Trams in Kolkata: দেড়শো বছরের পরিষেবা, কী দোষ করল একদা কলকাতার এই লাইফ লাইন!
Trams in Kolkata: ১৯৪২ সালে ধর্মতলা থেকে বেহালা ট্রাম লাইন সম্প্রসারণ হয়। ১৯৮৭ সালে তা আরোও বৃদ্ধি পেয়ে জোকা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। এরপর শহরের কোথাও কোনোদিন আর ট্রাম লাইনের সম্প্রসারণ হয়নি
অয়ন ঘোষাল: কলকাতাকে লন্ডন বানাতে গিয়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে ঐতিহ্যবাসী ট্রাম। প্রায় থামতে চলেছে দেড়শো বছরের পথচলা। অথচ লন্ডনে এখন দৌড়য় ট্রাম। বিক্ষিপ্তভাবে যাত্রা শুরু ১৮৭৩ সালে। কলকাতায় ঘোড়ায় টানা ট্রাম নিয়মিত যাত্রা শুরু করে ১৮৮৩ সাল থেকে। সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিকরণ হয়ে যাওয়ার পর ১৯৪৩ সালের পর থেকে কলকাতা আর ট্রাম সমার্থক হয়ে যায়। যদিও বোম্বে সহ দেশের অন্যান্য কিছু শহরে ট্রাম চলত, তবে তা ছিল মূলত জয় রাইড। নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত মানুষের রুজি রুটির লড়াই রক্ত ঘামের সঙ্গে এইভাবে দেশের কোনো প্রান্তের ট্রাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়নি শিরায় উপশিরায়। ১৯৪৩ সালে হাওড়া কলকাতা মিলিয়ে শহরে মোট ট্রাম লাইনের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৬৩ কিলোমিটার। ক্রমে তা পরিণত হয় শহরের লাইফ লাইনে। বাসের মত গতি নেই। তবু পাথর বিছানো ট্র্যাকে চলা, চালকের পা দিয়ে হর্নের বদলে ঘন্টি বাজানো এই ছিমছাম দুই কামরার বাহন শহরের মনের মণিকোঠায় নিজের জায়গা পাকা করে।
আরও পড়ুন-পুরসভায় কোটি কোটি টাকার 'দুর্নীতি'! চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার তৃণমূলের...
শহরে তৈরি হয় ৮টি ট্রাম ডিপো। এগুলো হল হাওড়ার ঘাস বাগান, বেলগাছিয়া, রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস, গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ, কালীঘাট, খিদিরপুর। এগুলোতে রাতে ট্রাম থাকত এবং প্রতিদিনের যাত্রা শেষে প্রয়োজনীয় রক্ষনাবেক্ষণ এবং মেরামত হত। পাশাপাশি শহরে তৈরি হয়েছিল ট্রাম তৈরির ওয়ার্ক শপ। নোনাপুকুর ওয়ার্ক শপে ১৯৭৫ সালে CMDA এর টাকায় ২৫ টি ট্রাম তৈরি হয়। কাঠের তৈরি ট্রাম গুলির নাম ছিল সুন্দরী ট্রাম। সেটিই সম্পূর্ণ রূপে কলকাতায় জন্ম নেওয়া প্রথম ট্রাম। এরপর ১৯৮০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের টাকায় জেসপ এবং বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি বিশেষ বরাত পেয়ে ৫১ টি ইস্পাতের ট্রাম তৈরি করে। এখনও কলকাতায় যে ট্রাম চলে সেগুলোই ওই ট্রাম।
১৯৪২ সালে ধর্মতলা থেকে বেহালা ট্রাম লাইন সম্প্রসারণ হয়। ১৯৮৭ সালে তা আরোও বৃদ্ধি পেয়ে জোকা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। এরপর শহরের কোথাও কোনোদিন আর ট্রাম লাইনের সম্প্রসারণ হয়নি। ট্রাম ডিপোর পাশাপাশি শহরে ১৯৪২ সাল থেকে একাধিক ট্রাম টার্মিনাস তৈরি হয়। এগুলি হল শ্যামবাজার , বিবাদী বাগ, এসপ্ল্যানেড, গ্যালিফ স্ট্রিট, বিধাননগর, জোকা , বেহালা ট্রাম টার্মিনাল। এখানে ট্রাম আসত। ঘুরে চলে যেত। রাতে থাকত না। টার্মিনালে সাইডিং লাইন থাকত। হঠাৎ খারাপ হওয়া ট্রাম সেখানে সরিয়ে রাখা হতো। সেই শহরে থেকে গেল মাত্র ৩ কিলোমিটার ট্রাম লাইন। অথচ বিশ্বের বহু উন্নত এবং আধুনিক শহর যেমন ভিয়েনা, মিলান, বার্লিন, লিসবন, মেলবোর্ন শহরে এখনও ট্রাম চলে। তাহলে এই শহর কি দোষ করল? প্রশ্ন কলকাতা হাইকোর্ট নিয়োজিত ট্রাম পুনরুজ্জীবন কমিটির। ট্রামের যাত্রীরা এখনও অনড়। তাদের দাবি, ট্রাম তোলার একাধিক চেষ্টা এর আগেও হয়েছে। তারা হতে দেননি। আবার সেই চেষ্টা হচ্ছে। এবারও তারা বাধা দেবেন।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)