মন্দির আন্দোলন করে অধরা থেকে গেল সিংহাসন, রাম লালার ডেপুটি হয়েই থাকলেন আডবাণী
আজ নরেন্দ্র মোদী যা, ১৯৮০ ও '৯০-এর দশক জুড়ে হিন্দুত্বের পোস্টার বয় ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ৯২ বছর বয়সে শাপমুক্তি ৯২-এর? লালকৃষ্ণ আডবাণীর জীবনের লক্ষ্য পূরণ হল শনিবার। নিজের ৯২তম জন্মদিনের ঠিক পরের দিন। রামমন্দির আন্দোলনের প্রাণপুরুষ তিনি। অনেকটা যেন লক্ষণের মতো, রামচন্দ্রের ডেপুটি। অযোধ্যায় রামের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তবেই বুঝি তাঁর ছুটি। জীবনে যা পেয়েছেন সবই রামের ওপর ভরসা রেখে। অথচ, আত্মজীবনীতে ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর দিনটিকে জীবনের অন্যতম দুঃখের দিন বলে চিহ্নিত করেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। কারণ, আডবাণী জীবনে যা খুঁইয়েছেন, তা শুধু মাত্র ওই একটি দিনের জন্য।
আজ নরেন্দ্র মোদী যা, ১৯৮০ ও '৯০-এর দশক জুড়ে হিন্দুত্বের পোস্টার বয় ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। সঙ্ঘের কাছে নায়কের মর্যাদা পেলেও ভেঙে যাওয়া বাবরি মসজিদ, আডবাণী ও তাঁর দলকে রাতারাতি অচ্ছুত করে তুলেছিল অন্য রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। অথচ, মাত্র ২ বছর আগেই জাতীয় রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিল বিজেপি। বফর্স দুর্নীতির অভিযোগ সামনে রেখে, ভিপি সিং-কে মাঝে রেখে, বামেদের হাতও ধরে ফেলেছিল বিজেপি। কেন্দ্রে ভিপি সিংয়ের সরকারের প্রাণভোমরা ছিল ৮৪ আসনের পদ্মফুল। রামের নামেই অবশ্য সেই সরকারের ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিয়েছিলেন আডবাণীরা।
মন্দির প্রতিষ্ঠার দাবিতে রথে চড়লেন আডবাণী। সেটা ১৯৯০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। সোমনাথ থেকে শুরু হয়ে দেশের নানা রাজ্য ঘুরে , ৩০ অক্টোবর বিহারে এসে থমকাল রথ। বিহারের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব জানিয়ে দিলেন, আডবাণীকে গ্রেফতার করবেন। উত্তরে, গ্রেফতার হওয়ার ঠিক আগে সমস্তিপুরের জনসভায় যা বলেছিলেন আডবাণী, তা ইতিহাস হয়ে গেলেও আজও প্রাসঙ্গিক। রামের নামে বন্দি হয়ে, বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়ার লাগাম খুলে দিয়েছিলেন আডবাণী। তাঁর রথের পথেই এগোল বিজেপির জয়যাত্রা।
সেই বিজেপির সামনে যখন সরকার গড়ার সুযোগ এল, তখন প্রধানমন্ত্রিত্বের চেয়ার তাঁকে ছেড়ে দিতে হল অটলবিহারি বাজপেয়ীকে। মসজিদ ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত তিনি। আজীবন থেকে গেলেন ডেপুটি হয়ে। নর্থ ব্লকেও বাবরি মসজিদের ছায়া তাড়া করল তাঁকে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ছুটতে হল লিবারহান কমিশনের তলবে। রামের নামে সাফল্য এনেও আডবাণীর কাছে, সাফল্যের ফল অধরাই থেকে গেল।
শনিবার সম্ভবত জীবনের সেরা জন্মদিনের উপহার পেলেন রাম মন্দির আন্দোলনের প্রাণপুরুষ। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ,''আজ স্বপ্নপূরণ হয়েছে। রাম মন্দির নির্মাণের গণআন্দোলনে আমাকেও অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন ঈশ্বর। স্বাধীনতা পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় আন্দোলন। সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে তা সার্থক হল।''
LK Advani: It is a moment of fulfillment for me because God Almighty had given me an opportunity to make my own humble contribution to the mass movement, the biggest since India’s Freedom Movement, aimed at the outcome which SC's verdict today has made possible. #AyodhyaJudgment https://t.co/3ri1Uuu74q
— ANI (@ANI) November 9, 2019
২.৭৭ একরের যে জমিতে আডবানি আজকের মহীরুহ, বিজেপির বীজ পুঁতেছিলেন, অবশেষে সেই জমির অধিকার পেলেন রামলালা। সেই রামলালা, যার জন্য তাঁকে, আজীবন ডেপুটি হয়েই থাকতে হল।
আরও পড়ুন- ইতিহাসে আজ সোনালি অধ্যায়, নতুন ভারতে ভয়,তিক্ততা ও নেতিবাচক ভাবনার ঠাঁই নেই: মোদী