ওদের পরিচয় `ডি-ভোটার`! ওরা কোথা থেকে এসেছে?
কেন তারা ডি-ভোটার? কেউই কখনও ব্যাখ্যা করতে আসেনি। কয়েকশো কিলোমিটার দূর থেকে একরাশ সন্দেহ উড়ে এসেছে শুধু।
কমলিকা সেনগুপ্ত
নাগরিকপঞ্জীতে নাম নেই। রাষ্ট্র বলছে, ওরা সকলেই ডি-ভোটার। অর্থাত্, সন্দেহজনক নাগরিক। যে মাটির সঙ্গে আত্মার যোগ, সেখানেই রাতারাতি ভিনদেশির তকমা? হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে এই ডি-ভোটার শব্দটা। এরপর তাহলে কী? শেষ পর্যন্ত কি ঠিকানা হবে ডিটেনশন ক্যাম্প?
ডি ভোটার মানে কী?
ডি ভোটার, অর্থাত্ ডাউটফুল ভোটার বা সন্দেহজনক নির্বাচক। এর মানে, যাদের নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণ নেই, তেমন ভোটার। ১৯৯৭ সালে অসমে প্রথম এই ডি-ভোটার শনাক্তকরণ শুরু হয়। এর মাধ্যমে অসম সরকারকে 'বৈধ নাগরিকদের' চিহ্নিত করার নির্দেশ দেয় জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই সময় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষকে ডি-ভোটার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারে ৩১০০ জন ডি-ভোটারকে ভিনদেশি বলে ঘোষণা করা হয়। এরপর গৌহাটি হাইকোর্টের নির্দেশে অনেককে ডিটেনশন ক্যাম্পেও তুলে আনা হয়। ২০১১ সালে ডি-ভোটারদের ভোটাধিকার খারিজ করা হয়। তবে তাতেও অবশ্য দ্বন্দ্ব মেটেনি। কেন তারা ডি-ভোটার? কেউই কখনও ব্যাখ্যা করতে আসেনি। কয়েকশো কিলোমিটার দূর থেকে একরাশ সন্দেহ উড়ে এসেছে শুধু।
এমন পরিস্থিতিতে চাপা আতঙ্কে থমথমে গ্রাম। চায়ের দোকান থেকে খেতের ধারের বাঁশের মাচা। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ফিসফাস। টুপটাপ বৃষ্টিতে, বর্ষার হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে একটাই শব্দ। ডি-ভোটার! যেমন, অসমের নওদা জেলার নেলি। এই জনপদে পৌঁছে গিয়েছে জি ২৪ ঘণ্টা। সেখানে যেতেই চোখে পড়ে অসংখ্য এমন মানুষকে যাঁদের এই মাটিতে জন্ম, এই মাটির সঙ্গেই আত্মিক যোগ। তবুও এখানকার বহু এইসব মানুষগুলিই রাষ্ট্রের চোখে সন্দেহজনক। প্রশ্ন মূলত, ওরা কি আদৌ এই দেশের নাগরিক? না কি ভিনদেশি? ওরা কারা? কোথা থেকে এসেছে? কাগজ খুঁজছে রাষ্ট্র। ফলে অস্তিত্বের চরম সংকটই এখন ঘোর বাস্তবতা এই মানুষগুলির জীবনে।
এবার তাহলে কী? রাষ্ট্রের সন্দেহ কী টেনে নিয়ে যাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে? হাতে এখনও মাটির গন্ধ। আর বুকের ভিতরে দম আটকে আসা প্রশ্ন। আমি কে?
উল্লেখ্য, বুধবারই দেশের মুখ্যনির্বাচন কমিশনার ওমপ্রকাশ রাওয়াত জানান, অসমের নাগরিক পঞ্জির খসড়া থেকে বাদ পড়া ৪০ লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার বজায় থাকবে। অর্থাত্, যেসব মানুষ অতীতে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। ২০১৯ সালের লোকসবা ভোটের প্রাক্কালে আগামী জানুয়ারিতে সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।