পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন, পত্রযুদ্ধে সংঘাত অব্যাহত

পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ইস্যুতে সংঘাত অব্যাহত। শুরু থেকেই কমিশনের এই দাবি পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। পত্রযুদ্ধ থেকে আইনি লড়াই। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সংঘাত আদালতে গড়ালেও, কমিশনও নিজেদের অবস্থান থেকে সরেনি। ফলে মনে করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রশ্নে দুপক্ষের অনড় অবস্থানের জেরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে জটিলতা বেড়ে চলেছে।

Updated By: Apr 6, 2013, 04:14 PM IST

পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ইস্যুতে সংঘাত অব্যাহত।  শুরু থেকেই কমিশনের এই দাবি পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। পত্রযুদ্ধ থেকে আইনি লড়াই। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সংঘাত আদালতে গড়ালেও, কমিশনও নিজেদের অবস্থান থেকে সরেনি। ফলে মনে করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রশ্নে দুপক্ষের অনড় অবস্থানের জেরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে জটিলতা বেড়ে চলেছে।
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
রাজ্যের মুখ্য সচিব সমর ঘোষকে চিঠি দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা খতিয়ে দেখে কমিশন মনে করছে ভোট শান্তিপূর্ণ করতে হলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সতেরোটি জেলার জন্য মোট আটশো কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয় মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে শান্তিপূর্ণ করতে গেলে আরও তিনশো কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন।
 
এরপর দফায় দফায় এই ইস্যুতে রাজ্য-কমিশনের মধ্যে চিঠি বিনিময় হয়েছে।
 
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩
নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেন রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের সচিব। চিঠিতে বলা হয়, রাজ্য সরকার মনে করছে নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যে পর্যাপ্ত পুলিস, হোমগার্ড, এনভিএফ এবং সিভিক পুলিস রয়েছে। বিধানসভা, নির্বাচন বা লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের তুলনা করা উচিত নয়।
 
১৯ ফেবুয়ারি, ২০১৩
কমিশন চিঠি দেয় রাজ্যকে। সিভিল পুলিস, ভলেন্টিয়ার, ভিলেজ পুলিস, এনসিসি দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলেই সংশয় প্রকাশ করা হয় চিঠিতে। একই সঙ্গে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তিনটি কেন্দ্রে বিধানসভা উপনির্বাচনের সময়ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচন গুরুত্ব পায় স্থানীয় ইস্যু। ফলে এই ভোট অত্যন্ত উত্তেজনাপ্রবন পরিবেশে হয়। সেক্ষেত্রে বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনের থেকেও পঞ্চায়েত ভোট হিংসাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কমিশন ফের ভোট সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপরেই জোর দেয়। (কমিশন চিঠিতে বলে, দুহাজার দশে একাশিটি পরসভার নির্বানের সময়ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।) পঞ্চায়েত ভোটে শান্তিপূর্ণ করতে মনোননয়পত্র জমা দেওয়ার সময় থেকেই  রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিস মোতায়েন করা প্রয়োজন বলেও জানায় নির্বাচন কমিশন।।
 
৪ মার্চ, ২০১৩
কমিশনকে চিঠি দিয়ে সরকার বলে,  উচ্চপদস্থ পুলিস আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে  বাস্তব  পরিস্থিতি যাচাই করে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেবে রাজ্য সরকার। প্রয়োজনে ভিনরাজ্য থেকেও বাহিনী আনা হতে পারে।
 
৭ মার্চ, ২০১৩
রাজ্যকে চিঠি দেয় কমিশন। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সরকারের হাতে কত সংখ্যক বাহিনী আছে এবং তা কীভাবে মোতায়েন করা হবে তা নিয়ে রাজ্য নির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে সরকার কেন নীরব, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে কমিশন। কমিশন জানায় জেলাশাসক ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেই তারা নিশ্চিত নির্বাচনের জন্য রাজ্যের কাছে পর্যাপ্ত পুলিস নেই।
 
 পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নে বারবার কমিশন ও রাজ্যের মধ্যে চিঠি বিনিময় হয়েছে। প্রতিবারই কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে, ভিলেজ পুলিস, এনসিসি, বা সিভিক পুলিসকে  নির্বাচনের কাজে লাগাতে আগ্রহী নন তারা। কারণ ভোটের সময় বিশৃঙ্খলা সামলাতে এই বাহিনী উপযোগী নয়। অন্যদিকে রাজ্যও চিঠিতে একাধিকবার কমিশনকে আশ্বস্ত করেছে, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় যাবতীয় দায়িত্ব তারা নিতে প্রস্তুত।
 
গত সোমবার কমিশনের যে আবেদন হাইকোর্টে জমা পড়েছে সেখানে দুপক্ষের সমস্ত চিঠির প্রতিলিপিই জমা পড়েছে। কমিশন তাদের আবেদনে সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছে। কমিশনের বক্তব্য, বাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে রাজ্য সরকার কখনোই কোনকিছু স্পষ্ট করেনি। উল্টে কমিশনকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা নিয়ে  রাজ্য ভুয়ো আশ্বাস দিয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছে কমিশন। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যে নজিরবিহীন জটিলতা রাজ্যে তৈরি হয়েছে, তাঁর অন্যতম কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ঘিরে সরকার কমিশন মতপার্থক্য। আদালতের নির্দেশে শুক্রবারের দুপক্ষের বৈঠকেও সেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাঁটাই দুতরফের আলোচনায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াল।

.