মোদী, সাবধান! তেলের দামে বিপদের সংকেত
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮০ ডলার। আর সে কারণেই দেশেও এখন তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া। অদূর ভবিষ্যতে তেলের দাম আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর ঠিক সে কারণেই মাথায় হাত মোদী সরকারের।
রজত শুভ্র মুখোটি
রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে পেট্রল-ডিজেলের দর। মঙ্গলবার কলকাতায় লিটার প্রতি পেট্রল ও ডিজেলের দাম যথাক্রমে ৭৩.৯১ টাকা এবং ৬১.৮৮ টাকা। পেট্রপণ্যের এমন দর বৃদ্ধি নরেন্দ্র মোদী সরকারের জন্য যথেষ্ট অস্বস্তিকর বলে মনে করা হচ্ছে। আর এর ফল ভুগতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকেও। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও সুনিশ্চিতভাবে এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওয়াকিফহাল মহলের মতে, আগামী দিনে অশোধিত তেলের দাম বাড়বে অনেকটা। ফলে দেশের বাজারেও চড়চড়িয়ে বাড়বে পেট্রল-ডিজেলের দাম। তাই ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে এই খবর রীতিমত রক্তচাপ বাড়াচ্ছে মোদী সরকারের।
অথচ এক্ষেত্রে মোদী সরকারের শুরুর দিনগুলি কেটেছিল মধুচন্দ্রিমার মেজাজে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের গড় দাম ছিল ব্যারল প্রতি ৫৯.৩ মার্কিন ডলার। অথচ তার কিছু কাল আগেও মনমোহন সরকারের আমলে (২০১১-১৪ সময়কালে) গড় দাম ছিল ১০৮.৫ মার্কিন ডলার প্রতি ব্যারল। চাহিদা ও জোগানের চিরাচরিত সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির সমীকরণ অনুযায়ী ২০১৪ নাগাদ দাম কমেছিল তেলের। ফলে, ভারতের বাজারেও কমেছিল তেলের দাম যার রাজনৈতিক কৃতিত্ব পেয়েছিল তখনকার নতুন সরকার। তেলের দাম কমায় সেসময় মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলারের নিরিখে টাকার দাম নিয়ন্ত্রণে থাকা-সহ সার্বিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল জাতীয় অর্থনীতিতে।
কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮০ ডলার। আর সে কারণেই দেশেও এখন তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া। অদূর ভবিষ্যতে তেলের দাম আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর ঠিক সে কারণেই মাথায় হাত মোদী সরকারের। কিন্তু কেন?
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি মোট ৬ রকম ভাবে কুপ্রভাব ফেলবে ভারতীয় অর্থনীতিতে-
১) চলতি খাতে ঘাটতি বাড়বে- অশোধিত তেলের চাহিদার মোট ৮০ শতাংশই আমদানি করা হয়। ফলে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রমশ বাড়তে থাকবে চলতি খাতে ঘাটতি। উল্লেখ্য, দেশের মোট আমদানি ও রফতানি বাবদ খরচ ও আয়ের ব্যবধানই হল চলতি খাতে ঘাটতি।
২) রাজকোষ ঘাটতি বাড়বে- তেলের জন্য এবার থেকে অনেক বেশি খরচ করতে হবে কেন্দ্রকে। ফলে, দেশের মোট ব্যায় ও আয়ের ফারাক বাড়বে চড়চড়িয়ে।
৩) তেলে ভর্তুকি বাড়বে- দাম বাড়ার ফলে রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থাগুলিকে এরপর থেকে অনেক বেশি ভর্তুকি দিতে হবে কেন্দ্রকে।
৪) মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়বে- পেট্রপণ্যের দাম বাড়লে সার্বিকভাবে সব জিনিসেরই দাম বেড়ে থাকে। আর তাই মুদ্রাস্ফীতির সূচকে বিশেষ গুরুত্ব পায় পেট্রপণ্য।
৫) বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডারের স্বাস্থ্য খারাপ হবে- দাম বাড়ায় দেশে সঞ্চিত বৈদেশিক মুদ্রা আগের থেকে অনেক বেশি হারে খরচ হবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডারের স্বাস্থ্য হানি ঘটবে উল্লেখযোগ্য ভাবে।
৬) ডলারের নিরিখে টাকার দাম কমবে- নির্দিষ্ট পরিমাণ অশোধিত তেল কেনার জন্য এতদিন যে অঙ্কের টাকা খরচ করতে হত, এবার তার চেয়ে অনেকটাই বেশি খরচ হবে টাকা। আর তার ফলেই ডলারের তুলনায় অবমূল্যায়ন হবে টাকার।
দেশের অর্থনীতিতে এমন সব ঋণাত্মক প্রভাব পড়লে প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে সাধারণ জনতার। আর তার ফল ভুগতে হবে মোদী সরকারকে, এমনটাই বলছে বিশেষজ্ঞমহল।
আরও পড়ুন- রেকর্ড দাম ডিজেলের, তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে দামি পেট্রল