয়ে যেতে হয় নিশির ডাক শোনা সেই মানুষটিকে।
অধিকাংশ ভূতই তো গেছো। কেননা, ভূতেদের বেশিরভাগই গাছে থাকে। মোটা, বেঁটে ভূত তো নামেই বোঝা যাচ্ছে কেমন।
সুতরাং, ভূতের অতীত বা ভবিষ্যৎ ভুলে আসুন, এই ঘোরতর ভূত চতুর্দশীর দিন আমরা ভূতের বর্তমানেই আকণ্ঠ মজি।
আরও পড়ুন: কালীঘাটে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজো হয় না, জেনে নিন বিশদে