২০৪৮-এর মধ্যে মাছ শূন্য হবে পৃথিবীর সব সমুদ্র
ধ্বংসের নয়া সাল। ২০৪৮।
ওয়েব ডেস্ক: ধ্বংসের নয়া সাল। ২০৪৮।
আর দু'যুগ পরেই বাঙালির পাত ইলিশ শূন্য হবে। ম্যাকারেল মিলবে না আর ইংলিশ লাঞ্চের সঙ্গে। রসনা তৃপ্ত করতে পার পাওয়া যাবে না পমফ্রেট, ট্রাউট, বাস। আর মাত্র ২৪ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর সমদ্রগুলি থেকে উধাও হবে মাছ। ইকোলজিস্ট ও ইকোনমিস্টদের একটি আন্তর্জাতিক দল অন্তত এমনটাই অনুমান করছে।
দূষণ, বাসস্থান ধ্বংস, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং ওভারফিসিং-এর কোপে পড়ে পৃথিবী থেকে চিরতরে লুপ্ত হতে চলেছে সামুদ্রিক বা নোনা জলের মাছেদের প্রজাতি (স্পিসিস) গুলি।
হ্যালিফক্সের ডালহাউসি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী বরিস ওয়ার্মের নেতৃত্বাধীন এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন ও পানামার বহু গবেষক।
তাঁরা জানিয়েছেন তাঁরা যা অনুমান করেছিলেন লাগাতার গবেষণার ফলে বুঝতে পেরেছেন বাস্তবটা আরও ভয়ঙ্কর। যে হারে সামুদ্রিক মাছেদের বিভিন্ন প্রজাতিগুলি বিলুপ্ত হচ্ছে তা রীতিমত ভয়াবহ। ধীরগতিতে নয়, বরং এই ধ্বংসলীলা চলছে ভীষণ দ্রুততার সঙ্গে।
গবেষকরা আশঙ্কা করছেন যে ভাবে বায়োডায়ভার্সিটির পতন হচ্ছে সামুদ্রিক পরিবেশ আর মানুষের জীবনধারা বহন করতে পারবে না।
ইতিমধ্যেই ২৯% খাদ্যযোগ্য সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি হ্রাস পেয়েছে। সামগ্রিক ভাবে সামুদ্রিক মাছের ক্ষেত্রে এই হারটা ৯০%।
সামুদ্রিক মাছের গুরুত্ব কিন্তু শুধু আমাদের কাবার প্লেটেই শেষ হয়ে যায় না। সামুদ্রিক মাছেরা জলের বিষাক্ত পদার্থ ফিল্টার করে। শোরলাইন রক্ষা করে। রেড টাইডের মত অ্যালগাম ব্লুম প্রতিরোধ করে। অর্থাৎ সামুদ্রিক মাছেদের অবর্তমানে আসলে ধ্বংস হয়ে যাবে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র। বাড়বে দূষণ। সমুদ্রে বাস্তুতন্ত্র, বায়োডায়ভার্সিটির পতন সরাসরি প্রভাব ফেলবে মানুষের সভ্যতার উপর। সোজা কথায় মানুষ সভ্যতা, জীবন সরাসরি ধ্বংসের খুব কাছাকাছি চলে আসবে।
সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে অত্যাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি বাড়িয়ে তুলছে ব্যাপকহারে সমুদ্র দূষণ। এখনই তা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ফলাফলা মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
ভিন্ন ভিন্ন সামুদ্রিক পরিবেশে ৩২ রকমের পরীক্ষা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবী জুড়ে ১২টি সামুদ্রিক অঞ্চলের ১,০০০ বছরের ইতিহাসের উপর সমীক্ষা চালিয়েছেন। ৬৪টি বৃহৎ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ফিশরি ডেটা নিয়ে কাজ করেছেন।
গবেষকরা জানিয়েছেন সমস্ত রকম সামুদ্রিক প্রাণ গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রগুলির বৈচিত্র বেঁচে থাকার রশদ সরবারহ করে। সমুদ্র তীরবর্তী যে অঞ্চলগুলিতে জীব বৈচিত্র সর্বাধিক, সেই সব অঞ্চলগুলি সর্বাপেক্ষা স্বাস্থ্যকর।
তবে গবেষকরা জানিয়েছেন এখনও খুব দেরি হয়ে যায়নি। এখনই যদি সারা বিশ্বজুড়ে সামুদ্রিক প্রাণীদের রক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে হয়ত টিকে যেতে পারে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র। আর তার সঙ্গেই টিকে যেতে পারে মানব সভ্যতাও।
SOURCES: Worm, B. Science, Nov. 3, vol 314: pp 787-790. News release, SeaWeb. News release, American Association for the Advancement of Science.