অপরাধ মনস্কতা নয়, মানসিক অসুস্থতাই বোনের কঙ্কালের সঙ্গে পার্থর দিন গুজরানের কারণ
অপরাধ মনস্কতা নয়, পার্থর গুরুতর মানসিক অসুস্থতাই যাবতীয় কাণ্ডকারখানার পেছনে। প্রাথমিক ভাবে এমনটাই মনে হচ্ছে পুলিসের। তাঁকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ব্যুরো: অপরাধ মনস্কতা নয়, পার্থর গুরুতর মানসিক অসুস্থতাই যাবতীয় কাণ্ডকারখানার পেছনে। প্রাথমিক ভাবে এমনটাই মনে হচ্ছে পুলিসের। তাঁকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাবা ছিলেন বেঙ্গালুরুর একটি ব্রিটিশ সংস্থার ডিরেক্টর। ছেলে পার্থ সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ছাত্র। পরে বিটেক ইঞ্জিনিয়ার। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মসূত্রে বিদেশে চলে যান তিনি। দুহাজার পাঁচে মায়ের মৃত্যু। তার ঠিক দুবছর পর চাকরি ছেড়ে দেন পার্থ। ডন বস্কো স্কুলের মিউজিক টিচারের চাকরি ছেড়ে দেন তাঁর বোনও। বাবার সঙ্গে রবিনসন স্ট্রিটের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন বোন ও দাদা। তিনজনই বাড়ি থেকে খুব একটা বেরোতেন না।
গত বছর ২৯ ডিসেম্বর বোনের মৃত্যুর পর দেহ বাড়িতে রেখে দিতে চান পার্থ। রাজি ছিলেন না বাবা। তবু তাঁকে রাজি করিয়ে নেন পার্থ।
বাবার মৃত্যুর পর সব কিছু প্রকাশ্যে চলে এল।
পার্থ'র দাবি, বুধবার রাতে তিনি তখন বই পড়ছিলেন। পোড়া গন্ধ পেয়ে তাঁর মনে হয় করিডরের টিউবে থেকে গন্ধটা আসছে। টিউব নিভিয়ে দেন তিনি। তারপরও গন্ধ বেরোতে থাকে। আচমকাই তিনি দেখতে পান, অরবিন্দ দে'র ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। রাতে দমকল কর্মীরা গিয়ে দেহ উদ্ধার করে। পাওয়া যায় অরবিন্দ দে'র লেখা সুইসাইড নোট। তাতে লেখা রয়েছে ''আমি স্বেচ্ছায় এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ৭৭বছর বয়স হয়েছে, পার্থ আমি চললাম। ভগবান সকলের ভাল করুন। তোমাকে ভালবাসি। ভালবাসি...ভালবাসি...ভালবাসি...''
পুলিসের সন্দেহ, কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন দিয়েছিলেন অরবিন্দ দে। বাথরুম থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি কেরোসিন তেলের বোতলও। শেক্সপিয়ার সরণি থানায় পার্থকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিস। ওসির মনে হয়, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পার্থ। কিছুটা আশঙ্কা থেকেই পার্থকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রবিনসন রোডের বাড়িতে পুলিসকর্মীও মোতায়েন করা হয়।
রাতে ঘুমোননি পার্থ। বারবার ওপর নীচ করেছেন। সকালে পার্থকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন ওসি এবং ডিসি সাউথ। পুলিস অফিসারদের মনে হয়, পার্থ কোনও কিছু চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পার্থ তাঁদের জানান, তিনি ঈশ্বরের কাছে সব কিছু কনফেস করতে চান। সেই মতো তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মাদার হাউসে। সেখানে পুলিস বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ শুরু করতেই বেড়িয়ে আসে গোটা ঘটনা।
পার্থকে নিয়ে রবিনসন রোডের বাড়িতে যান পুলিস অফিসারেরা। ঘরের মধ্যে ছোট খাট। খাটের মধ্যে শোয়ানো রয়েছে কঙ্কাল। গায়ে কম্বল চাপা দেওয়া। পাশে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য টেডি বেয়ার, শুকনো খাবার। মেঝেতে পড়ে দু-দুটি কুকুরের কঙ্কাল। সেখানে রাখা কেক এবং প্যাস্ট্রি। ঘরের মধ্যে কুড়িহাজার আধ্যাত্মিক বই। কঙ্কালের পাশে রাখা মোমবাতি-ধূপকাঠি। নিয়মিত প্ল্যানচেট করতেন। বারোটি কম্পিউটার দিয়ে বানিয়ে ফেলেছিলেন প্ল্যানচেটের কন্ট্রোল রুম। ঘরের প্রত্যেকটি কোণে মিউজিক সিস্টেমে বাজছে আধ্যাত্মিক গুরু জয়েস মেয়ারের বাণী। আধা ভৌতিক শব্দ। ঘরে মিলেছে প্রচুর বাদ্যযন্ত্র।
পুলিস পার্থ দে'র ডায়েরি থেকে জানতে পেরেছে, ছোট থেকে পার্থ মনে করতেন তিনি সমস্যায় রয়েছেন। ডায়েরিতেও তিনি লিখেছিলেন, তিন নম্বর রবিনসন স্ট্রিট একদিন স্বর্গের বাগান হবে, এখন নরক।