আমরি কান্ডের পরেও বদলায়নি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
ঢাকুরিয়া আমরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর কেটে গেছে একটা গোটা বছর। তিরানব্বই জনের মৃত্যুর পরেও কার্যত কোনও শিক্ষাই নেয়নি কলকাতার সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলি। অন্তত দমকলের রেকর্ড বলছে সেকথাই। অগ্নি সুরক্ষায় বিস্তর গাফিলতি রয়েছে কুড়িটি হাসপাতাল-নার্সিংহোমের। যার মধ্যে রয়েছে দুটি সরকারি হাসপাতালও। সুরক্ষা বিধি না মানায় হাসপাতাল গুলির ছাড়পত্র আটকে দিয়েছে দমকল বিভাগ। আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পর কলকাতার সব হাসপাতাল-নার্সিংহোমে পরিদর্শন চালায় ফায়ার সেফটি অডিট কমিটি।
ঢাকুরিয়া আমরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর কেটে গেছে একটা গোটা বছর। তিরানব্বই জনের মৃত্যুর পরেও কার্যত কোনও শিক্ষাই নেয়নি কলকাতার সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলি। অন্তত দমকলের রেকর্ড বলছে সেকথাই। অগ্নি সুরক্ষায় বিস্তর গাফিলতি রয়েছে কুড়িটি হাসপাতাল-নার্সিংহোমের। যার মধ্যে রয়েছে দুটি সরকারি হাসপাতালও। সুরক্ষা বিধি না মানায় হাসপাতাল গুলির ছাড়পত্র আটকে দিয়েছে দমকল বিভাগ। আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পর কলকাতার সব হাসপাতাল-নার্সিংহোমে পরিদর্শন চালায় ফায়ার সেফটি অডিট কমিটি। অগ্নি সুরক্ষায় গাফিলতির অভিযোগে নোটিস পাঠানো হয় উনচল্লিশটি হাসপাতাল-নার্সিংহোমে। সরকারি নথি বলছে, এরমধ্যে উনিশটি হাসপাতাল দমকলের নির্দেশ মেনেছে। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও এখনও নিজেদের গাফিলতিতে দমকলের নিয়ম কার্যকর করতে পারেনি কুড়িটি হাসপাতাল-নার্সিংহোম। হাসপাতালগুলি নিয়ম না মানায় তাদের ছাড়পত্র দেয়নি দমকল বিভাগ। ছাড়পত্র ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে হাসপাতাল।
এই বেনিয়মের তালিকায় রয়েছে-আমরি সল্টলেক, ভিশন কেয়ার, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি, কলম্বিয়া এশিয়া, ফর্টিস, ভাগিরথী নেওটিয়া, কোঠারি, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ, আনন্দলোক, নাইটিঙ্গেল, সুশ্রুত, ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স, ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ, এনজি মেডিকেয়ার, বালানন্দ ব্রক্ষ্মচারী হাসপাতাল, হেল্থ পয়েন্ট নার্সিংহোম, ক্যাপিটাল নার্সিংহোমের নাম।
অগ্নি-সুরক্ষায় গাফিলতির তালিকায় নাম রয়েছে দুই সরকারি হাসপাতালেরও। একটি কলকাতা মেডিক্যাল মেডিক্যাল কলেজ অন্যটি বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল।
কী কী গাফিলতি রয়েছে হাসপাতাল গুলির? দমকল কর্তারা বলছেন-কোথাও বেসমেন্টে তৈরি করা হয়েছে আউটডোর এবং অফিস। হাসপাতাল-নার্সিংহোম ভবনে বেআইনি ভাবে তৈরি করা হয়েছে অতিরিক্ত ফ্লোর। বসানো হয়নি অ্যানালগ স্মোক ডিটেক্টর। নেই আগুন লাগলে, ধোঁয়া বের করার জন্য আলাদা ডাক্ট। ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া আটকানোর জন্য নেই মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। এসি ডাক্টে বসানো হয়নি ধাতব ডাম্পার। মেরামত করা হয়নি এয়ার হ্যান্ডলিং প্লান্টের গলদ। নেই ফায়ার ডোর, ফায়ার অ্যালার্ম। কোথাও আবার নেই জলের রিজার্ভার। খারাপ অবস্থায় পড়ে জলের পাম্প। তৈরি হয়নি বিকল্প সিড়ি। সিল করা হয়নি বৈদ্যুতিন তারের ডাক্ট।
গাফিলতি চিহ্নিত করে, গত জানুয়ারি মাসে সব হাসপাতালকে নোটিস পাঠায় দমকল। ত্রুটি সংশোধনের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল কর্তৃপক্ষকে। পরে বাড়ানো হয় মেয়াদ। সেই সময়সীমাও এখন শেষ। প্রশ্ন এরপর কী? আমরির মতো দুর্ঘটনা ঘটবে আর নিরাপত্তাহীন হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবেন অসুস্থরা? বারাবর নির্দেশিকা পাঠানো হবে আর তাকে অগ্রাহ্য করেই চলবে হাসপাতাগুলি? তাহলে কেন প্রশাসন হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তার কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।