এফডিআই নিয়ে মন্তব্য নয়, মার্কিন কনসাল জেনারেলকে অমিত মিত্র

এফডিআই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চান। বৈঠকের আগে হিলারি ক্লিন্টন একথা জানালেও বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী জানালেন এনিয়ে কোনও কথা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন বিদেশসচিবের গতকালের বৈঠককে কেন্দ্র করে এফডিআই নিয়ে পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্তরে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।

Updated By: May 8, 2012, 12:15 AM IST

এফডিআই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চান। বৈঠকের আগে হিলারি ক্লিন্টন একথা জানালেও বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী জানালেন এনিয়ে কোনও কথা হয়নি। মার্কিন কনস্যুলেটের অফিস থেকে বলা হল খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে মার্কিন বিদেশসচিবের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা হয়েছে। প্রেস বিবৃতি থেকে এই অংশটি বাদ দেওয়ার জন্য কলকাতায় মার্কিন কনসাল জেনারেলকে চিঠি পাঠালেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সবমিলিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন বিদেশসচিবের গতকালের বৈঠককে কেন্দ্র করে এফডিআই নিয়ে পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্তরে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন বিদেশসচিবের বৈঠকে ছায়া ফেলল এফডিআই বিতর্ক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দিতে পারেনি কেন্দ্র। বিষয়টির সঙ্গে আমেরিকার স্বার্থ জড়িয়ে থাকায় হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে তাঁর এনিয়ে কথা হয় কিনা সেদিকে নজর ছিল সারা দেশের। সোমবার সকালে লা মার্টিনিয়রে একটি অনুষ্ঠানে মার্কিন বিদেশসচিব জানান, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এফডিআই নিয়ে আলোচনা করতে চান। তাঁর বক্তব্য ছিল, "বহির্বিশ্বের কাছে ভারতের বাজার যত উন্মুক্ত হবে, এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান তত উন্নত হবে। বাড়বে সুযোগও। কিন্তু, আমি রাজনীতিটা বুঝি। আমি এটাও বুঝতে পারি, এই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা কঠিন। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আমি চাই, বহুজাতিক সংস্থাগুলির কাছে ভারত তার বাজারকে আরও বেশি উন্মুক্ত করুক। এফডিআই এবং অসামরিক পরমাণু সমঝোতা নিয়ে আমরা আরও বেশি আলোচনা চাইছি।"  কিন্তু, তাঁর সঙ্গে বৈঠক শেষে হিলারি ক্লিন্টন শহর ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি এই বৈঠকে।
এরপর এক বিবৃতিতে কলকাতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেলের দফতর থেকে জানানো হল ঠিক এর উল্টো কথা। বলা হল,  মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উষ্ণ, উদ্দীপ্ত এবং প্রাণবন্ত আলোচনা উপভোগ করেছেন। বিদেশসচিব বলেছেন, জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে যে কৌশলগত আলোচনা হওয়ার কথা, তার দিকে তিনি তাকিয়ে রয়েছেন এবং পরবর্তী আলোচনার আগে কলকাতায় আসতে পেরে তিনি খুশি। খুচরো ব্যবসা-সহ পশ্চিমবঙ্গে ক্রমবর্ধমান মার্কিন বিনিয়োগ, ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক, আঞ্চলিক ঘটনাবলি এবং গণসংযোগ বাড়ানোর মতো বিভিন্ন বিষয় ছুঁয়ে গিয়েছে এই আলোচনা। আমাদের সহযোগিতা আরও গভীর ভাবে বাড়িয়ে তোলার জন্য ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে একযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন বিদেশ সচিব। পূর্ব, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে তোলার জন্য নতুন সিল্ক রোড কৌশলে কলকাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন বিদেশ সচিব।
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের এই উল্টো বয়ানে নড়েচড়ে বসে মহাকরণ। শুরু হয়ে যায় প্রশাসনিক তত্‍‍পরতা। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সরাসরি কলকাতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল ডিন থম্পসনকে লেখেন, "পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে আমি বলতে চাই যে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় মার্কিন বিদেশসচিব খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের প্রসঙ্গ তোলেননি। এবিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। তাই আপনাদের প্রেস বিবৃতি থেকে খুচরো ব্যবসায়ে বিনিয়োগের বিষয়টি বাদ দেওয়ার জন্য আমি আপনার কাছে দৃঢ় ও স্পষ্টভাবে দাবি জানাচ্ছি।"
ফলে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিশেষ করে মার্কিন বিনিয়োগ নিয়ে দু'ধরনের পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে এখন ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক স্তরে। প্রশ্ন উঠছে দুই প্রশাসনিক স্তরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই।

.