ক্যাটানিয়ায় কদিন...
ইতালি গেলে রোমের কলোয়সিয়াম, ভেনিসের গন্ডোলার পাশাপাশি অন্যতম জনপ্রিয় টুরিস্ট আকর্ষণ হল সিসিলি।
ইতালি গেলে রোমের কলোয়সিয়াম, ভেনিসের গন্ডোলার পাশাপাশি অন্যতম জনপ্রিয় টুরিস্ট আকর্ষণ হল সিসিলি। আর সেই সমুদ্র-ঘেরা সিসিলির পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ক্যাটানিয়া। গোটা প্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। প্রাচীন ইতিহাস এবং সামুদ্রিক অবস্থান কাটানিয়াকে আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট করে তুলেছে বহু দিন ধরেই।
কাটানিয়ার সবথেকে বড় আকর্ষণ হল এই শহরের গায় গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট এটনা। মাঝে মাঝেই অগ্ন্যুৎপাত হয় এখানে। ক্ষয়ক্ষতিও যথেষ্ট হয়েছে অতীতে। সবথেকে ধংসাত্মক অগ্ন্যুৎপাতটি হয়েছে ১৬৬৯ সালে। যা গোটা শহরটিকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। তার পর ফিনিক্স পাখির মতো ফের পূর্ণাঙ্গ শহর হয়ে ফুটে উঠেছে ক্যাটানিয়া।
ক্রমাগত অগ্ন্যুৎপাত ও লাভার কারণে শহরের অনেক পুরনো বাড়ি-ই ভেঙে পড়েছে। ধ্বংসচেতা প্রকৃতির সে রূপও বড় মায়াময়, অভিনর তো বটেই। শহরের মূল `টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন` হল বিখ্যাত এলিফ্যান্ট ফাউন্টেন। এছাড়া আছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘরবাড়ি এবং অগ্ন্যুৎপাতের ভূতাত্ত্বিক নানা সাক্ষ্য। গোটা শহরটাই সাজানো নানা ধরণের বাগানে। আর আছে শহরের টাউন হলের সামনের বিশাল খোলা চত্বর, যা প্রতি রাতে সেজে ওঠে মায়াবী আলোয়। হরেক মানুষ-হাসি-গান-গল্প-আড্ডায় সেই চত্বর জমজমাট হয়ে ওঠে প্রতি রাত। আমোদগেরে ইতালিয়দের জমজমাট কলোনি। এই চত্বর ঘীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্তঁরা, পাব, ক্যাফে। বন্ধু-বান্ধব, প্রেমিক-প্রেমিকা, বৃদ্ধের দল, আড্ডাবাজ ছাত্র হরেক কিসিমের মানুষ মিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটানো চলে এখানে। আড্ডাবাজ জাতি হিসেবে সিসিলিয়ানরা কেন সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত তা এই চত্বরে না আসলে ঠিক বোঝা যায় না।
ইতালি গেলে সেদেশের অথেন্টিক খাবার এবং কফি (বিশেষ করে কাপুচিনো) খেতে ভুলবেন না। বিশ্বায়নের সুফলে আমরা `গ্লোবাল ভিলেজে` থাকতে থাকতে এবং দোরগোড়ায় রেখে যাওয়া পিৎজা কাপুচিনো খেতে খেতে মনে করি আহা আমার জানলাময় বুঝি ইতালির আকাশ। ভুল। বিশ্বায়ন এক টেলিফোনে আপনার দরজায় পিৎজা ডেলিভেরির ব্যবস্থা করতে পারে, কিন্তু শতাব্দী ধরে গড়ে ওঠা নিখুঁত রাধুনীকে টুপ করে কলকাতায় এনে দিতে পারে না। ইতালিতে বসে ইতালির খাবার খেলে বুঝবেন পিৎজা বলে এতদিন যা খেয়েছেন তা খেষ্ট রুটিতে টোমাটো সস বই কিচ্ছু নয়।
টুরিস্ট স্পট হওয়ার কারণে কাটানিয়াতে হোটেলের অভাব নেই। এছাড়াও আছে কম খরচের অনেক হস্টেলও। গ্রামের দিকে ঘুরতে যেতে চাইলেও অভাব পড়বে না থাকার জায়গার। হোটেল আছে। আছে বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট-ও।
কাটানিয়াকে কেন্দ্র করেই আপনি ঘুরতে পারেন আশেপাশের আরো নানা অঞ্চলে। তাওরমিনা, জিয়ারদিনি নাক্সোস, কাভা গ্রান্দে, প্যাটেরনো, পিয়াজ্জা আরমেরিনা এরকম অনেক ছোট ছোট পাহাড়ী জংগলে ঢাকা টুরিস্ট স্পট আছে, যা প্রাকৃতিক শোভায় সাজিয়ে রেখেছে নিজেদের।
কাটানিয়ায় যেতে হলে সবথেকে সহজ উপায় হল রোম পর্যন্ত প্লেন-এ আসা, সেখান থেকে প্লেন চেঞ্জ করে কাটানিয়া আসা। রোম থেকে ১ ঘণ্টা লাগে প্লেনে। এছাড়া রোম থেকে স্টিমার করেও আসা যায়।