Mother’s Day: এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই! ঘুম-ভাঙা চোখে মায়ের প্রথম পরশেই দিন শুরু

মা পাশটিতে আছেন, মানে, আমরা স্বর্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি। মা মনের পাশটিতে অটল দাঁড়িয়ে আছেন মানে, আমরা এক নিটোল ঝরনার সজলধারার পাশে বসে বসে স্নিগ্ধ হচ্ছি।

Updated By: May 8, 2022, 11:47 AM IST
Mother’s Day: এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই! ঘুম-ভাঙা চোখে মায়ের প্রথম পরশেই দিন শুরু
ছবি সৌজন্য : সোশ্যাল মিডিয়া

সৌমিত্র সেন

আমাদের জীবনে 'মা' এক আশ্চর্য বিষয়! যেমন মহৎ তেমনই সহজ; যেমন উত্তুঙ্গ, তেমনই অনাড়ম্বর; যেমন অলৌকিক, তেমনই সাধারণ। মা আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি পর্বে এমন ওতপ্রোত যে, সবসময় মায়ের উপস্থিতি হয়তো তত সহজে অনুভূত হয় না, কিন্তু মা সাময়িক অনুপস্থিত থাকলে বোঝা যায় তাঁর সম্যক গুরুত্ব।

মায়ের আঁচল ধরেই আমাদের বড় হওয়া। একটা বয়স পর্যন্ত আমরা ২৪ ঘণ্টাই মায়ের উপর নির্ভরশীল থাকি। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই বহির্নির্ভরতাটা হয়তো ক্রমশ কমে, কিন্তু আমাদের অজান্তেই আমরা মায়ের সঙ্গে নিবিড় জটিল স্পন্দনে চিরটাকাল আশ্লিষ্ট থেকে যাই। বড় হওয়ার পরে, পড়াশোনা বা পরবর্তী ক্ষেত্রে চাকরিবাকরির কারণে হয়তো মায়ের সঙ্গে আমাদের নিত্যব্যবহারটা কমে আসে, সারাদিনে হয়তো অল্পস্বল্পই কথাবার্তা হয়। কিন্তু আমাদের দিন শুরু হওয়া থেকে শেষ হওয়া-- ২৪ ঘণ্টার এই বৃত্তে আমাদের প্রতিটি কাজে মা নীরবে-নিভৃতে অনুস্যূত হয়ে থাকেন। 

অথচ, বাইরে থেকে আমরা দেখি, মা হয়তো খুব ছোটখাটো সব বিষয়ের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিনে যুক্ত থাকেন। হয়তো ঘুম থেকে ওঠার পরে হাসিমুখে এককাপ চা বাড়িয়ে দেওয়া শুধু, হয়তো স্নানের আগে তোয়ালেটা এগিয়ে দেওয়া কিংবা কলেজে বেরনোর সময়ে দরকারি খাতাটা হয়তো সহসা সামনে এনে হাজির করা, হয়তো অফিসে বেরনোর সময়ে রুমালটা হাতের কাছে জুগিয়ে দেওয়া। তারপর তো মা সারাদিন সংসারের অঢেল কাজে ব্যস্ত। এদিকে আমরাও আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বন্ধু-বান্ধব, পড়াশোনা, আড্ডা, অফিস-কাছারি নিয়ে সদাব্যস্ত। মায়ের সঙ্গে মুখোমুখি দেখাই-বা কতটুকু, কথাই-বা কতক'টি। 

কিন্তু মন জানে, মা আছেন! মা আছেন মানে, একটা বড় অবলম্বন, একটা মরমি শান্তি, একটা নিভৃত আশ্রয়, একটা ললিত সঙ্গীত, একটা স্নিগ্ধ ছন্দের সদা শীলিত উদ্ভাস! সারাদিনের পর হা ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে টেনে আবার যখন বাড়ি ফিরি তখনও মায়ের নীরব কিন্তু মুখর সাহচর্য। মা যেন আমাদের নানা রোগক্ষতলাঞ্ছিত দুঃস্থ দুস্তর জীবনে অলৌকিক এক 'হিলিং টাচ'! আমরা সেই স্পর্শে উজ্জীবিত হই, প্রাণিত হই, লালিত হয়, জারিত হই সারাটা বিধুর জীবন।

সেই যে সকালে ঘুম-ঘুম চোখে মাকে দেখেছিলাম এককাপ চা হাতে, সেই শুশ্রূষাটা যেন সারাদিন ধরে আমাদের সঙ্গে থাকে। কবীরের গানের সমস্ত ডিকশন ওলটাপালট করে তখন মাকে দেখেই যেন গলা ছেড়ে গেয়ে উঠতে চাই-- 'প্রথমত আমি তোমাকে চাই/ দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই/ তৃতীয়ত আমি তোমাকে চাই/ শেষ পযর্ন্ত আমি তোমাকে চাই।/... ... ...
এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই'!

কবীরের গানের প্রসঙ্গ যখন উঠেই পড়ল, তখন হয়তো আরও একটু এগিয়ে ওই গানের আরও কিছু চরণ স্মরণ করা যেতেই পারে। স্মরণ করতে গিয়ে আমরা হয়তো আশ্চর্য হব যে, সেখানে যা লিখছেন নাগরিক কবিয়াল তা কেমন অক্লেশে অনায়াসে আমাদের মাতৃ-অনুভূতির রসে মথিত হয়ে উঠছে! সত্যিই তো মা আমাদের 'নিঝুম অন্ধকারে', মা আমাদের 'রাত-ভোরে', মা আমাদের 'সকালের কৈশোরে' আবার 'সন্ধের অবকাশে'ও, মা আমাদের 'বৈশাখী ঝড়ে' আবার 'আষাঢ়-মেঘে', মা আমাদের জীবনের সমস্ত 'অকাল বোধনে'ও সদা স্বরাট, সদা বিরাট! সত্যিই তো 'দেখা না দেখায়' আমরা সারাটা দিন ধরে মা'কেই তো চাই; 'না বলা কথা'তেও তো আমরা মা'কেই ফিরে ফিরে পেতে চাই!

মা পাশটিতে আছেন, মানে, আমরা স্বর্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি। মা মনের পাশটিতে অটল দাঁড়িয়ে আছেন মানে, আমরা এক নিটোল ঝরনার সজলধারার পাশে বসে বসে স্নিগ্ধ হচ্ছি। সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে মা যখন শাড়ির আঁচলে তাঁর হলুদরাঙা হাতটি মুছে রান্নাঘরের দরজায় হাসিমুখে এসে দাঁড়িয়ে  আমাদের বিদায় দেন, তখন কি দিনের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী ছবিটি রচিত হয় না? অথবা রাতে ফিরতে দেরি হলে মা যখন দরজা ধরে আমাদের অপেক্ষায় অধীর দাঁড়িয়ে থাকেন, তখনও কি পৃথিবীর সব চেয়ে করুণ দৃশ্যটিই রচিত হয় না?

.