আডবাণীর রাজনৈতিক কেরিয়ার
দীর্ঘদিন ধরেই মোদীবিরোধী বলে পরিচিতি। শেষপর্যন্ত সামাল দিতে না পেরে পদত্যাগকেই প্রতিবাদের ভাষা বেছে নিলেন আডবাণী। তাতেই আপাতত কাহিল বিজেপি। বহু উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে উঠে আসা প্রবীণ এই রাজনীতিকের বেড়ে ওঠার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আপসহীন মনোভাব। বোঝাপড়ায় গিয়েছেন ঠিক ততটা, যতদূর পর্যন্ত নিজের ন্যায়ের আদর্শ অটুট থেকেছে। সেই সীমা লঙ্ঘন করলেই সরে দাঁড়িয়েছেন। নিজেই তৈরি করেছেন নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্। পদত্যাগেও রেখে গেলেন সেই অবিচল মনোভাবেরই স্বাক্ষর।
দীর্ঘদিন ধরেই মোদীবিরোধী বলে পরিচিতি। শেষপর্যন্ত সামাল দিতে না পেরে পদত্যাগকেই প্রতিবাদের ভাষা বেছে নিলেন আডবাণী। তাতেই আপাতত কাহিল বিজেপি। বহু উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে উঠে আসা প্রবীণ এই রাজনীতিকের বেড়ে ওঠার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আপসহীন মনোভাব। বোঝাপড়ায় গিয়েছেন ঠিক ততটা, যতদূর পর্যন্ত নিজের ন্যায়ের আদর্শ অটুট থেকেছে। সেই সীমা লঙ্ঘন করলেই সরে দাঁড়িয়েছেন। নিজেই তৈরি করেছেন নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্। পদত্যাগেও রেখে গেলেন সেই অবিচল মনোভাবেরই স্বাক্ষর।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে গরহাজির লালকৃষ্ণ আডবাণী। ৮৫ বছরের প্রবীণ নেতা কি আঁচ করতে পেরেছিলেন, মোদী-বন্দনাতেই শেষ হতে চলেছে এ বারের কর্মসমিতির সমাপ্তি অনুষ্ঠান? তখন থেকেই কি রাজনৈতিক জীবনে ইতি টানার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন বিজেপির লৌহপুরুষ? না হলে কেন মোদীকে প্রচার কমিটির প্রধান ঘোষণা করার দিন, নিজের ব্লগে মহাভারতের কথা লিখবেন তিনি? তুলবেন পিতামহ ভীষ্মর কথা? আডবাণীর গোটা রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গেও পিতামহ ভীষ্মের কী আশ্চর্য মিল! ১৯২৭-এ করাচিতে জন্ম। স্কুলের পাট চুকিয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে ভর্তি হন মুম্বই ইউনিভার্সিটিতে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়ে, ১৯৪২ রাজনীতিতে প্রবেশ লালকৃষ্ণ আডবাণীর। যোগ দেন রাষ্ট্রীয় স্বয়মসেবক সঙ্ঘে। এরপর, আরএসএসেরই শাখা সংগঠন জনসঙ্ঘের সভাপতি হন আডবাণী।
সেটা ১৯৭৫। ১৯৭৭-এ, লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে জনতা পার্টিতে যোগ দেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। জনতা পার্টি সরকার গড়লে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হন তিনি। কিন্তু জনতা পার্টির মধ্যেকার বিরোধের জেরে দু`বছর পর মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেন তিনি। উনিশশো আশিতে জনসঙ্ঘের প্রাক্তন সদস্যদের সঙ্গে গড়ে তোলেন ভারতীয় জনতা পার্টি। ১৯৮৬-তে প্রথমবার বিজেপির সভাপতি হন তিনি। এরপর ১৯৯৩ থেকে `৯৮ এবং ২০০৪ থেকে `০৬ পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন আডবাণী। সখ্য বেড়েছে নাগপুরের সঙ্গে। হয়ে উঠেছেন আরএসএসের কাছের মানুষ। যে সম্পর্কের নিবিড়তা আরও বেড়েছে ১৯৯২, অযোধ্যায় রাম মন্দির গড়তে আডবাণীর রথযাত্রার সময়। ১৯৯১ থেকে `৯২ পর্যন্ত লোকসভায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন। ১৯৯৬ মাত্র ১৩ দিনের জন্য এনডিএ-র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হন এবং ১৯৯৮ গান্ধীনগর থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই দায়িত্ব দেওয়া হয় আডবাণীকে। ২০০২ থেকে চার পর্যন্ত ছিলেন দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী। এরপর ২০০৪ থেকে নয় পর্যন্ত আবার লোকসভায় বিরোধী দলনেতা নির্বাচিত হন আডবাণী। ইতিমধ্যে ২০০৫-এ পাকিস্তানে গিয়ে মহম্মদ আলি জিন্নাকে ধর্মনিরপেক্ষ নেতা বলে বিজেপি এবং সংঘ পরিবারের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন। সাফাই দিতে অস্বীকার করেন। এবং সেই বিতর্কের জেরেই শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সরে দাঁড়ান বিজেপি প্রধানের পদ থেকে। ২০০৯-এ নির্বাচনে ভরাডুবির পর আরএসএসের চাপে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদও ছাড়তে হয়। নতুন নেতা নির্বাচিত হন সুষমা স্বরাজ। কিন্তু এনডিএ-র চেয়ারম্যান এবং বিজেপির সংসদীয় প্রধান হিসেবে দু হাজার দশ থেকে তেরো পর্যন্ত মর্যাদা অনেকটাই অক্ষুণ্ণ ছিল বিজেপির লৌহপুরুষের। শেষ পর্যন্ত মোদী-প্রশ্নে পদত্যাগের ব্রহ্মাস্ত্র ছুঁড়ে বুঝিয়ে দিলেন বিজেপির পিতামহ ভীষ্মর যবনিকা পতন হবে শুধু তাঁরই ইচ্ছায়। অন্যের অঙ্গুলিহেলনে নয়।