আফগানিস্তানের মানুষের টানেই ফিরে গিয়েছিলেন সেই দেশে, সুস্মিতার ফেসবুক পেজ এখনও সাক্ষী সেই ভালবাসার

ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটা লাইন। কিন্তু অনুভূতির পরম স্নিগ্ধতায় ভরা। সেখানেই সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কেন বিপদ উপেক্ষা করেও ফের আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন তিনি। কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ মৃত্যু উপত্যকায় ফিরেছিলেন সেখানকার মানুষের টানেই।

Updated By: Sep 6, 2013, 04:47 PM IST

ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটা লাইন। কিন্তু অনুভূতির পরম স্নিগ্ধতায় ভরা। সেখানেই সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কেন বিপদ উপেক্ষা করেও ফের আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন তিনি। কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ মৃত্যু উপত্যকায় ফিরেছিলেন সেখানকার মানুষের টানেই।
শ্বশুরবাড়ি থেকে সুড়ঙ্গ কেটে প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন নিজের দেশ ভারতে। তারপর বাকিটা ইতিহাস। কাবুলিওয়ালার এক বাঙালি বউ কীভাবে মৌলবাদী নির্যাতনের গরাদ কেটে ভিন মুলুক থেকে নিজের শহরে ফিরল, সুস্মিতা তা নিজেই লিখে গিয়েছেন। সেই বই বেস্ট সেলার হয়েছে। পাঠককে অবাক করেছে। ভাবিয়েছে, একী আদৌ এক আটপৌরে মহিলার আখ্যান, নাকি, দারুণ প্রাণশক্তিতে ভরা কোনও মানবীর গল্প!
বৃহস্পতিবার সন্ধেয় টিভির পর্দায় হঠাতই ব্রেকিং নিউজ। তালিবানের গুলিতে নিহত কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ। খবর সামনে আসতেই যে জিজ্ঞাসা সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায়, এত কাণ্ডের পর আবার কেন আফগানিস্তানে ফিরে গিয়েছিলেন সুস্মিতা? ফিরেছিলেন সেই দেশের মানুষগুলোর টানেই। একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে তাঁর লেখায় স্পষ্ট হয়েছে সেই ভালবাসা। তিনি লিখেছিলেন,
চলে আসুন দাদা। সত্যি দারুণ দেশ। আরও ভাল মানুষগুলো। এত সহজ আর সরল যে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আসলে এরা বিধ্বস্ত। অনেক কিছু পাওয়ার আশা করে না। শুধু একটু ভাল ভাবে বাঁচতে চায়। আমাকে এরা মাথায় করে রেখেছে। ভাবতেও পারিনি যে আমি আবার এখানে আসব। এখানে আমি আমার দেশ তথা বাংলার মুখ উজ্জ্বল করে তুলেছি।
 
বেঁচে থাকতে জানা যায়নি। কিন্তু মৃত্যুর পর অনেকের সামনে চলে আসা এই লেখা জানিয়ে দিল, রুক্ষ মাটির দেশের মানুষের ভালবাসাই তাঁকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আতঙ্কের ভূমিতে। কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ উপন্যাসের আফগানিস্তান আর এই আফগানিস্তান অনেক আলাদা।
তালিবান পরবর্তী জমানায় আফগানিস্তানে ফিরে কাজ করতে শুরু করেছিলেন সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রোগীদের সেবা করতেন। রুক্ষ মাটিতে নিদারুণ দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে চলা গরিবগুর্বো মানুষদের ওষুধ দিতেন। তার পাশাপাশি নীরবে করে চলেছিলেন আরেকটা কাজ। আফগানিস্তানের মেয়েদের জীবনযাত্রা নিয়ে ফিল্ম বানানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন তিনি। আফগানিস্তানও হয়ে উঠছিল তাঁর নিজের দেশ। কিন্তু তাকে মৃত্যু উপত্যকায় বদলে দিল তালিবানের বুলেট। 
 

.