হাসপাতাল কাণ্ডে দায় এড়াল সরকার
প্রসূতির মৃত্যু ও শিশুচুরির ঘটনায় দায় এড়াল রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, দুটি ঘটনাতেই পালটা রোগীর পরিবারের ওপর দায় চাপালেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। দুটি ক্ষেত্রই তদন্ত জারি থাকলেও, রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না-করেই এদিন সমস্ত দায় অস্বীকার করে স্বাস্থ্য দফতর। রবিবার স্বাস্থ্যভবনে সাংবাদিক বৈঠকে বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন দফতরের কর্তারা।
প্রসূতির মৃত্যু ও শিশুচুরির ঘটনায় দায় এড়াল রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, দুটি ঘটনাতেই পালটা রোগীর পরিবারের ওপর দায় চাপালেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। দুটি ক্ষেত্রই তদন্ত জারি থাকলেও, রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না-করেই এদিন সমস্ত দায় অস্বীকার করে স্বাস্থ্য দফতর। রবিবার স্বাস্থ্যভবনে সাংবাদিক বৈঠকে বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন দফতরের কর্তারা। সেখানে একের পর এক স্ববিরোধী, বিভ্রান্তিকর ও বিস্ফোরক মন্তব্য করেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে সরকারি হাসপাতালের অমানবিক গাফিলতিতে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে। প্রথম ঘটনায় প্রসবকালীন কার্ড থাকা সত্ত্বেও ফুটপাতবাসিন উষা দেবী নামে আসন্নপ্রসবা এক মহিলাকে ফিরিয়ে দেয় চিত্তরঞ্জন সেবা সদন ও শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর পর রাস্তার পাশে প্রসবের পর ওই মহিলার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ মৃতার পরিবারের। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতেই শুক্রবার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে চুরি যায় তানিশ ফতিমা নামে এক প্রসূতির শিশুপুত্র। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নত করা হয় এক মহিলাকে। এর পর রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। দুটি ঘটনার তদন্ত চলাকালীন রবিবার স্বাস্থ্যভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন স্বাস্থ্য দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। হাজির ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রও। তাঁর উপস্থিতিতেই রীতিমতো আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে সমস্ত দায় অস্বীকার করেন স্বাস্থ্যকর্তারা। ঘটনায় দুই প্রসূতির আত্মীয়দের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে দায়ী করেন তাঁরা। উষা দেবীর মৃত্যু প্রসঙ্গে কর্তাদের সাফাই, বৃহস্পতিবার রাতে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে আনা হয়েছিল তাঁকে। ফলে তাঁকে ভর্তি নেয়নি দুটি হাসপতালই। এর পর পুলিশি জটিলতা থেকে বাঁচতে দেহ নিয়ে চলে যায় মৃতার পরিবার। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, প্রসূতি কার্ড না-থাকলেও সরকারি হাসপাতাল থেকে ফেরনো হয় না কোনও অন্তসত্বাকে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে শিশুচুরির ঘটনায় স্বাস্থ্যকর্তাদের সাফাই আরও বিস্ফোরক। শিশুচুরি রোখা সম্ভব নয় বলে এদিন সাফ জানিয়ে দেন রাজ্যের শিক্ষা-স্বাস্থ্য অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। আধিকারিকদের দাবি, তানিশ ফতিমার আত্মীয়দের গাফিলতিতেই চুরি গিয়েছে শিশুটি। ঘটনায় যে মহিলাকে সন্দেহভাজন বলে চিহ্নত করা হয়েছে, তিনি তানিশের পূর্বপরিচিত বলে দাবি করেছেন কর্তারা। তাঁদের যুক্তি, অনাত্মীয়ের হাতে কেউ দেড় দিনের সদ্যোজতের দেখভালের দায়িত্ব দেয়? এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে যুক্তির জাল তৈরি করে স্বাস্থ্য দফতর দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও, উলটে দফতরের কর্তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে একাধিক স্ববিরোধিতা। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে উষা দেবীকে কোন কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা কেন বলতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতর? পুলিসি হয়রানি এড়াতে মৃতার আত্মীয়রা কী ভাবে দেহ হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন? কেন দেহটির ময়নাতদন্ত হল না। তাহলে কি কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে একাজ করা যায়? ওদিকে স্বাস্থ্য দফতরের দাবি উড়িয়ে দিয়ে নিখোঁজ শিশুটির আত্মীয় জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন মহিলাকে তাঁরা চেনেন না।