অকাল বৃষ্টিতে ব্যাহত জনজীবন, কিন্তু প্রবল জলের তোড়েও ভেসে যায়নি রুটি-রুজির সন্ধান, কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা
ক্যালেন্ডারের নিয়ম মেনে সময়টা আষাঢ়-শ্রাবণ নয়। ভরা কার্তিক। কিন্তু বৃষ্টির বহর দেখে তা বুঝে ওঠার জো নেই। আর বৃষ্টি মানেই তো ঘরবন্দি। বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে যাওয়ায় মানা। কিন্তু সবার তো আর ঘরে বসে থাকলে চলে না। কাজের তাগিদে, রুজির টানে মেঘ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পথে বেরোতে হয় মানুষকে।
ক্যালেন্ডারের নিয়ম মেনে সময়টা আষাঢ়-শ্রাবণ নয়। ভরা কার্তিক। কিন্তু বৃষ্টির বহর দেখে তা বুঝে ওঠার জো নেই। আর বৃষ্টি মানেই তো ঘরবন্দি। বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে যাওয়ায় মানা। কিন্তু সবার তো আর ঘরে বসে থাকলে চলে না। কাজের তাগিদে, রুজির টানে মেঘ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পথে বেরোতে হয় মানুষকে।
রাতে শুতে যাওয়ার সময়ও বন্ধ জানলা ভেদ করে আসছিল শব্দটা। তবু ক্লান্ত শরীর ঘুমের মধ্যে এলিয়ে পড়েছিল। কিন্তু ভোরে ঘুম ভাঙতেই মাথায় হাত! একী অবস্থা! কাজে যাব কী করে! সব ছাপিয়ে তখন সেটাই সবচেয়ে বড় চিন্তা। ইচ্ছে করে চাদর টেনে আবার ঘুমিয়ে পড়তে। কিন্তু তার তো জো নেই। কাজে বেরোতে হবে যে! অগত্যা দুর্যোগ মাথায় নিয়েই বেরিয়ে পড়া।
বাড়ি থেকে বেরোতে গিয়েই হোঁচট। গেটের সামনে জল থইথই। প্যান্ট গুটিয়ে যদি বা তা পেরনো গেল, বড় রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে রীতিমতো স্রোত বইছে। অগত্যা জল ভেঙেই এগিয়ে চলা।
পল্লি বাংলা থেকে শহর কলকাতা। সব জায়গাতেই একই ছবি। কাজের টানে দুর্যোগ উপেক্ষা করেও পথে নেমেছেন অসংখ্য মানুষ। বহুজাতিক সংস্থার সিইও থেকে নিত্যদিনের দুধওয়ালা বেরোতে হল সকলকেই।
রবীন্দ্রনাথ বসন্তের সঙ্গে বর্ষার পার্থক্য দেখাতে গিয়ে বলেছেন, বসন্ত মনকে বহির্মুখী করে তোলে। কিন্তু বর্ষা সেই মনকেই ঘরের কোণে পুরে ফেলে। কিন্তু তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে জীবন মানে তো রোজই যুদ্ধ। সেখানে বাদলা দিনে ঘরে বসে থাকার বিলাসিতা কার্যত অসম্ভব। তাই রুজির টানে, কাজের তাগিদে মেঘ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই পথে নামতে হয়। জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে করতে আবহমান কাল ধরে এই অভ্যেসটা রপ্ত করে ফেলেছে মানুষ। তাই দুর্যোগ অনেক কিছু এলোমেলো করে দিলেও মনটাকে দমিয়ে দিতে পারে না। সেই মনের জোরকে সম্বল করেই শুক্রবার রেকর্ড বৃষ্টির দিনেও ঘরের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ছেড়ে পথে বেরোলেন বহু মানুষ।
এতো সামান্য বৃষ্টি। সুনামি এসেছে। ভূমিকম্প সব মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। লোকাল ট্রেনে বিস্ফোরণ ভয় দেখিয়েছে। বলেছে বেরিও না। তবু কাজের তাগিদে মানুষের বাইরে বেরনো বন্ধ হয়নি! কারণ সেখানে যে রয়েছে এক মহা দায়বদ্ধতা।
সেদিন বরষা ঝরঝর ঝরে, কহিল কবির স্ত্রী, রাশি রাশি পুঁথি করিয়াছো জড়ো, মাথার উপর বারি পড়োপড়ো, তার খোঁজ রাখো কি? এখানেই লুকিয়ে রয়েছে সেই দায়বদ্ধতা।
বর্ষা মনকে অন্তরমুখী করে। একথা লিখেছিলেন যিনি, তিনিই কিন্তু স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এই দায়বদ্ধতার কথা। সেই দায়িত্ববোধের তাগিদেই মানুষকে সঞ্চয় করে রাখতে হয় জীবনীশক্তি। তাকে সম্বল করেই দুর্যোগের মধ্যে পথে নামতে হয়। হাজারো বাধা বিপত্তি ডিঙিয়ে পৌঁছতে হয় নিজের কর্মক্ষেত্রে। শুক্রবারও তার ব্যতিক্রম হল না।