ভোট শিয়রে, তাই আয়াপ্পাকে ‘চটাতে’ চান না নেতারা
কংগ্রেস-বিজেপির চেয়েও সবরীমালা ইস্যুতে মহা ফাঁপড়ে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল। অন্তত এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মান্য করার পুরো দায়িত্ব পিনরাই বিজয়ন সরকারের
নিজস্ব প্রতিবেদন: শেষমেশ জয় হল বিক্ষোভকারীদের-ই। কম বয়সী একজন মহিলাও আয়প্পার দর্শন পেলেন না। ধর্মীয় ভাবাবেগকে হাতিয়ার করে শীর্ষ আদালতের রায়ে এমন অবমাননা নজিরবিহীন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রশাসন যে তত্পরতা দেখালো, তা-ও কার্যত জলে। সুপ্রিম রায় বলবত্ করার ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ পিনারাই বিজয়নের সরকার। তা হলে লাভবান হলেন কারা?
আরও পড়ুন- মন্দির বিষয়ে কারওর নাক গলানো উচিত নয়, সবরীমালা কাণ্ডে মুখ খুললেন রজনীকান্ত
শিয়রে লোকসভা নির্বাচন। আর তার আগে ৫ রাজ্যে বিধানসভা। ভরা ভোটের মরসুমে সবরীমালার মতো ধর্মীয় ইস্যুকে কাজে লাগাতে যে কোনও দলই তত্পর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শীর্ষ আদালতের রায়ের ‘নৈতিকতা’ থেকে ধর্মীয় ভাবাবেগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কট্টর হিন্দু সংগঠনগুলো যেমন প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছে, তেমনই ধর্মনিরপেক্ষ বলে যে সব দল দাবি করে, তারাও শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ অবস্থান করছে। তাদের দাবি, নারীর সমানাধিকার দিতে গিয়ে মন্দিরের রীতি-নীতি, ঐতিহ্য যেন কখনও ছুড়ে ফেলা না হয়। দক্ষিণী সুপারস্টার তথা রাজনীতিক রজনীকান্ত তো বলেই ফেললেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান করি। কিন্তু মন্দিরের বিষয়ে নাক গলানো উচিত নয়। আরএসএস-সহ অন্যান্য হিন্দু সংগঠনগুলোকে যেমন বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছে, তেমনই এক চুল জায়গা ছাড়েনি বিজেপি-ও। ঘটনার শুরু থেকেই সুপ্রিম রায়ের বিরোধিতা করেছে তারা। এই রায়ের পুর্নবিবেচনা করার আর্জিও জানিয়েছে বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে কেরলে দাঁত ফোটাতে না পারলেও, দক্ষিণের ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগানোর মরিয়া প্রচেষ্টায় কোনও কার্পণ্য নেই বিজেপির।
কংগ্রেসের ক্ষেত্রে সবরীমালা ইস্যু অনেকটাই গলার কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে। সূত্রের খবর রাহুল গান্ধী কেরল কংগ্রেসকে বার্তা দিয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাবাবেগকে সম্মান জানিয়ে এগোতে হবে। তাই, কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি মুল্লাপল্লি রামচন্দ্রনের অবস্থানও দেখা গেল বিজেপির দেখানো পথে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতায় পথে নামে কংগ্রেস নেতারাও। কখনও আবার বিজপিকে টেক্কা দিতে গিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে মুখ পুড়িয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা এমএম হাসান দাবি করেন, ঋতুমতী মহিলারা পবিত্র নন। পরক্ষণেই ঢোক্ গিলে অভিযোগ করেন অপব্যাখ্যা করেছে মিডিয়া। যদিও সবরীমালা নিয়ে কংগ্রেসের দাবি, রায়ের বিরোধিতা করে অধ্যাদেশ জারি করুক কেন্দ্র।
কংগ্রেস-বিজেপির চেয়েও সবরীমালা ইস্যুতে মহা ফাঁপড়ে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল। অন্তত এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মান্য করার পুরো দায়িত্ব পিনরাই বিজয়ন সরকারের। তাই, ‘কুল’ না বাঁচিয়ে ‘মান’ বাঁচাতেই এখন তত্পর তাঁর সরকার। অন্দরে এমন কথাও শোনা গিয়েছে, যতটা সম্ভব ‘সেফ খেলা’র চেষ্টা করবে সিপিআইএম। শীর্ষ আদালতের রায় বলবত্ করার পাশাপাশি, আইন শৃঙ্খলাও যাতে বিঘ্নিত না হয় সে দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা হচ্ছে। তাই মাঝে মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, বিক্ষোভকারীদের সামনে নিষ্ক্রিয়তার ভূমিকা নিয়েছে পিনারাইয়ের পুলিস। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সবরীমালায় মহিলাদের যথাসাধ্য নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- সবরীমালার দরজা খুলতে অস্বীকার পুরোহিতের, আয়াপ্পা দর্শন না করেই ফিরতে বাধ্য হলেন ২ মহিলা
একবার ফিরে যাওয়া যাক গত ২৮ সেপ্টেম্বর অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চের এজলাসে। এ দিন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ জানিয়েছিল, সবরীমালার এই নিয়ম অস্পৃশ্যতার মতো। অনৈতিক, বেআইনি এবং সংবিধান বিরোধী। দমন ও নিপীড়নের সঙ্গেও তুলনা করা হয়। শীর্ষ আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, সবরীমালার এই নিয়মের পাশে কখনও থাকবে না সংবিধান। কিন্তু রাজনৈতিক দল পাশে থাকায় মন্দিরের দরজা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে আপাতত বন্ধ রইল মহিলাদের প্রবেশাধিকারও।