Swapan Dasgupta on Governor: রাজ্য সরকারের জেরক্স মেশিন! রাজ্যপালের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিস্ফোরক স্বপন দাসগুপ্ত
রাজ্য-রাজভবন ঘনিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যপালকে বিঁধে স্বপন দাসগুপ্ত বলেন, আপনি এত ঘনিষ্ঠতা দেখাচ্ছেন যে রাজভবন ও তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসটা যে আলাদা সেই তফাতটা কি মাঝে মাঝে চলে যাচ্ছে?
মৌপিয়া নন্দী
রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বাংলায় হাতেখড়ি হচ্ছে সরস্বতী পুজোর দিন। বহুদিন থেকেই তিনি বাংলা শেখায় আগ্রহী। তাই তার আনুষ্ঠানিক সূচনা সরস্বতী পুজোর দিনই করার পরিকল্পনা করেছেন রাজ্যপাল। সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এরকম এক পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের ওই হাতেখড়ির অনুষ্ঠান ও তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন বিজেপি নেতা স্বপন দাসগুপ্ত।
আরও পড়ুন-২০২০-র পর ২০২৩, ১৬ ইনিংস বাদে শতরানের মুখ দেখলেন 'হিটম্যান'
জি ২৪ ঘণ্টাকে দেওয়া এক সাক্ষতকারে বিজেপি নেতা স্বপন দাসগুপ্ত বলেন, প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্যে সরকারের সংঘাতের জমানা শেষ। বর্তমান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে রাজ্য সরকারের একটা সুসম্পর্কের বাতাবরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু রাজ্য-রাজ্যপাল পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক নিয়ে খুশি নয় রাজ্য গেরুয়া শিবির। এনিয়ে বিস্ফোরক বিজেপি নেতা স্বপন দাসগুপ্ত। ওই সাক্ষাতকারে স্বপন দাসগুপ্ত এনিয়ে বলেন, রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের সঙ্গে রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর একটা সম্পর্ক থাকা উচিত। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রধানের একটা নিরপেক্ষতাও থাকা উচিত। কিন্তু দেখতে হবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ওই সম্পর্ক কতটা প্রাসঙ্গিক।
রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বাংলায় হাতেখড়ি নেবেন। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাহলে এনিয়ে প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে? স্বপন দাসগুপ্ত বলেন, একজন বয়স্ক মানুষ বাংলা শিখছেন। খুবই ভালো কথা। কিন্তু এটার মধ্যে একটা রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে। এই বার্তাটা হল, পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে সবই যেন ঠিক আছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রটা ঠিক নেই। দুর্নীতির কথা তো বলাই হয়েছে। গোটা শিক্ষা দফতরটা এখন প্রায় জেলে। এরকম একটা সময়ে হাতেখড়ি নেওয়াটা একটা দেখনদারি বলে মনে হচ্ছে। এটা একটা স্টান্ট। এই স্টান্টের মধ্যে রাজ্যপালের পড়া উচিত নয়। উনি এখানে একটা দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন।
বিজেপি নেতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের একটা জটিল সমস্যা রয়েছে। রাজ্যপাল নিজে সেই সমস্যা কিছুটা অনুভব করেছেন। ভোটের পর হিংসা খতিয়ে দেখতে যে কমিটি রাজ্যে এসেছিল সেখানে উনি ছিলেন। অন্য রাজ্যের থেকে এরাজ্যের সমস্য়া কিছুটা আলাদা। হাতেখড়ি কেন! হাতেখড়ি নিয়ে য়া হচ্ছে তা একপ্রকার নাটক। এ জিনিস কোনও রাজ্যপালকে মানায় না। রাজ্যপালের অনেক ভূমিকাই আমার চোখে সন্দেহজনক লাগছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ, ঘনিষ্ঠতা থাকা উচিত। এটা এখন অন্যদিকে পৌঁছে যাচ্ছে। তাঁর লেখা অনুবাদ করা হবে। রাজ্য সরকার সেটা অনুবাদ করে বইমেলা না কোথায় একটা ছাড়বে। এটা কি রাজ্যপালের কাজের মধ্যে পড়ে? নাকি এটা এক ধরনের সংবিধান বহির্ভূত কাজ হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যপাল মনে হয় ভালো সম্পর্ক রাখতে গিয়ে অতিভালো সম্পর্ক রেখে ফেলেছেন। এক্ষেত্রে ওঁর যে সাংবিধিনিক দায়িত্ব তা পার করে গিয়েছেন। রাজভবনে যখন অনুষ্ঠান হচ্ছে তখন বিরোধী দলের নেতাকে অপমান করা হচ্ছে। তাঁকে পেছনের দিকের একটা সিট দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজ্য-রাজভবন ঘনিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যপালকে বিঁধে স্বপন দাসগুপ্ত বলেন, আপনি এত ঘনিষ্ঠতা দেখাচ্ছেন যে রাজভবন ও তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসটা যে আলাদা সেই তফাতটা কি মাঝে মাঝে চলে যাচ্ছে? অনেক সময় অভিযোগ আসতো এই রাজ্যে রাজভবনটা বিজেপির অফিস। এখন আমরা ঠিক উল্টোটা দেখছি এখানে। মাঝে মাঝে মনে হয় এখানে প্রাদেশিক দল আর রাজ্যপালের অফিসটা কি একসঙ্গে মিলে গিয়েছে?
প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ভূমিকা নিয়ে রাজ্যসরকারের বিস্তর অভিযোগ ছিল। রাজ্যপাল নাকি উনি পদ্মপাল, এমন মন্তব্যও আসতো। রাজভবনটা বিজেপির পার্টি অফিস হয়ে যাচ্ছে। তাহলে রাজ্যপালের কাজ পছন্দ না হলেই কি তিনি টার্গেট হয়ে যাচ্ছেন? স্বপন দাসগুপ্ত বলেন, এটুকুই বলব রাজ্যপালের নিরপেক্ষ থাকা উচিত। রাজ্যপালের একটা দূরত্ব থাকা উচিত যাতে মানুষ তাঁর নিরপেক্ষতা বুঝতে পারে। সি ভি আনন্দ বোস এককালে আমলা ছিলেন। উনি জানেন নিরপেক্ষতা কাকে বলে। উনিই ভেবে দেখুন। উনি যা করছেন তা রাজ্যপালের ভূমিকার ব্যতিক্রমী। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতিটা অস্বভাবিক। দুর্নীতির ধাক্কায় কেন্দ্রের প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে। এখান রাজ্যপালের ভূমিকা থাকা দরকার। জগদীপ ধনখড় বলতেন তিনি আইন মেনে চলছেন। কেন্দ্রকে জানান দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন। সবাই তো জগদীপ ধনখড় হবেন না। এটাও আমরা আশা করি না যে একজন রাজ্যপাল একটা রাজ্য সরকারের জেরক্স মেশিন হবে। রাজভবনে বিরোধী পক্ষের কেউ গেলে তাকে উপযুক্ত সম্মান দেওয়া উচিত। এতদিনে ওঁর যে কার্যকলাপ তাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে। ওঁর নিরপেক্ষতাকে সন্দেহের চোখে দেখছি।