Coromandel Express Accident: `সেনায় কাজ করেও এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়নি!` মোবাইলের আলোয় ২৮ জনকে উদ্ধার, শিউরে উঠছেন রঞ্জন
দুর্ঘটনার জেরে বহু দেহ তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। দেহগুলির এমন অবস্থা যে কাউকে চিনতে পারা যাচ্ছে না। এরকম বহু দেহ পড়ে রয়েছে। বাহানাগা অস্থায়ী মর্গের বাইরে এখনও অসহায় মানুষদের ভিড়। সকলেই ছবি হাতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিঁখোজ পরিজনকে।
পিয়ালি মিত্র: সেনাবাহিনীতে ১৮ বছর কাজ করেছেন। হেলিকপ্টার অপারেশনেও যুক্ত ছিলেন। উরি বেস ক্যাম্প থেকে কেদারনাথের বিপর্যয়, সবসময়ই উদ্ধারকাজে নিযুক্ত ছিলেন বাহানাগার বাসিন্দা দীপক রঞ্জন বেহরা। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার বীভত্সতায় তিনিও শিউরে উঠছেন। সাফ বলছেন, সেনাবাহিনীতে কাজ করলেও এমন অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি তাঁর। বাহাঙ্গা বাজারে ভয়ংকর রেল দুর্ঘটনার পর নিজের হাতে উদ্ধার করেছেন ২৮ জনকে। এক হাতে ধরা মোবাইল। সেই মোবাইলের টর্চ জ্বেলে সেই আলোতেই রাতের অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে উদ্ধার করেছেন দুর্গতদের। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় যুবকরা। তাঁদেরকে সঙ্গে নিয়েই অসাধ্যসাধনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে আরও এক রাত। এখনও চোখ বুজলে সেই ভয়ংকর ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠছে। দু-চোখের পাতা এক করতে পারছেন না রঞ্জন। বীভত্স সেই অভিজ্ঞতা! কেড়ে নিয়েছে রাতের ঘুম। এখনও রাতে ঘুমোতে পারছেন না।
ওদিকে দুর্ঘটনার জেরে বহু দেহ তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। দেহগুলির এমন অবস্থা যে কাউকে চিনতে পারা যাচ্ছে না। এরকম বহু দেহ পড়ে রয়েছে। বাহানাগা অস্থায়ী মর্গের বাইরে এখনও অসহায় মানুষদের ভিড়। কেউ ছুটে এসেছেন পাঁশকুড়া থেকে। কেউ বিহার থেকে। সকলেই ছবি হাতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিঁখোজ পরিজনকে। অসহায় দাদা জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনার রাতে একজন লোক ফোন তুলে জানিয়েছিলেন তাঁর ভাইকে হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছেন। তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ নেই ভাইয়ের। কটক, জলেশ্বর, বালেশ্বরের সব হাসপাতাল খুঁজে ফেলেছেন। কিন্তু ভাইয়ের কোনও খোঁজ নেই।
শুক্রবার সন্ধ্যা ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় চেন্নাইগামী আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ১২৮৪১ চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস হাওড়ার শালিমার থেকে দুপুর বেলায় রওনা দেয়। তারপর সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে নাকি একটি মালগাড়িকে ধাক্কা মারে। মালগাড়ির সঙ্গে ট্রেনটির সংঘর্ষ এতটাই জোরালো ছিল যে করমণ্ডলের ইঞ্জিন মালগাড়ির উপর চেপে যায়। ৩টি বগি বাদে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সব কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। লাইনচ্যুত করমণ্ডলের কামরার সঙ্গে ধাক্কা লেগে আবার ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসেরও বেশ কয়েকটি কামরা বেলাইন হয়ে যায়। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৯৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত প্রায় ৬৫০।
দুর্ঘটনার পরই একাধিক হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। হাওড়ার হেল্পলাইন নম্বর - ০৩৩ ২৬৩৮২২১৭, খড়গপুরের হেল্পলাইন নম্বর - ৮৯৭২০৭৩৯২৫, ৯৩৩২৩৯২৩৩৯, বালেশ্বরের হেল্পলাইন নম্বর - ৮২৪৯৫৯১৫৫৯, ৭৯৭৮৪১৮৩২২, শালিমারের হেল্পলাইন নম্বর - ৯৯০৩৩৭০৭৪৬, চেন্নাইয়ের হেল্পলাইন নম্বর - ০৪৪ ২৫৩৩০৯৫২/০৪৪-২৫৩৩০৯৫৩/০৪৪-২৫৩৫৪৭৭১, ভদ্রক- ৮৪৫৫৮৮৯৯০০, কেওনঝড় রোড- ৮৪৫৫৮৮৯৯০৬, কটক- ৮৪৫৫৮৮৯৯১৭, ভুবনেশ্বর- ৮৪৫৫৮৮৯৯২২, খুরদা রোড- ৬৩৭০১০৮০৪৬।
আরও পড়ুন, Coromandel Express Accident: হাড়হিম করা দুর্ঘটনার দেড়দিন পর কী পরিস্থিতি ঘটনাস্থলের? কী জানাল রেল?