নাগাল্যান্ডে রাস্তা তৈরি নিয়ে বড়সড় দুর্নীতি প্রকাশ্যে এল
নাগাল্যান্ডে রাস্তা তৈরি নিয়ে বড়সড় দুর্নীতি প্রকাশ্যে এল। রাজ্যের চার জেলায় ৩২৯ কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আর সেই দুর্নীতিতেই জড়িত বলে উঠে এসেছে সত্যম কেলেঙ্কারিতে সাজাপ্রাপ্ত রামলিঙ্গম রাজুর নাম। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারও কাঠগড়ায়।
ওয়েব ডেস্ক: নাগাল্যান্ডে রাস্তা তৈরি নিয়ে বড়সড় দুর্নীতি প্রকাশ্যে এল। রাজ্যের চার জেলায় ৩২৯ কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আর সেই দুর্নীতিতেই জড়িত বলে উঠে এসেছে সত্যম কেলেঙ্কারিতে সাজাপ্রাপ্ত রামলিঙ্গম রাজুর নাম। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারও কাঠগড়ায়।
নাগাল্যান্ড রোডস্ স্ক্যাম। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি। আমরা এই দুর্নীতির প্রতিটি ছবি কে তুলে ধরছি। কীভাবে আমার আপনার টাকা লুঠ করা হয়েছে।
২০১০। মেটাস ইনফা ও গ্রায়ত্রী প্রজেক্ট, নাগাল্যান্ড পিডব্লুডি থেকে ৩২৯ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির ঠিকা পায়। এই জয়েন্ট ভেন্চারে মেটাস ইনফা মানে আই এল এন এফ এস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্টার্কসন ও গায়ত্রী প্রজেক্টের অনুপাত ৬২:৩৮।
নাগাল্যান্ডের চার জেলার জন্য ৩২৯ কিলোমিটার রাস্তা। লংলিঙ থেকে চাঁঙটোঙিয়া, মনটেমলু থেকে মেরেংকং, ফেক থেকে ফুটজিরো ও জুনহিবটো থেকে চাকাবেনা সড়ক কে একত্রে দেখানো হয়।
অথচ যে চারটি অঞ্চলের রাস্তা বানানোর জন্য প্রজেক্ট হয়েছিল, ঠিকা দেওয়া হয়েছিল, ওই চারটি অঞ্চল ভিন্ন ভিন্ন জেলায় । আর একে অপরের সঙ্গে যুক্তও নয়।
মেটাস ইনফা এবং গায়ত্রী প্রোজেক্টের জয়েন্ট ভেঞ্চার কেন্দ্র সরকারের মঞ্জুরি পায় ২০১০এর নয়ই ডিসেম্বর। এই প্রজেক্টের সব থেকে কমটাকা দর হেকেছিল মেটাস ইনফা এবং গায়ত্রী প্রোজেক্টের জয়েন্ট ভেঞ্চার, এক হাজার দুশ ছিয়ানব্বই কোটি টাকা।
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১, মেটাস ইনফা ও গ্রায়ত্রী প্রজেক্টকে নাগাল্যান্স সরকার কাজের কন্ট্রাক্ট দেয়।
শর্ত ছিল ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। প্রজেক্ট পাওয়ার ন মাস পর মেটাস ইনফ্রার নাম বদলে আই এল অ্যান্ড এফ এস ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস হয়ে যায়।
জেনে রাখা ভাল মেটাস ইনফ্রার অরিজিনাল প্রমোটার রামলিঙ্গম রাজু। যাকে সত্যম দুর্নীতি মামলায় কিছুদিন আগেই সাত বছরের সাজা হয়েছে।
এবার শুরু করা যাক দুর্নীতির খতিয়ান।
প্রজেক্ট শুরুর বছর ঘোরার আগেই আই এল অ্যান্ড এফ এস প্রজেক্টের কস্ট রিভাইস করে। কস্ট আড়াই গুন বাড়ানো হয়।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রকের এক আধিকারিকে চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে। প্রজেক্টের কাজ সম্পূর্ন করার কথা ছিল এক হাজার দুশ ছিয়ানব্বই কোটি টাকায়। এটা বাড়িয়ে দু হাজার নশ আটাত্তর কোটি টাকা করা হয়।
ডিপিআর অরিজিনাল কস্ট অনুযায়ী প্রথমে এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরির খরচ ধরা হয়েছিল তিন কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। কিন্তু রিভাইস কস্ট অনুযায়ী কিমি প্রতি খরচ দাড়ায় আট কোটি তিরিশ লাখ টাকা।
এখানেই শেষ নয়। প্রথমে তিনশ ঊনত্রিশ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কথা থাকলেও পরে তা কমিয়ে তিনশ তেরো কিলোমিটার করা হয়।
ষোল কিলোমিটার রাস্তা কম করে দেওয়া হয়। ষোল কিলোমিটার রাস্তা কমার অর্থ খরচ আটান্ন কোটি টাকা কমে যাওয়া। কিন্তু তাজ্জবের কথা খরচ কমার বদল তা বেড়ে যায় আড়াইগুন।
আমরা যদি সরকারি তথ্যের বাইরে প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলি---সেখানে উঠে আসছে আরও গরমিল। তিনশ উনত্রিশ কিলোমিটার সড়ক এক হাজার দুশ ছিয়ানব্বই টাকায় বানানোর কথা ছিল। অর্থাত্ এক কিলোমিটার বানাতে খরচ তিন কোটি চুরানব্বই লাখ হওয়া উচিত।
কিন্তু রিভাইস কস্ট অনুযায়ী আই এল অ্যান্ড এফ এস এক কিলোমিটারের জন্য খরচ দেখিয়েছে নয় কোটি একান্ন লাখ টাকা।
এই প্রজেক্টের ডিটেলস্ রিপোর্ট তৈরি করেছিল নাগল্যান্ড সরকার। প্রস্তাব যায় কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবহন মন্ত্রকের কাছে। কারণ হাইওয়ে তৈরির খরচ দেয় কেন্দ্র সরকারই। আর রাজ্য সরকার ওয়ার্ক কন্ট্রাক্ট দেয়।
আর এইজন্যই রিভাইস কস্ট যখন আড়াই গুন বেশি করা হয় টনক নড়ে মন্ত্রকের আধিকারিকদের। অর্থাত্ আই এল অ্যান্ড এফ এস সরকারের কাছ থেকে এক হাজার ছশ বিরাশি কোটি টাকা বেশি নেওয়ার ছক করে। এই পরিকল্পনা যখন তখন রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩২৯ কোটি টাকা। কিন্তু পরে রাস্তার দৈর্ঘ আরও কমে। রাস্তার দৈর্ঘ হয় ৩১৩ কিলোমিটার।