আগুন সবজির বাগান, মধ্যবিত্তের পকেটে টান, ফড়েদের দাপটে দাম পাচ্ছেন না কৃষকরাও
আগুন বাজার। আলু, পটল, ঝিঙে থেকে কাঁচা লঙ্কা। দামটা দিনদিন বেড়েই চলেছে। মধ্যবিত্তের পকেটে টান। অথচ কৃষক বলছে, দাম পাচ্ছেন না। কেন এই বিস্তর ফারাক? কৃষকের দেওয়া হিসেব অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে কলকাতার পাইকারি বাজারে। আর খুচরো বাজার। সেখানে তো আগুন ছুটছে।
কলকাতা: আগুন বাজার। আলু, পটল, ঝিঙে থেকে কাঁচা লঙ্কা। দামটা দিনদিন বেড়েই চলেছে। মধ্যবিত্তের পকেটে টান। অথচ কৃষক বলছে, দাম পাচ্ছেন না। কেন এই বিস্তর ফারাক? কৃষকের দেওয়া হিসেব অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে কলকাতার পাইকারি বাজারে। আর খুচরো বাজার। সেখানে তো আগুন ছুটছে।
কৃষকের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, চন্দ্রমুখী আলু বা পিঁয়াজ তাঁরা বিক্রি করেছিলেন আট থেকে দশ টাকা প্রতি কেজি। এখন সেই আলু হিমঘর থেকে বিক্রি হচ্ছে বারো টাকা কেজি দরে। আর পিঁয়াজ দশ টাকায়। খুচরো বাজারে আলুর দর পৌছেছে বাইশ টাকায়। পিঁয়াজ পঁয়ত্রিশে। ঝিঙের ক্ষেত্রে কৃষকের দাম দশ টাকা। খুচরো বাজারে তা তিরিশ টাকা। বারো টাকায় ঢ্যাড়স বিক্রি করলেও বাজারে তা ক্রেতারা কিনছেন তিরিশ টাকায়। আর কাঁচা লঙ্কা? কৃষকের ষাট টাকা কেজি দরে বিক্রি করা কাঁচা লঙ্কা কলকাতার খুচরো বাজারে ছুঁয়েছে একশো টাকা।
এর সঙ্গে বাজারে ঝাঁজ বাড়াচ্ছে রাঁচি থেকে আমদানি করা লঙ্কা আর কর্ণাটকের টমেটো।
কেন এতটা পার্থক্য? কৃষকের থেকে ক্রেতা পর্যন্ত পৌছতে রয়েছে দু থেকে তিনবার হাত বদল। সেখানেই বাড়ছে দাম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সম্প্রতি বেড়ে যাওয়া পরিবহণ খরচ।
কৃষকের বিক্রি করা সবজি, দ্বিগুণেরও বেশি দরে পৌছচ্ছে ক্রেতার হাতে। কী করে বাড়ছে দাম? আঙুল উঠছে মধ্যসত্ত্বভোগীদের চক্রব্যূহের দিকে।
কৃষক সবজির ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। আবার বাজারে সেই সবজি কিনতে গিয়েই মধ্যবিত্ত ক্রেতার নাভিশ্বাস। কেন আকাশ ছুঁচ্ছে সবজির দাম? যে কোনও একটি সবজিকে নিয়ে তার কারণ খোঁজা যেতে পারে। ধরা যাক পটল।
কৃষক পটল বিক্রি করছে দশ টাকা কেজি দরে। সেই পটল কিনে বারো টাকায় বেচছে ফড়ে। ফড়ের থেকে সেই পটল কিনে পনেরো টাকায় বেচছে পাইকার। পাইকারের থেকে পটল যাচ্ছে কলকাতার পাইকারের কাছে। কলকাতার পাইকার খুচরো ব্যবসায়ীকে বেচছে কুড়ি টাকা কেজি দরে। ক্রেতারা খুরচো ব্যবসায়ীর থেকে সেই পটল কিনছেন তেইশ টাকা কেজিতে। অর্থাত্ কৃষকের দশ টাকার পটল ক্রেতার হাতে পৌছতে পৌছতে বেড়ে হচ্ছে তেইশ টাকা।
তবে বারবার হাতবদলই সবজির দাম বাড়ার একমাত্র কারণ নয়। উত্পাদন ঘাটতিতে চাহিদা বাড়া, পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ায় পরিবহণ খরচ বাড়া, সংরক্ষণের অভাবে সবজি পচে যাওয়ার মতো বিষয়গুলিও দামকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করছে।
সবজির দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সহ সতেরোটি রাজ্য চালু রয়েছে, এগ্রিকালচার প্রডিউস মার্কেট কমিটি অ্যাক্ট সংক্ষেপে APMC আইন। এই আইন অনুসারে কৃষকের উত্পাদিত ফসল শুধুমাত্র সরকার নির্ধারিত বাজারেই বিক্রি করা যায়। তবে, তাতেও কাজ না দেওয়ায় সম্প্রতি দাবি উঠেছে মধ্যসত্ত্বভোগী শ্রেণিকে অবলুপ্ত করে কৃষককে সরাসরি খোলা বাজারে সবজি বিক্রির অনুমতি দেওয়া হোক। যদিও তাতেও সমস্যা মিটবে একথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউই।