বন্য বিনসরের বুকে
কমলা লেবু সূর্যটা বিনসরের জঙ্গলের পিছন দিকে সন্ধে হলে ঘুমোতে যায়। হাজার ঝিঁঝিঁর ডাকে তাল মিলিয়ে চাঁদের বুড়ি চড়কা কাটে বিনসারের রাতে। আবার সক্কাল বেলা নন্দাদেবী, ত্রিশূল, শিবলিঙ্গ, কেদারনাথ চূড়োর ফাঁক দিয়ে একগাল হেসে সোনালী আলো ছড়িয়ে সূর্যটা টুক করে এসে বসে বিনসরের আকাশে।
কমলা লেবু সূর্যটা বিনসরের জঙ্গলের পিছন দিকে সন্ধে হলে ঘুমোতে যায়। হাজার ঝিঁঝিঁর ডাকে তাল মিলিয়ে চাঁদের বুড়ি চড়কা কাটে বিনসারের রাতে। আবার সক্কাল বেলা নন্দাদেবী, ত্রিশূল, শিবলিঙ্গ, কেদারনাথ চূড়োর ফাঁক দিয়ে একগাল হেসে সোনালী আলো ছড়িয়ে সূর্যটা টুক করে এসে বসে বিনসরের আকাশে।
শান্ত নিঝুম হিমালয়ের কোলে জংলী সুন্দর বিনসার। উত্তরাখণ্ডের আলমোরা থেকে ৩৩ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২১২ মিটার উঁচুতে এই শৈলজনপদ। কুমায়ুনের চাঁদ রাজাদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল বিনসর। এর একদিকে নন্দাদেবী, রানির মত সিংহাসনে আসীন। সঙ্গে কেদারনাথ, চৌখাম্বা, ত্রিশূলের মত সভাসদদেরও গর্বিত অবস্থান। বিনসর থেকে শান্ত নিস্তব্ধ আলমোড়া উপত্যকার বুক চিরে ওঠা বরফের টুপি পড়া হিমালয়ের শৃঙ্গরাশির যে রূপ চোখে পড়ে তাকে ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। অন্যদিকে মালার মত এই জনপদকে ঘিরে রেখেছে অ্যালপাইন গাছের গহীন অরণ্য। পাহাড়ি রাস্তার দুপাশে মহীরূহের শরীর জড়িয়ে নরম ফার্নের সবুজ গালিচা পরিবারের উদ্ধত বিস্তার। গাছের ডালে ডালে পরগাছা ঝুলন্ত মস, নিজের আনন্দেই দুলতে থাকে। কত শত রঙের বুনোফুলের আদর মিশে থাকে এই ছোট্ট পাহাড়ি শহর। বিনসর কখনই কিন্তু ব্রিটিশদের দাক্ষিণ্যের ধার ধারেনি । অনন্য ভারতীয় সংস্কৃতির হাত ধরে বিনসরের জীবনযাপন। এই জনপদের প্রতিটি বাঁকে খাঁটি দেশীয় সভ্যতার ছাপ। আর এখানেই অনান্য সব পাহাড়ি শহরগুলোর থেকে একেবারে আলাদা সে।
১৯৮৮ সালে বিনসরের পাহাড়ি জঙ্গল ওয়াইল্ডলাইফ স্যানচুয়ারির মর্যাদা পায়। গভীর অরণ্যে সূর্যের আলোছায়ার মধ্যে ওক, পাইন, দেওদর, রডোডেনড্রনের সঙ্গেই ব্রাওফাইটস, টেরিডোফাইটসদের সাহসী সহাবস্থান। প্রায় ২০০ টি বিভিন্ন প্রজাতির রঙ বেরঙের পাখির জানা অজানা ডাক এই অরণ্যের নৈস্বর্গিক নিস্তব্ধতাকে খানখান করে দিয়ে যায়। চিতল, বার্কিং ডিয়ার, সেরো, লেঙ্গুর, লেপার্ড, কালো ভল্লুক, সজারু, উড়ুক্কু কাঠবেড়ালীর মত আর কত পশুদের শান্তির বাড়িঘর এই জঙ্গল। উচ্চতা আর আবহাওয়ার জন্য চোরাশিকারিদের ` কৃপাদৃষ্টি` থেকে কিছুটা বেঁচে রক্ষা পেয়েছে বিনসরের অভয়ারণ্য। নেই গাড়ির ব্যবাস্থা। তাই পায়ে হেঁটে বাড়তি ধকল নিতে নারাজ পর্যটকরাও কিছুটা কষ্টের এই অভয়ারণ্য সাফারি থেকে নিজেদেরকে পারতপক্ষে সরিয়েই রাখেন। ফলে অকারণ চেঁচামেচি, গাছের কোনে চিপসের বোতল আর ঠাণ্ডা পানীয়ের প্লাস্টিক বোতলের গড়াগড়ি খাওয়া থেকে অনেকটাই মুক্ত বিনসর। গাছপালা, পশুপাখি সঙ্গে করে এই অভয়ারণ্যের সুখের সংসার।
শহুরে যান্ত্রিকতা, তথাকতিত উন্নত শৈলশহরের আধুনিকতা থেকে যোজন দূরে বিনসরের মননের অবস্থান। প্রকৃতিকে সত্যি ভালবেসে একেবারে বুনো প্রকৃতির সন্ধান যাঁরা করেন বিনসর তাদের মনের আর চোখের ক্ষিদে মেটাবেই।
যাওয়ার পথ: কলকাতা থেকে কাঠগোদাম এক্সপ্রেসে চেপে কাঠগোদাম স্টেশন। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে বিনসর। এছাড়াও কলকাতা থেকে লখনউ হয়েও সেখান থেকে কাঠগোদাম গিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় বিনসরে।
থাকার হদিশ: কুমায়ুন বিকাশ নিগমের একটি যাত্রী আবাস রয়েছে এখানে। অবস্থানের দিক থেকে যা সেরা। ১৫০০ টাকা থেকে এখানে ডবল বেডরুম পাওয়া যায়। এছাড়াও বেশ কয়েকটি দামি রিসর্ট আর হোটেল গড়ে উঠেছে বিনসরের আশেপাশে।