যানজটের মাসুল দিচ্ছে ওয়ালেট, জেনে নিন কীভাবে ফাঁকা হচ্ছে আপনার পকেট

ট্র্যাফিক জ্যামে ফেঁসে গেছেন। পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে বুঝতে পেরে মেজাজ ক্রমশ গরম হচ্ছে। এতো রোজকার অভিজ্ঞতা। কিন্তু, আপনার ক্ষতি শুধুমাত্র এই 'পথে হল দেরি'তেই আটকে থাকছে না। যানবাহন থমকে থাকায় গোটা দেশে অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। পরোক্ষে যার বোঝা বইতে হচ্ছে আপনাকেই।

Updated By: Jun 9, 2016, 07:21 PM IST

ওয়েব ডেস্ক : ট্র্যাফিক জ্যামে ফেঁসে গেছেন। পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে বুঝতে পেরে মেজাজ ক্রমশ গরম হচ্ছে। এতো রোজকার অভিজ্ঞতা। কিন্তু, আপনার ক্ষতি শুধুমাত্র এই 'পথে হল দেরি'তেই আটকে থাকছে না। যানবাহন থমকে থাকায় গোটা দেশে অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। পরোক্ষে যার বোঝা বইতে হচ্ছে আপনাকেই।

সড়কপথে পণ্য পরিবহনে দেরির মাসুলটা ঠিক কীরকম?

হিসেব কষেছে আইআইএম কলকাতা এবং বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড। জাতীয় ও রাজ্য সড়ক মিলিয়ে সারা দেশে আঠাশটি রুটে এক বছর ধরে চালানো হয়েছে যৌথ সমীক্ষা। রিপোর্ট বলছে,

খারাপ ও সরু রাস্তায় ক্রমশ গাড়ির সংখ্যা বাড়া, চেকপোস্ট ও টোলপ্লাজায় সময়ের অপচয়, পুলিসি হেনস্থার মতো নানা কারণে পণ্যবাহী ট্রাকের গতি কমে যাচ্ছে।

এজন্য প্রতি বছর দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় বিয়াল্লিশ হাজার কোটি টাকা।

পণ্যবাহী যানের গতি কম থাকায় বেশি তেল পুড়ছে। বাড়তি জ্বালানির খরচ বাবদ বছরে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় তিরানব্বই হাজার কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে সড়কপথে পণ্যবাহী যানের গতি কম থাকায় বছরে দেশের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় এক লক্ষ পঁয়তিরিশ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে শহরের রাস্তায় ট্র্যাফিকের ভিড়ে আপনার গাড়ির গতিও কমে যাচ্ছে। বাড়ছে প্রতি মাসে তেলের খরচ। পণ্যবাহী যানের গতি কমে যাওয়ায় যে ক্ষতি হচ্ছে পরোক্ষে তার বোঝাও বইতে হচ্ছে আপনাকেই। পণ্যবাহী যানের গতি কমে যাওয়ায় বাড়ছে পরিবহণ খরচ ও জোগানের ঘাটতি। যার জেরে বাড়ছে জিনিসের দাম। জ্বালানি আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি কোষাগারে চাপ বাড়ছে। যার জেরে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন।

বছরকয়েক আগে আইআইএম কলকাতার দুটি সমীক্ষায় এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল তিরানব্বই হাজার কোটি টাকা। এ থেকেই স্পষ্ট বছর বছর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিপদ। সড়কপথে পণ্য পরিবহণে ক্ষতির পরিমাণ কমাতে সরকারকে একাধিক পরামর্শ দিয়েছে আইআইএম কলকাতা।

নতুন রাস্তা তৈরি, চালু রাস্তা আরও চওড়া করা ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ।

সময়ের অপচয় কমাতে চেক পোস্টে নথি পরীক্ষায় পেপারওয়ার্কের পরিমাণ কমিয়ে আনা এবং টোল প্লাজায় ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন চালু করা।

পুলিসের অযথা হস্তক্ষেপ এবং পুলিসের হাতে পণ্যবাহী গাড়ির চালকরা যাতে হেনস্থার শিকার না হন তার ব্যবস্থা করা

সারা দেশে অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর চালু হলে চেক পোস্টে নথি পরীক্ষার সময় কমবে বলেও মনে করছে আইআইএম কলকাতা। সমীক্ষা বলছে, খারাপ রাস্তা, চেক পোস্টে লম্বা লাইন, পুলিসি হেনস্থার মতো সমস্যা পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অনেক বেশি। ফলে এখানে গাড়ির গতি জাতীয় গড়ের চেয়ে নীচে।

দেশে পঁয়ষট্টি শতাংশ পণ্য পরিবহন হয় সড়কপথে। তিরিশ শতাংশ পণ্য যায় রেলপথে। বাকি পাঁচ শতাংশ পণ্য যায় জল ও আকাশপথে। রেলপথে পণ্য পরিবহণের খরচ সড়কের চেয়ে অনেক কম। এ জন্য রেলে ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জলপথে পণ্য পরিবহণ বাড়াতে এনডিএ আমলে নদী সংযোগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সমুদ্র বন্দরগুলির সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়ানোর কথাও বলা হয় রেল বাজেটে। আইএমএম কলকাতার রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে কমিটি তৈরির কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতীন গড়করি। জলপথে পণ্য পরিবহণ বাড়াতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।

.