নিজস্ব প্রতিবেদন: ২০২০ সালের ৫ অগস্ট। দেশের ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে এই দিনটি। প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর আগে যে লড়াই শুরু হয়েছিল তার সমাপ্তি হল এদিন। আর কার হাত ধরে হলো?  এক কথায় উত্তর, নরেন্দ্র মোদী। আগামী দিনে দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে এই নামটি স্বর্ণাক্ষরে জ্বলজ্বল করবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রামমন্দির তৈরির পিছনের ইতিহাস আবছা হয়ে যাবে। দীর্ঘ লড়াইয়ের সব ঘটনা মুছে গিয়ে একটা সময়ে একজনই এই সৃষ্টির জন্য জগত বিখ্যাত হয়ে থাকবেন, তিনি নরেন্দ্র মোদী। যে কোনও সৃষ্টির নেপথ্য কারিগর যেমন আড়লেই থেকে যায়। তার ব্যতিক্রম হলো না রামমন্দির স্থাপনের শিলান্যাসেও। যাঁর হাত ধরে রাম জন্মভূমির আন্দোলন দেশব্যাপী দানা বেঁধেছিল, বলা যায় রাম মন্দির তৈরি প্রধান কান্ডারী, সেই লালকৃষ্ণ আডবাণীকে এই সৃষ্টির পাতা থেকে 'মুছে দিলেন' নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির একাংশ নেতৃত্ব এমনটাই মনে করছেন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রাম মন্দির তৈরিকে 'হাতিয়ার' করে দেশের মসনদের বসার প্রথম স্বাদ পেয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টির। তার নেপথ্যে ছিলেন 'লৌহ পুরুষ' আডবাণী। তাঁর হাত ধরেই বলা যায়, প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির ময়দানে 'শ্রী রাম' স্বক্রিয় ভূমিকা নেন। মোদীর জমানার সূচনা হয় এই রাম মন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েই। নরেন্দ্র মোদী সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। এ কথা বিজেপির অন্দরে সর্বসম্মতভাবেই মেনে নিচ্ছেন সবাই, কিন্তু যিনি প্রথম রশিতে টান দিলেন, যাঁর হাত দিয়েই 'রাম মন্দির' ভোটের ইস্যু হয়ে ওঠে, সেই মানুষটির নাম একবারও মুখে আনলেন না নরেন্দ্র মোদী! প্রশ্ন তুলছেন বিজেপির কেউ কেউ।



রামমন্দির আন্দোলনের যাঁরা লড়াই করেছেন, তাঁদের মোদী শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু, আডবাণী, মুরলি মনোহর জোশী, উমা ভারতীদের নাম আলাদা ভাবে উচ্চারণ করেননি। ব্যক্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে সার্বিক লড়াইকে 'স্বাধীনতা সংগ্রামের' সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। মোদী এ দিন বলেন, "আজকের দিন সংকল্প ও ত্যাগের প্রতীক। অর্পণ আর তর্পণের প্রতীক। যাঁদের ত্যাগ, বলিদান ও সংঘর্ষের জন্য এই স্বপ্নপূরণ হচ্ছে আমি তাঁদের সবাইকে ১৩০ কোটি দেশবাসীর তরফে মাথানত করে প্রণাম জানাচ্ছি।" ব্যস ততটুকুই। মোদী তাঁর বক্তৃতায় কৌশলেই আডবাণীদের নাম উচ্চারণ করলেন না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আডবাণীদের নাম না উচ্চারণ করার পিছনে বেশ কয়েকটি যুক্তি খাঁড়া করছেন তাঁরা।


আরও পড়ুন: বাবরি ধ্বংসের জন্য কংগ্রেসও সমান দায়ী, ভূমিপুজো শেষ হতেই সরব ওয়েসি


অযোধ্যার বিতর্কিত জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তার ফয়সলা শুনিয়েছে। সুপ্রিম নির্দেশ অনুযায়ী, আজ রাম মন্দির নির্মাণের শিলান্য়াস করলেন মোদী। কিন্তু বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলায় আডবাণী, মুরলি মনোহর জোশী এবং উমা ভারতীদের নাম কাঁটা হয়ে ঝুলছে। যেহেতু, এই মামলা বিচারাধীন, তাই বেশ সাবধানেই আডবাণীদের নাম এড়িয়ে গিয়েছেন মোদী। রাম মন্দিরে ভূমিপুজোয় আডবাণীদের আমন্ত্রণ নিয়ে বেশ জলঘোলা তৈরি হয়। মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে ফোন এবং ইমেলে আমন্ত্রণ জানানোর কথা বললেও, সশরীরে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি তাঁদের। এ দিন মোদীর নাম না নেওয়ায় এই যুক্তি আরও জোরালো হয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।



নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক গুরু লালকৃষ্ণ আডবাণী। তাঁর ছত্রছায়াতে মোদীর রাজনৈতিক উত্থান। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে আডবাণীর অবদান অনস্বীকার্য। গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসার পর ততকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন মোদীকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন সেই সময় মোদীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আডবাণীই। এরপর মোদীকে শুধু 'রাজধর্ম পালন' করার কথা বলেই ক্ষান্ত হন বাজপেয়ী। সে সময় আডবাণীর জন্যই মোদীর রাজনৈতিক কেরিয়ার বেঁচে যায় বলে মনে করা হয়। এত কিছুর পরও আডবাণীর প্রতির মোদীর এ হেন আচরণ মেনে নিতে পারছে না বিজেপি একাংশ।



 তৃণমল সাংসদ সৌগত রায়ও অবাক হয়ে বলেন, "রাম মন্দির আন্দোলনে যে আডবাণীর এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, তাঁকেই ব্রাত্য করে দেওয়া হলো। নেই মুরলি মনোহর জোশী।" সিপিএমের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী জানান, যার থাকার কথা ছিল রামমন্দির উদ্বোধনে, সেই অমিত শাহ আপাতত হাসপাতালে। উদ্বোধক মোদিজীরা, আইন মোতাবেক, নিশ্চয়ই কোয়ারান্টাইনে! আর আডবাণীরা ভুলপথে মার্গদর্শনে। আডবাণীর নাম না বলা নিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা সাফাই গাইতে গিয়ে বলে ফেললেন, এটা টেকনিক্যাল ফল্ট।