নিজস্ব প্রতিবেদন: সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দিরের রাস্তা খুলল। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক গত চল্লিশ দিনের শুনানি পর্ব।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

অযোধ্যা জমি মামলার চূড়ান্ত শুনানির জন্য, জানুয়ারি মাসে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি অশোক ভূষণ, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, এসএ বোবদে এবং এস আবদুল নাজির।


সওয়াল-জবাব শুরুর আগে আদালতের বাইরে মীমাংসার জন্য আরও একবার চেষ্টা করে শীর্ষ আদালত। গত ৮ মার্চ,   সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এফ.এম ইব্রাহিম কলিফুল্লাহ, আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর ও আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চুকে নিয়ে মধ্যস্থতা প্যানেল তৈরি করা হয়। দু'পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ২রা অগাস্ট শীর্ষ আদালত জানায় ৬ই অগাস্ট থেকে মামলার নিয়মিত শুনানি হবে।


১৬ই সেপ্টেম্বর, মধ্যস্থতাকারী প্যানেল ফের আলোচনা শুরুর কথা বললে, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, আদালতের বাইরে মীমাংসার চেষ্টা চলতেই পারে। তবে, এজন্য শুনানি বন্ধ রাখা হবে না। ৪০ দিন টানা শুনানির শেষে, গত ১৬ই অক্টোবর রায়দান স্থগিত রাখে শীর্ষ আদালত। শুনানি পর্বে দু-পক্ষের আইনজীবীদের উত্তপ্ত সওয়াল-জবাবে, বারবার গরম হয়ে ওঠে এজলাস। শুনানির শেষ দিনে, হিন্দু মহাসভার তরফে আদালতে জমা পড়া ব্রিটিশ আমলে অযোধ্যার জমির নকশার কপি, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান ছিঁড়ে ফেলায়, তা চরমে পৌঁছয়।


অযোধ্যার জমির অধিকার নিয়ে হিন্দু-মুসলিম দু'পক্ষেরই নিজেদের মধ্যে বিবাদ রয়েছে। তবে, আদালতে দু'পক্ষের আইনজীবীরাই কয়েকটি সাধারণ যুক্তি পেশ করেন। হিন্দুদের দাবি, বাল্মীকি রামায়ণে অযোধ্যাই রামের জন্মস্থান। এই জমিতেই রামের জন্ম হয় বলে মানুষের যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস। মুসলিম পক্ষের পাল্টা যুক্তি, বাল্মীকি রামায়ণের, আইনি ভিত্তি নেই। আদালতে কীভাবে প্রমাণ করা যাবে যে এটাই রামের জন্মস্থান?


আরও পড়ুন- মন্দির আন্দোলন করে অধরা থেকে গেল সিংহাসন, রাম লালার ডেপুটি হয়েই থাকলেন আডবাণী


হিন্দুপক্ষ দাবি করে, অযোধ্যায় মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করা হয়। মুসলিম পক্ষের পাল্টা দাবি, বিতর্কিত জমিতে মন্দিরে প্রমাণ নেই। ১৮৮৫ সালে আদালত -ও মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয়নি। পরে, হিন্দুরা রামজন্মভূমির দাবি তোলে। হিন্দুদের যুক্তি এএসআইয়ের রিপোর্টে মন্দিরের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে। শিব, পদ্ম, হনুমানের যে প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে তা প্রমাণ করে ওই জমিতে হিন্দু মন্দির ছিল।


মুসলিমদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি, এএসআই রিপোর্টের বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। পদ্মফুলের প্রতিরূপ ইসলামেও দেখা যায়। বাবরের আত্মজীবনী বাবরনামায় অযোধ্যায় মসজিদের উল্লেখ নেই বলে আদালতে হিন্দু-পক্ষ যুক্তি দেয়। মুসলিম পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি, বাবরনামার ২য় ভাগের কিছু পাতা, বহু বছর আগে খোয়া যায়। সেখানে মসজিদের উল্লেখ ছিল।



হিন্দুরা দাবি করে, অযোধ্যায় যে কাঠামো ছিল তা মসজিদের কাঠামো নয়। কারণ, সেখানে ওজু করার জায়গা ছিল না। মুসলিমদের দাবি, বিতর্কিত জমিতে নমাজ পড়া হত। নমাজের আগে ওজু করার জায়গাও ছিল। এলাকার দখল নেওয়ার জন্য, রাতের অন্ধকারে মসজিদে রামলালার মূর্তি ঢোকানো হয়।


শুনানির শেষ দিনে, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, জমির দাবি ছেড়ে দিতে রাজি বলে খবর ছড়ায়। যদিও আদালতের নির্দেশে শুনানি শেষের পর তারা নির্দিষ্টভাবে বিতর্কিত জমিতে মসজিদ তৈরির দাবি জানায়। হিন্দু মহাসভা রাম মন্দির নির্মাণ-সহ পুরো জমিটিই দাবি করে। আর নির্মোহী আখাড়া আর্জি জানায় হিন্দুদের অন্য পক্ষের হাতে জমির অধিকার গেলেও পুজো করার অধিকার তাদেরই দিতে হবে।