রিজেন্ট পার্কে ঘাতক কর্তা, বলছে প্রাথমিক রিপোর্ট

নতুন মোড় রিজেন্ট পার্ক কাণ্ডে। ঘটনাস্থলের সরেজমিনে এবং প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিসের হাতে উঠে এল কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার ফলে প্রাথমিক ভাবে যা অনুমান করা হচ্ছিল তার থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল ঘটনার মোড়। প্রাথমিক ভাবে ঋণের জেরে খুন এবং আত্মহত্যা মনে হলেও তদন্ত এগোতেই তা খারিজ করে দিয়েছে পুলিস।

Updated By: Apr 16, 2012, 07:26 PM IST

নতুন মোড় রিজেন্ট পার্ক কাণ্ডে। ঘটনাস্থলের সরেজমিনে এবং প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিসের হাতে উঠে এল কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার ফলে প্রাথমিক ভাবে যা অনুমান করা হচ্ছিল তার থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল ঘটনার মোড়। প্রাথমিক ভাবে ঋণের জেরে খুন এবং আত্মহত্যা মনে হলেও তদন্ত এগোতেই তা খারিজ করে দিয়েছে পুলিস। পুরো ঘটনাতেই সন্দেহের তির সুপ্রতীম ঘোষের দিকে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী বাকি ৪ জনের মৃত্যুর সময়ের সঙ্গে সুপ্রতীম বাবুর মৃত্যুর সময়ের ব্যবধান অন্তত আধ ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট। অর্থাত্‍, বাকি ৪ জনের মৃত্যুর অন্তত আধ ঘণ্টা পর মৃত্যু হয়েছে সুপ্রতীম বাবুর। সেক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে উপস্থিত শেষ জীবিত ব্যক্তি ছিলেন সুপ্রতীম বাবু। সুতরাং, স্বাভাবিক ভাবেই পুলিস অনুমান করছে বাকি ৪ জনকে খুন করার পরই আত্মহত্যা করেছেন সুপ্রতীম ঘোষ।
রবিবার রাত পৌনে ২ টো নাগাদ গঙ্গোত্রী অ্যাপার্টমেন্টের ৩ তলার একটি ঘরের ভিতর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিস এবং দমকলে খবর দেওয়া হয়। পুলিস এসে ঘরের দরজা ভেঙে ঢোকার পর দেহগুলি পড়ে থাকতে দেখা যায়। বন্ধ ফ্ল্যাটের ভিতরে একই ঘরের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় পাঁচটি দেহই। বাড়িতে দুটি সারমেয় ছিল বলে জানা যায়। তার মধ্যে একটি সারমেয়ও মৃত অবস্থায় ঘরের মধ্যে থেকে মেলে। অপর সারমেয়টি সেইসময় ফ্ল্যাটের বাইরে ছিল বলে জানান প্রতিবেশীরা।
গঙ্গোত্রী আবাসনের অন্যান্য বাসিন্দাদের বয়ান অনুযায়ী, প্রতি রবিবার সুপ্রতীম বাবু তাঁর স্ত্রী (সঙ্গীতা বোস) ও ২ মেয়ের ( সহেলি ও সারণি)-র শহরের একটি নামি রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করতে যেতেন । একই সঙ্গে ফিরতেন তাঁরা। ঘটনার দিনও রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ ৪ জন একসঙ্গে রেস্টুরেন্টে যান। সুপ্রতীমবাবুর বাবা স্বদেশ বোস সেই সময় ফ্ল্যাটেই ছিলেন। এরপর রাত ১১ টার সময় সুপ্রতীম বাবু একা বাড়ি ফিরে আসেন। বাকিরা ফেরেন তার প্রায় এক ঘণ্টা পর অর্থাত্‍ ১২ টা নাগাদ। প্রাথমিক ভাবে পুলিসের অনুমান রাত ১২টা-১টা, এই ঘণ্টা সময় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যেই এমন কিছু ঘটে থাকবে যার জেরেই বাকি ৪ জনকে খুন করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। মৃতদের মোবাইলের ওই একঘণ্টার কললিস্ট চেক করছে পুলিস।
মৃতদেহের ময়না তদন্ত করে সুপ্রতীম বাবুর স্ত্রী সঙ্গীতা বোসের মাথায় গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুলিসের অনুমান, ভোঁতা কোনও `শো পিস` জাতীয় বস্তু দিয়ে জোরে আঘাত করা হয় তাঁর মাথায়। আঘাতের ফলে মাথার খুলি ফেটে যায় তাঁর। যেই ঘর থেকে সঙ্গীতা দেবীর রক্তের চিহ্ন পাওয়া গেছে সেটি সুপ্রতীম বাবু ও তাঁর স্ত্রীর শোওয়ার ঘর। এদিকে ৪টি মৃতদেহই উদ্ধার হয়েছে তাঁদের ২ মেয়ের শোওয়ার ঘর থেকে। এক্ষেত্রে পুলিসের অনুমান, হয় মাথায় আঘাত পাওয়ার পরই মৃত্যু হয় সঙ্গীতা দেবীর। তারপর তাঁকে অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। অথবা, আঘাতের ফলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তারপর তাঁকে অন্যঘরে নিয়ে যান সুপ্রতীম বাবু। ঘটনাস্থল থেকে ৪ টি কফির কাপ ও একটি নরম পানীয়র ক্যান উদ্ধার করেছে পুলিস। সেগুলি পাঠানো হয়েছে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য।
গোটা ঘটনা প্রাথমিক পরিদর্শনের পর যে বিষয়গুলি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে সেগুলি হল,
১) কেন সেদিন রেস্টুরেন্ট থেকে একা বাড়ি ফিরে এসেছিলেন সুপ্রতীম বাবু?
২) মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা সত্ত্বেও কেন আর্তনাদ করলেন না সঙ্গীতা দেবী?
৩) সুপ্রতীম বাবু সঙ্গীতা দেবীকে আঘাত করার সময় কোথায় ছিলেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা?
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিসের অনুমান, কফি এবং কোকাকোলার সঙ্গে বিষ জাতীয় দ্রব্য মেশান সুপ্রতীম বাবু। সম্ভবত সঙ্গীতা দেবী পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে যাওয়ায় তাঁর সঙ্গে বচসা বাধে সুপ্রতীম বাবুর এবং বচসার জেরেই স্ত্রীকে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করেন তিনি। সম্ভবত বিষ জাতীয় দ্রব্য পান করার ফলেই কণ্ঠরোধ হয় তাঁর। ফলে, প্রতিবেশীরা কোনও আর্তনাদের শব্দও শুনতে পাননি। রাত ১ টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত ডেকে চলেছিল বাড়ির সারমেয়টি। তা ছাড়া আর কোনও শব্দই পাননি প্রতিবেশীরা। পুলিসের অনুমান, সঙ্গীতা দোবীকে আঘাত করার আগেই মৃত্যু হয়েছিল বাকি ৩ জনের। আঘাত করার পর স্ত্রীর মৃত অথবা অচৈতন্য দেহ মেয়েদের ঘরে নিয়ে আসেন সুপ্রতীম বাবু। তারপর বাড়িতে আগুন লাগান সম্ভবত কিছু প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যেই। সব শেষে আত্মহত্যা করেন তিনি।
অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় প্ল্যান মাফিক ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিস। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু নমুণা সংগ্রহ করছে ফরেনসিক দল। কফিতে সত্যিই বিষ জাতীয় দ্রব্য মোশানো হয়েছিল কি না তা পরীক্ষার জন্য মৃতদের ভিসেরা টেস্টের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

.