শুভঙ্কর মিত্র


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শেষবেলায় কি মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ম্যাচ বের করে নিয়ে গেলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী? লোকসভা ভোটের আগে অন্তর্বর্তী বাজেট কার্যত পূর্ণাঙ্গ বাজেটের রূপ পেল। কৃষকদরদী বিরোধীদের বাউন্সার মাঠের বাইরে পাঠালেন মোদী। শুধু তাই নয়, মধ্যবিত্তদের যা উপহার দিলেন, তাতে প্রশংসা না করে উপায় নেই। কিন্তু ভোটের আগে তো দরাজ গলায় বাহবা দেওয়াও চলে না। ভোটের বাজেট বা ঘুষ বলে কটাক্ষ করলেন কংগ্রেস নেতারা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে কৃষি মাফও কি ঘুষ নয়? 


ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতান ধোনি। এদিন নরেন্দ্র মোদীও একটা ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। কিন্তু এমন জনমোহিনী ঘোষণার অর্থ কোথা থেকে আসবে, সে প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠে গিয়েছে। প্রশ্ন এও, লোকসভা ভোটের আগে ভোট অন অ্যাকাউন্টে আস্ত বাজেট পেশও কতটা নীতিসম্মত?                


ছোট কৃষকদের বছরে ৬০০০ টাকা নগদ


প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। এই প্রকল্পে প্রতিবছর ৬০০০ টাকা পাবেন ছোট ও প্রান্তিক কৃষকরা। ২ হেক্টরের কম জমি রয়েছে এমন কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তিনটি কিস্তিতে টাকা পড়বে। ভোটের আগেই পড়ে যাবে প্রথম কিস্তি।


শ্রমিকদের মেগা পেনশন প্রকল্প


প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মানধন যোজনায় ৬০ বছরের পর মাসে ৩,০০০ টাকা পেনশন পাবেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা। প্রতি মাসে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করবেন শ্রমিকরা। সরকারও দেবে ১০০ টাকা। ২৯ বছরে প্রকল্পে সামিল হলেই এই টাকা লাগবে। কিন্তু ১৮ বছরে শুরু করলে মাসে জমা দিতে হবে মাত্র ৫৫ টাকা। 


মধ্যবিত্তদের ছাড় 


৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর ছাড় দিয়েছে মোদী সরকার। যদিও কর কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন হয়নি। অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের দাবি, বিভিন্ন ছাড়ের পর সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা আয় পর্যন্ত কোনও কর দিতে লাগবে না। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৪০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। 


গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোর


কৃষকদের সঙ্গে পশুপালন, গোপালন ও মত্স্যজীবীদের দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে বাজেটে। রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশনে বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি কামধেনু আয়োগের ঘোষণা করেছেন পীযূষ গোয়েল। এর পাশাপাশি ১ লক্ষ ডিজিটাল গ্রাম তৈরির পরিকল্পনাও করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার সুবিধাও সর্বাধিক পেয়েছেন গ্রামের মহিলারা। এই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত ৬ কোটি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার বন্টন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পীযূষ গোয়েল। আরও ২ কোটি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার পৌঁছে যাবে মহিলাদের কাছে। 


প্রতিরক্ষা


প্রথমবার প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট তিন লক্ষ কোটি টাকা পার করেছে। এক পদ এক পেনশন প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। 


আয়ুষ্মান যোজনা


মোদী সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত। ২০১৯-২০ অর্থ বর্ষে  স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ করা হয়েছে ৬১,৩৯৮ টাকা। তার মধ্যে ৬৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে। স্বাস্থ্য খাতে এখনও পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ অর্থ বন্টন। ৫০ কোটি মানুষের কাছে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছনোর কথা ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদী।    


আরও পড়ুন- অন্তর্বর্তী বাজেটের বড় ঘোষণাগুলি দেখে নিন ১৫টি পয়েন্টে


লোকসভা ভোটের আগে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও গরিবদের মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। আর সে জন্য খয়রাতি করতেও পিছপা হননি তিনি। হিন্দুত্বের পথে হেঁটে গোরক্ষাও চলে এসেছে বাজেটে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, খয়রাতির টাকা আসবে কোথা থেকে? সত্যিই কি কৃষকরা দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবেন? আফশোস, স্বাধীনতার পর থেকে যথার্থ কৃষি নীতির দিশা পেলেন না রাজনীতিবিদরা। ভোটের লক্ষ্যে সেই 'মনমোহিনী' পথেই হাঁটলেন গুজরাটের 'বিকাশপুরুষ' নরেন্দ্রভাই। একটা সময়ে একশো দিনের কাজ হোক বা খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ইউপিএ জমানায় মনমোহন সিংয়ের খয়রাতি প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তত্কালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। অতঃকিম, এই বাজেট মোদীর 'অচ্ছে দিন'-এর প্রতিশ্রুতি রক্ষার মরিয়া চেষ্টা।